সেবারও বেজায় টাকার টানটানি। শেষে কাবুলিওলার থেকে ধার করবেন কি না ভাবছেন। খবর পেলেন বিভূতিভূষণ।
তখনও দুইজনের মধ্যে তেমন ভাল পরিচয়ও নেই। তবু বিভূতি নিজেই সেধে বললেন, ‘‘কেন ভাই কাবুলির থেকে ধার করবেন? কত টাকা চাই আপনার?’’
শিবরাম অম্লানবদনে বললেন, ‘‘এই ধরুন টাকা পঞ্চাশেক পেলেই আপাতত চলে যাবে।’’
‘‘এই নিন টাকা, ওসব কাবুলির থেকে নিতে হবে না। ওদের বড্ড চড়া সুদ,’’ বলে বিভূতিভূষণ পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা বার করে দিয়ে দিলেন।
সলজ্জ শিবরাম বললেন, ‘‘আপনার এই ঋণ আমি জীবনে শুধতে পারব না।’’
যথারীতি শুধতে পারেনওনি। মানে কখনও ইচ্ছে থাকলেও উপায় আর উপায় থাকলেও ইচ্ছে হয়নি আর কি! দু’জনে দেখা হলে বিভূতিভূষণ তার প্রাপ্য টাকার কথা তো কখনই তুলতেন না। শিবরাম যদিও বা কখনও বলতেন, ‘‘দাদা আপনার ওই টাকাটা এখনও বাকি…।’’
বিভূতি বলে দিতেন, ‘‘আরে থাক থাক সেসব কথা। পরে দেবেন।’’
‘‘বেশ তাহলে সুদটাই নিন। বলে টাকার বদলে দু’চার পয়সার তেলে ভাজা কিংবা চিনেবাদাম তুলে দিতেন বিভূতিভূষণের হাতে।’’ বিভূতি তাতেই খুশি।
আসলে টাকা পয়সার ব্যাপারে চিরকালই বিভূতিভূষণ ছিলেন বেজায় উদাসীন। খানিকটা শিবরাম গোছের, আবার খানিকটা একেবারেই অন্য ধারার।
টাকা হাতে পাওয়ার আগ্রহ যথেষ্ট, কিন্তু সে-টাকা একবার হাতে এসে গেলে সেগুলো যে খরচও করতে হয় কিংবা সঠিকভাবে জমানো, তার ব্যাপারে কোনই আগ্রহ ছিল না বিভূতিভূষণের। আর এখানেই শিবরামের সঙ্গে তাঁর চূড়ান্ত অমিল।
আধ্যাত্মিকতা, পরলোকচর্চায় খুবই আগ্রহ ছিল বিভূতিভুষণের। ‘দেবযান’ উপন্যাস নিয়েও তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল শিবরামের। পুনর্জন্মে খুব বিশ্বাস করতেন।
শিবরামকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি তো আর বিয়েথা করলে না। তোমার ছেলে মেয়ে নেই। আর সেই জন্যই তোমার পূর্বপুরুষরাও পূনর্জন্ম নিতে পারছেন না। আর তাদের পূনর্জন্ম না হলে তোমারও নতুন জন্ম নেওয়ার সুযোগ নেই। সবাই পর পর লাইনে আছেন কিনা। তাই তুমি বে থা না করে নিজে তো বটেই, তোমার আগের সাতপুরুষও বায়ূভূত হয়ে ঘুরবে। আমি বিয়ে করব এবার। ফিরতি বার্থ রিজার্ভেশন করে রাখা চাই বুঝলে ভায়া।’’
‘‘সে কি দাদা আপনি এই বয়েসে বিয়ে!’’
‘‘কেন সামান্য চল্লিশ বছর তো বয়স আমার।’’
শিব্রাম কিন্তু বিলক্ষণ জানতেন তখন বিভূতিভূষণের বয়স চল্লিশের অনেক বেশি।
বিয়ে করলেন বিভূতিভুষণ। তারপর অনেক দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ নেই শিবরামের। একবার দুর্গাপুজোর সময় শিবরাম গেলেন বিভূতিভুষণের ঘাটশিলার বাড়ি। পুজোর ছুটি ওখানেই কাটাবেন এমন ইচ্ছে।
গিয়ে দেখেন বেশ স্বাস্থ্যবান একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিভূতিভুষণ বাগানে ঘুরছেন। শিবরাম বুঝলেন, শিশুটি বিভূতিরই। জিজ্ঞসা করলেন, ‘‘তা আপনার ঘাড়ে কি সেই ফেরবার টিকিট?’’
‘‘একদম ঠিক ধরেছ। ওর নাম দিয়েছি কাজল। ওর মাধ্যমেই তো আবার আমাকে ফিরতে হবে।’’
বিভূতিভুষণের সেই পারলৌকিক বিশ্বাস যে কতটা তীব্র ছিল, বারেবারে টের পেয়েছেন শিবরাম নিজে। মৃত্যুর কিছু দিন আগে এক শ্মশানে নিজের মৃতদেহকে নাকি নিজের চোখে দেখতে পেয়েছিলেন বিভূতিভুষণ। সে-ঘটনাও জানতেন শিবরাম। আর মৃত্যুর পর? সে এক অদ্ভুত ব্যাপার!
একদিন রিপন কলেজের বেশ কিছু ছেলে এসে শিবরামকে জানালেন, ‘‘আমরা এই বছর বিভূতিভূষণের জন্মদিন পালন করব, আপনাকে সভাপতি হতে হবে।’’
‘‘বেশ হব। কিন্তু অতিথি সৎকারের ব্যবস্থা থাকবে তো? মানে একটু ভাল মন্দ।’’
‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। স্বয়ং বিভূতিবাবুও আসবেন ওইদিন।’’
‘‘মানে? উনি আবার কী করে আসবেন? উনি তো পরপারে।’’ শিবরাম অবাক!
