একটি রক্তমাখা বিমার রসিদ। আর সেই রসিদই চিনিয়ে দিল গোটা রাজ্যে আলোড়ন ফেলে দেওয়া জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের খুনিকে। সপরিবারে শিক্ষক খুনে গ্রেফতার করা হল মূল অভিযুক্তকে। ধৃত যুবকের নাম উৎপল বেহরা। পেশায় রাজমিস্ত্রি। সাগরদিঘির সাহাপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে উৎপল। ২৪ হাজার টাকা নিয়ে গোলমালের জেরেই, আক্রোশবশত এই খুন বলে পুলিশকে জনিয়েছে তরুণ। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, স্কুলশিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ নানা রকম অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিমাও করাতেন। ধৃত উৎপল একটি বিমা করিয়েছিলেন তিনি। উৎপল মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রি ইত্যাদির কাজে বাইরে গেলেও, মূলত বেকার। খুনির সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছিল নিহত বন্ধুপ্রকাশ। সোমবার রাতে গ্রেফতারের পর থেকে ধৃত উৎপলকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এর পর প্রশ্নের মুখে ভেঙে পড়ে উৎপল। জেরায় সে তিনজনকে খুন করার কথা স্বীকার করে নিয়েছে।বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন উৎপল বেহরারা মা-ও। যদিও ছেলে নির্দোষ, সে খুন করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। উৎপলের মায়ের বক্তব্য বন্ধুপ্রকাশের থেকে প্রায় ৪৮ হাজার টাকা পেত উৎপল। সেই কারণেই বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে সে। আর সেটাই কাল হয়। উৎপলের মায়ের অভিযোগ, সেই কারণেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর ছেলেকে।
সূত্রের খবর, দুপুর ১২.৬ থেকে ১২.১১র মধ্যে তিনটে খুন করে উৎপল। প্রথমে গিয়ে আঘাত করে নিহত শিক্ষককে পরে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে হত্যা করেছে বলে জেরায় জানিয়েছে উৎপল। উৎপল নবমীর দিন সাগরদিঘিতে বোনের বাড়ি আসে। এর পর সেখান থেকে অস্ত্র কেনে। এর পর ওই শিক্ষককে ফোন করে বিমার রসিদ চায়। দু’জনের মধ্যে কথাকাটিকাটি হয়। নিহত শিক্ষক তাকে গালিগালাজও করেন। এর থেকে তার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। দশমীর দিন দুপুর ১২টা নাগাদ শিক্ষকের বাড়ি আসে উৎপল। শিক্ষক দরজা খুলে দেয়। এর পর আক্রমণ করে শিক্ষককে, তার পর তাঁর স্ত্রী বিউটি ও ছেলে অর্ঘকে একে একে খুন করে অভিযুক্ত। ১২.০৬ থেকে ১২.১১-র মধ্যে তিনটে খুন করে অভিযুক্ত। এর পর অস্ত্র রেখে পালিয়ে যায় উৎপল। খুনের শেষে পোশাক বদল করে নেয়। আজ উৎপলকে আদালতে পেশ করা হবে।