দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগেই আসামে প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যার ফলে ‘নিজভূমে পরবাসী’ হয়েছেন ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। তবে শুধু আসামই নয় বাংলা-সহ সব রাজ্যেই এনআরসি হবে — সম্প্রতি এই হুঙ্কারই শোনা যাচ্ছে দেশের শাসক দল বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের মুখে। মোদী সরকারের শীর্ষকর্তারাও কোনও রাখঢাক না করেই বলছেন, এনআরসি হবেই। কিন্তু সে লাইনের ঠিক উল্টো দিকে হাঁটলেন বঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি চন্দ্রকুমার বসু। ভারতকে যাঁরা নিজেদের ঘর বলে মেনে নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে ভারতীয়— এই নীতির ওপরে ভিত্তি করেই এনআরসি করতে হবে, টুইটারে এমনই দাবি জানিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাত ১১টা ২৫ নাগাদ টুইট করেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি চন্দ্রকুমার বসু। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার সে টুইটে যা লেখেন, তার সারকথা হল— এ দেশে যদি এনআরসি তৈরি করতে হয়, তা হলে যাঁরা ভারতকে নিজেদের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। চন্দ্র বসুর এই তত্ত্ব কিন্তু বিজেপি বা মোদী সরকারের এনআরসি তত্ত্বের সঙ্গে একেবারেই মিলছে না। এ নিয়ে দলের বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতার বক্তব্য, ‘প্রতিবেশী দেশগুলি ছেড়ে যাঁরা ভারতে ঢুকেছেন বা ঢুকছেন, তাঁরাও ভারতকে নিজেদের দেশ হিসেবেই বেছে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। তা হলে কি তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দিতে হবে?’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে এসেছে মোদী সরকার। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসা লোকজনের মধ্যে যাঁরা ওই সব দেশে ধর্মীয় ভাবে সংখ্যালঘু ছিলেন, তাঁদেরকে ভারত শরণার্থী হিসেবে ধরবে এবং নাগরিকত্ব দিয়ে দেবে। কিন্তু ওই সব দেশে যাঁরা সংখ্যালঘু নন অথচ এ দেশে ঢুকেছেন, তাঁদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে না। তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হবে। বিজেপির তথা সরকারের এই নীতির সঙ্গে চন্দ্র বসুর তত্ত্বের ফারাক রয়েছে। আর সেই তত্ত্ব তিনি সামনে এনেছেন এমন একটা সময়ে, যখন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত পাঁচ দিনের সফরে রাজ্যে এসেছেন। শেষ দু’দিনে ভাগবত রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে বসেন। কিন্তু তার মাঝেই চন্দ্র বসুর এই বেসুরো টুইট অস্বস্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের।