মুর্শিদাবাদের ডোমকলের হসপিটাল মোড়ের কাছে মনোবিদ সেলিম মালিকের চেম্বারে সকাল-সন্ধে শোনা যাচ্ছে এনআরসি’র হাহাকার। আসামের পরে বাকি দেশে এনআরসি হবেই, হুঙ্কার দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা। সেই ভয়ের ছায়া পড়েছে সীমান্তের গাঁ-গঞ্জে। নিঃশব্দে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বলিহারপুরের সাজিমা বিবি, টেঁয়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের চাপা কান্না আর গভীর দীর্ঘশ্বাস। ভয়ের নাম এনআরসি!
ডাক্তারের চেম্বারে ডাক্তারবাবুর হাত ধরে মধ্য চল্লিশ মানুষটা হাউ হাউ করে কাঁদছেন— ‘‘ও ডাক্তার বাঁচান গো আমাদের, গত বন্যায় দলিল-টলিল সব ভেসে গিয়েছে, ভোটার-আধার, দু’টো কার্ডেই নামে ভুল… এখন দেশ ছাড়তে হলে কোথায় যাব বলেন দেখি!’’ একদা বহরমপুর মেন্টাল হাসপাতালের ওই মনোবিদের চেম্বারে এখন এনআরসি-আতঙ্কে থাকা মানুষ। গ্রামবাসীদের কেউ কাঁদছেন, কেউ বা ডাক্তারের চেম্বারে ছটফট করতে করতে বলছেন, ‘‘না গো, পাইরব নাই, ভিটে-মাটি ছাইর্যা চলি যাওয়া যায়!’’
ভোটার তালিকায় নাম সংশোধন করতে না পেরে ডোমকলের শিবনগর গ্রামের যুবক মিলন মণ্ডলের সুইসাইড নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। সেলিম মালিক বলছেন, ‘‘এ এক ধরনের অ্যাংজ়াইটি ডিসর্ডার। তবে তার ছোঁয়াচ বড় সাঙ্ঘাতিক জানেন। ভয় ছড়ালে গ্রামের পর গ্রাম তাতে আক্রান্ত হতে পারে। সেই তীব্র ভয় সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে অনেককে আত্মহননের দিকেও ঠেলে দিতে পারে”। তবুও নিজের জন্মভিটে ছেড়ে যাওয়ার ভয় কি সহজে কাটে!