রবিবারের সকাল। রেশন দোকানের সামনে উপভোক্তাদের ভিড়। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে লম্বা চুলের এক ব্যক্তি। হাতে বাজারের থলে। ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যে তিনিও রেশন তুলতে এসেছেন। দোকান খোলা থাকলেও নেই কোন কর্মী। কিছুক্ষণ পরে ডিলার এসে রেশন সামগ্রী দেওয়া শুরু করেন। ওই ব্যক্তি নিচ্ছেলেন কেরোসিন। কিন্তু তা কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাতেই ডিলারের সঙ্গ শুরু হয় কথা কাটাকাটি। ডিলার ওই ব্যক্তিকে বিডিও’র কাছে অভিযোগ জানাতে বলেন। এর পরেই মাথা থেকে নিজের ‘চুল’ একটানে খুলে ফেলে ক্রেতা পরিচয় দেন নিজের। জানান, তিনি জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ। ছদ্মবেশে পরিদর্শনে এসেছেন দোকানে।
ওই এমআর ডিলারের এক ভাই আবার কেরোসিনের এজেন্ট। এদিন কেরোসিন দেওয়ার সময় দেখা যায়, তেলমাপক যন্ত্রের নীচের অংশ তুবড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে ছদ্মবেশী সিরাজ খান প্রতিবাদ করেন। তখন এমআর ডিলার কড়কে দেওয়ার সুরে বলেন, আপনি বলার কে? কোনও অভিযোগ থাকলে বিডিও অফিসে যান। এরপর ওজনেও কারচুপির ছবি ধরা পড়ে। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে কর্মাধ্যক্ষ পরচুলা খুলে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। উপস্থিত উপভোক্তার তখন এমআর ডিলারের বিরুদ্ধে তাঁরা গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে রেহাই পান ওই এমআর ডিলার।
সিরাজ বলেন, ‘‘ছদ্মবেশে থাকায় কেউ আমাকে চিনতে পারেনি। ওই রেশন ডিলারকে এবারের মত সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু পরচুলাটা পেলেন কোথা থেকে? সিরাজ জানান, একটি নাট্য সংস্থার কাছ থেকে সেটি নিয়েছিলেন তিনি। এ দিনের অভিযানের পরে অভিযুক্ত ডিলার রামপদ মাজি বলেন, ‘‘এমন ভুল শুধরে নেওয়া হবে।’’
বিশ্বনাথ দাস নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘এখানে ওজনে কম জিনিস দেওয়া হত। রেশন দোকানের কর্মীরা দোকান খুলে রেখে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে যেতেন। খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ যে এসেছেন নিজে, তা আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, মাথার চুল দেখে সিরাজকে তাঁদের প্রথমে সন্দেহই হয়েছিল। তিনি যে এলাকার নন, তা-ও তাঁরা বুঝেছিলেন। কিন্তু কেন ওই ব্যক্তি রেশন দোকানে ঘুরঘুর করছেন, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। বিশ্বনাথ জানান, সিরাজের কাছে রেশন কার্ড ছিল না। তিনি গ্রাহকদের কাছে একাধিক কার্ড থাকলে তা চাইছিলেন। জানাচ্ছিলেন, এতে তাঁদের পরে ভালই হবে। শেষে এক গ্রাহক সিরাজকে কার্ড দিয়েছিলেন। উমা শাসমল নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘ওঁকে প্রথমে দেখে অচেনা লেগেছিল। ছদ্মবেশ খোলার পরে জানলাম, উনি খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ।’’