প্রবাসে পুজোঃ নয়ডা সিলিকন সিটি সেক্টর ৭৬
কেউ উত্তর কলকাতার রক, চেনা গলি ছেড়েছেন দশ বছর হলো, কেউ হালে নৌকা ভিড়িয়েছেন প্রবাসী ঘাটে। কেউ আবার এ রাজ্য ও রাজ্য শেষে নয়ডার এক চিলতে শরতকালকেই ঘর বলে ডাকে৷
নয়ডা সেক্টর ৭৬ এর অম্রপালি সিলিকন সিটির ঐক্যতান পুজো এই নানা বাঙালির নানা স্মৃতি মেদুরতার পুজো। এখানে সবকিছু রীতিমতো হয়, সব আয়োজন করা হয় প্রাণ ঢেলে সাতটা দিন ওই ফেলে আসা ছেড়া ঘুড়ি, রঙিন বল, ক্যাপ বন্দুক, নবমীর বকুলবাগানে রাত জাগা বা গোল্লাছুটের মাঠে প্রথম সিগারেটের স্মৃতিগুলো জিইয়ে রাখতে। দারুণ একটা শাড়ির পাট ভাঙতে, ডিজাইন করা পাঞ্জাবীতে মাঞ্জা দিতে।
চতুর্থ বছরে পা দিলো এই পুজো। প্রবাসের পুজো। ঠাকুর দালানে যে মায়ের প্রতিমার দেখা মেলে সেরকম ছোট্ট অথচ খুব আন্তরিক এক পুজো। বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি সিলিকন সিটির মধ্যেই হয় এই পুজোটা। বাঙালিদের সাথে সাথে বহু অবাঙালির উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই ঐক্যতান। বিজ্ঞাপন সেরকম ভাবে এখনো নেই কিন্তু তাতে নো পরোয়া। এই ব্লকের দাদা ভোগ স্পনসর করছে তো এই তলার মাসিমা ফুল। পুজোর আগের সন্ধে মানে গোটা এলাকা চষে ফেলা চাঁদা তোলার জন্য। চক্কোবত্তিদার পেটিএম হোক বা সরকার দার হিসেবের খাতা, ঐক্যের শারদ ছবি কিন্তু স্পষ্ট।
রোজ বিকেলে এলাহি আয়োজন। ভোগ থেকে বিসর্জন গোটা কমপ্লেক্সটাকে একডালিয়া থেকে কুমারটুলি বানিয়ে দেওয়ার অদম্য প্রয়াস। বাঙালি আছে, পুজো আছে, পাড়া আছে আর গান বাজনা হবে না তা কী হয়? রবি ঠাকুরের পাপ লাগবে যে। তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে ও মেতে উঠেছে সকলে। আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে আজ করছে প্রমীলা বাহিনী। ওদিকে দাদারা ব্যস্ত শেষ মুহুর্তের খুঁটিনাটি তে নজর দিতে। গানের গুঁতো সামলে নেওয়ার দায়িত্ব দিল্লির ব্যান্ড নিয়েছে। যে ভাবে ডান্ডিয়া নিয়ে উৎসাহিত ছিল গোটা কমপ্লেক্স।
বাঙালির আরেক নস্টালজিয়া ম্যাজিক। মহাজাতি সদনে ছেলেবেলার সেই পিসি সরকারের গিলিগিলি ছু! জাদুবলে সেই পরিবেশ ও তৈরি করেছে এখানকার অধিবাসীরা৷ ম্যাজিক শোতে বাচ্চাদের উত্তেজনা প্রচুর।
আয়োজকদের অন্যতম সন্দীপ সরকার জানালেন যে এবার তারা আরো ভালোভাবে পুজো আয়োজন করেছেন এবং পূজা পরিক্রমায় এসে বিচারক মন্ডলির বাহবা কুড়িয়েছে তাদের পুজো৷ সন্দীপ বাবুই বললেন যে পরের বছর আরো ভালো করে আরো বড় করে এ পুজপুজো করার ইচ্ছে রয়েছে সব্বার৷
সব্বার মানে এই বাঙালিদের যারা অনেকের থেকে অনেক বেশি করে বাঙালিয়ানা বাঁচিয়ে রেখেছে প্রবাসে। যারা ঘর বেঁধেছে নয়ডায় কিন্তু মন পরে থাকে ছেলেবেলার পাড়ার পুজোয়, মায়ের নারু, বাবার কিনে দেওয়া নতুন জামায়। কে না চায় এই সাতদিন ছেলেবেলার ধুনুচির গন্ধ মেখে শিউলি সাজতে। তাই তো প্রবাসে ও মঙ্গলধ্বনি বাজিয়ে চলা, শারদীয় উৎসব এ।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত