গত শনিবার হিন্দী দিবসের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হিন্দী ভাষাকে দেশের সাধারণ ভাষা করার প্রস্তাব অর্থাৎ ‘এক ভাষা, এক দেশ’ তত্ত্বের বিরোধিতায় ঝড় উঠছে দেশের বিভিন্ন মহলে।
শাহর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে বাংলা বাদেও সরব হয়েছেন বিশেষত দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিরোধী নেতা-নেত্রী ও বিশিষ্ট জনেরা। এবার তাতেই যোগ হল এক নতুন কণ্ঠস্বর। সোমবার শাহের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন প্রবীণ অভিনেতা-রাজনীতিবিদ কমল হাসান। মক্কল নিধি মইয়ম দলের মুখ্য কমল জানান, ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় এহেন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কেন্দ্রের।
প্রসঙ্গত, দু’মিনিটের ভিডিওয় কেন্দ্রীয় সরকারকে স্পষ্টতই সতর্ক করেছেন কমল হাসান। বলেছেন, ‘ভাষা ও সংস্কৃতির অপরিবর্তিত রেখেই ভারতের গঠন হয়েছিল। গণতন্ত্রের শপথের সময় আমরা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যকে নিশানা করে কমল হাসান বলেন, ‘কোনও শাহ, সুলতান বা সম্রাটের ওই প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ণ করায় সচেষ্ট হওয়া উচিত নয়। আমরা সব ভাষাকেই সম্মান করি, তবে আমাদের মাতৃভাষা তামিলই থাকবে।’ হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে, তা যে মেনে নেওয়া হবে না- তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন এমএনএম পার্টির নেতা।
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/562072677666637/
তিনি মোদী সরকারকে ভাষা-যুদ্ধের হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, ‘ভাষার জন্য আন্দোলনের সামনে জালিকাট্টুর প্রতিবাদও কম মনে হবে। জালিকাট্টু কেবল একটা প্রতিবাদ ছিল। ভাষার জন্য আমাদের যুদ্ধ তার চেয়ে অনেক অনেক বড় হবে। ভারত বা তামিলনাডুর এমন যুদ্ধের কোনও প্রয়োজন নেই। আমরা সব ভাষাকেই সম্মান করি। কিন্তু মাতৃভাষা সব সময়ই তামিল থাকবে।’ শুধু তাই নয়। জাতীয় সঙ্গীতের প্রসঙ্গ তুলে কমল বলেন, ‘দেশের অধিকাংশই গর্বের সঙ্গে বাংলায় জাতীয় সঙ্গীত গায় এবং ভবিষ্যতেও গাইবে। তার কারণ, যে কবি এটি লিখেছেন তিনি সমস্ত ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান করেই লিখেছেন। তবেই সেটা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হয়েছে।’
এর আগে জুলাই মাসে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায় দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে হিন্দী ভাষা শিক্ষার প্রস্তাব দেওয়ায় একই ভাবে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন কমল। তবে শাহর হিন্দীকে সারা দেশের ভাষা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘিরে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। একে কেন্দ্রের হিন্দী আগ্রাসন হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। প্রথমেই এর বিরোধীতায় টুইট করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন শাহের মন্তব্যকে সরাসরি ‘দেশের বৈচিত্র্যের পরম্পরা ধ্বংসের অভিপ্রায়’ এবং ‘ভাষার নামে সঙ্ঘ পরিবারের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র রচনার চিহ্ন’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। ডিএমকে প্রধান এমকে স্টালিন জানিয়েছেন, ‘এটা ইন্ডিয়া, হিন্ডিয়া নয়।’