গত শনিবার হিন্দী দিবসের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হিন্দী ভাষাকে দেশের সাধারণ ভাষা করার পক্ষে জোর সওয়াল করার পর থেকেই বিরোধিতায় ঝড় উঠেছে দেশ জুড়ে। ইতিমধ্যেই বিরোধীদের পাশাপাশি শাহর ‘এক ভাষা, এক দেশ’ তত্ত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরাও। তবে এর মধ্যেই মুখ খুলে ফের বোমা ফাটালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। হিন্দি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য না মানলেই তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী। এমনটাই মনে করেন ‘অমিত ভক্ত’ বিপ্লব। আগরতলায় এক অনুষ্ঠানে হিন্দীর পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে এভাবেই সুর চড়ান ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বিরোধীদের দিকে ফের দেশদ্রোহিতার আঙুল তোলেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন ‘বৈপ্লবিক’ বাণী শুনে বেজায় চটেছেন ত্রিপুরাবাসী।
প্রসঙ্গত, গোটা দেশজুড়েই এখন শাহের এক দেশ এক ভাষা তত্ত্ব নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠছে। বিদগ্ধজনেরাও প্রতিবাদে শামিল। এই অবস্থায় দলের সর্বভারতীয় সভাপতির পক্ষ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিদ্বজ্জনদেরই রাষ্ট্রদ্রোহী বলে কটাক্ষ করলেন। অথচ, একদিন ত্রিপুরার মাটিতেই উপজাতিদের ভাষা ককবরকের স্বীকৃতির দাবিতে ‘শহীদ’ হয়েছিলেন ধনঞ্জয় ত্রিপুরা। বাংলা ও ককবরক ত্রিপুরার প্রধান ভাষা। রাজ আমল থেকেই বাংলা এখানে সমাদৃত। ককবরকও উপজাতি মহল্লায় স্বীকৃত ভাষা। এই অবস্থায় হিন্দী চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে বিপ্লবের বক্তব্য নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ত্রিপুরার বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, ত্রিপুরায় ‘বহিরাগত’ বিপ্লব ইতিহাসের অ–আ–ক–খ–ই জানেন না। তাই ‘অর্বাচীন’–এর মতো মন্তব্য করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সরকারি নথি অনুযায়ী বিপ্লব দেবের জন্ম ত্রিপুরাতেই। তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ আগাগোড়াই তিনি ছিলেন দিল্লীতে। সেখান থেকে ফিরে ত্রিপুরার রাজনীতিতে যোগ দিলেও তাঁর ভাষণে হিন্দীর দাপটই থাকে বেশি। তবে অনেকেই মনে করেন, ভুলে ভরা হিন্দীর ব্যবহারে নিজেকে দিল্লীর নেতা বলে জাহির করতে চান বিপ্লব। এই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষও হজম করতে হয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোপাল রায় তাঁকে ‘প্যারাশুট মুখ্যমন্ত্রী’ বলেও কটাক্ষ করেন। তাঁর মতে, দিল্লী থেকে উড়ে এসেছেন তো, তাই এরাজ্যের ভাষা-সংস্কৃতি কিছুই বোঝেন না। যদিও, এই প্রথম নয়। বেফাঁস মন্তব্য করায় বরাবরই বিপ্লবের জুড়ি মেলা ভার। কখনও ‘মহাভারতের সময়ে স্যাটেলাইট অস্তিত্ব’, আবার কখনও বা ‘শিল্প আনার থেকে গো-পালন ভালো’- তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যগুলি একাধিকবার জায়গা করে নিয়েছে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। এবারও তার অন্যথা হয়নি।