দীর্ঘ কয়েক দশক বিদেশে কলকাতার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। বর্তমানে মার্কিন মুলুকের স্থায়ী নাগরিক। কিন্তু তাতে কী! এ বছর অর্থনীতিতে যিনি যৌথ ভাবে নোবেল পেলেন, সেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগটা এখনও আগেরমতোই অটুট।
ঘটনাচক্রে এ বারের অর্থনীতির নোবেল যে দু’জনের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন অভিজিৎ, তাঁদের এক জন তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো। অভিজিতের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলছিলেন, ডাফলো-ও কলকাতায় এসে দীর্ঘ দিন ছিলেন। এখানে কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যখন ওদের বিয়ে হয়নি, তখনও বেশ কয়েক বার আমাদের বাড়িতে থেকে গিয়েছে ডাফলো।’’
সোমবার নোবেল কমিটি অভিজিৎদের গবেষণা সম্পর্কে দু’এক কথা বলতে গিয়ে জানায়, মাত্র দু’দশকে ওঁদের গবেষণা পদ্ধতি উন্নয়ন অর্থনীতির রূপরেখা বদলে দিয়েছে। আর অভিজিৎ এই ব্যাপারে জানাচ্ছেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকের শেষে আমার স্ত্রী এস্থার ডাফলো আমার সঙ্গে কাজে যোগ দেয়। গত পঁচিশ বছরে বহু দেশ ঘুরে আমরা গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেছি। ঘানা, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত— সর্বত্র ঘুরে ঘুরে কাজ করেছি।’’
১৯৮১তে প্রেসিডেন্সি থেকে অর্থনীতির স্নাতক হন অভিজিৎ। সেবছরই স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান দিল্লিতে— জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। এর পর হার্ভার্ড। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইনফরমেশন ইকনমিক্স’। এরপর আর পিছনে ঘুরে দেখতে হয়নি অভিজিৎকে। নিজের পছন্দের বিষয় নিয়েই গবেষণা করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন মূলক কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন মহাসচিবের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। গবেষণাপত্র, বিভিন্ন জার্নালে লেখার পাশাপাশি অভিজিৎ লিখে গিয়েছেন একের পর এক বই। তার মধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে বিনায়কের লেখা চারটি বই বিশ্বজুড়ে বিপুল ভাবে সমাদৃত। তাঁর ‘পুওর ইকনমিক্স’ বইটি তো গোল্ডম্যান স্যাক্স বিজনেস বুক সম্মানে ভূষিতও হয়। একই সঙ্গে দু’টি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন অভিজিৎ।
দেশ যখন ‘নোটবন্দি’ বা ‘জিএসটি’-র মতো বিষয়ে তোলপাড় হয়েছে, অভিজিৎ তখন সে সবের কঠোর সমালোচনা করেছেন। হ্যাঁ, কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই। কারণ, দেশের অর্থনীতি থেকে তাঁর নজর কখনও সরেনি। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে-তে কর্মরত অভিজিৎ আসলে আম আদমির সমস্যার কথাই ভেবে গিয়েছেন। ভেবে গিয়েছেন ভারত তথা গোটা বিশ্বের দারিদ্রের কারণ!