‘‘আজ্ঞে উনি আমাদের ত্রিকোণ চক্রে মাঝেমাঝেই আসেন। আমরা প্ল্যানচেট করে ডেকে আনি তাঁকে। কথাবার্তাও হয়।’’
‘‘বলো কি! তা জীবিত আর কাকে কাকে ডাকছ ওইদিন?’’
ছেলেরা বলল, ‘‘ভেবেছিলাম অনেককেই ডাকব, কিন্তু শেষ প্ল্যানচেটে বিভূতিবাবুই বললেন যাকেই ডাকো, কেউই আসবেন না।’’
‘‘তার মানে পরলোকে গিয়ে উনি তাঁর লেখকবন্ধুদের ভালমতই চিনেছেন। বেশ বেশ।’’
‘‘সেইজন্যই আমরা আপনার কাছে এলাম। আপনি অন্তত যাবেন আশা করি।’’
‘‘হ্যাঁ যাব বইকী। খাবার দাবারের ব্যবস্থা রাখবে বলছ যখন!’’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওইদিন সেখানে গিয়েও যাননি শিবরাম। বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে ফিরে এসেছিলেন। এই বিষয়ে শিবরামের যুক্তি ছিল, বিভূতিবাবু যখন ভেবেই নিয়েছেন তাঁর জন্মদিনে কোনও বন্ধু আসবেন না, তখন তাঁর সেই বিশ্বাসে আঘাত করা ঠিক নয়। আর দ্বিতীয়ত সেই যে পঞ্চাশ টাকা ধার রয়ে গিয়েছিল সেটা এখন যদি তার অনুগত ভক্তদের মধ্যে বলে ফেলেন, সে ভারী লজ্জার ব্যাপার হবে।
তাই বিদেহী বিভূতিবাবুর সঙ্গে দেখা করার চেয়ে স্বদেহে ফিরে আসাটাই ঢের ভাল বলে মনে করলেন শিবরাম!
নিজেকে ভাবতেন তলস্তয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর নায়ক বেজুকভ। নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে এতটাই মুগ্ধ ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাইরে নরম-কোমল মানুষটি কিন্তু ভেতরে ভেতরে বেশ শক্তই ছিলেন। প্রয়োজনে খুব কাছের মানুষদের ব্যাপারেও অনায়াসে উদাসীন হয়ে যেতেন। অনেক দিনের বন্ধু বিভূতিভূষণ সম্পর্কে এমনই ধারণা ছিল নীরদ চন্দ্র চৌধুরী-র।
স্বাধীনতার বছর তিনেক আগের কথা। কলকাতায় মাঝেমধ্যেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা চলছে।
একবার রাস্তায় দাঙ্গার মধ্যে পড়ে বিভূতিভূষণ একটি বালির বস্তার আড়ালে লুকিয়ে পড়লেন। ভয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে বস্তার পিছন থেকে কেবলই বন্ধু নীরদচন্দ্রকে বলছিলেন, ‘‘আমাকে ছেড়ে যেয়ো না, ট্রামে তুলে দিয়ো।’’ কিন্তু যে মুহূর্তে ট্রাম এল, নীরদচন্দ্র দেখলেন, তাঁকে রাস্তায় প্রায় ঠেলে ফেলে দিয়ে বিভূতিভূষণ ট্রামে উঠে চলে গেলেন। একবার পেছন ফিরেও তাকালেন না।
বয়স তখন চার কী পাঁচ। বাবার হাত ধরে প্রথম কলকাতায় এলেন। বাবা দরিদ্র ব্রাহ্মণ। কলকাতা শহরে ভাল পাড়ায় বাড়ি ভাড়া করে থাকার মতো রেস্ত নেই। তাই বাধ্য হলেন শিশুপুত্রকে নিয়ে এক ‘নিষিদ্ধ’ পাড়ায় বস্তিতে ঘর ভাড়া নিতে। সে ঘরের পাশেই এক মহিলা প্রায়ই ছোট্ট বিভূতিকে ডেকে গল্প করতেন। কখনও টফি দিয়ে আদর করে গালও টিপে দিতেন। মা-ছাড়া বাড়িতে খুব তাড়াতাড়ি শিশু বিভূতি মহিলার স্নেহের কাঙাল হয়ে উঠল। একদিন সন্ধেবেলা জেদ ধরল, ঘরে যাবে না, তার কাছেই রাতটা থাকবে। মহিলা যত বোঝান, বিভূতি নাছোড়।
মধ্যবয়সে মেসে থাকার সময় একদিন বিভূতির মনে পড়ল ওই মহিলার কথা। ঠিক করলেন সেই পুরনো পাড়ায় মহিলাকে খুঁজতে যাবেন তিনি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সেখানে গিয়ে তিনি যত বলেন খুঁজতে এসেছেন সেই মহিলাকে, এ ছাড়া আর অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই, অল্পবয়সি যুবতী মেয়েরা শুনতে নারাজ। একসঙ্গে চার-পাঁচ জন মেয়ে নাকি তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সকলেরই আবদার তাঁকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার। শেষে ছুটে, দৌড়ে, পালিয়ে কোনও ক্রমে সে যাত্রা রক্ষা পান বিভূতিভূষণ। এ কথা মেসে এসে প্রাণের সখা নীরদচন্দ্রকে বলতে তিনি নাকি প্রথমে একচোট হাসেন। তারপর বিভূতিভূষণের কোনও আক্কেল নেই বলে তাঁকে খুব ভর্ৎসনা করেন। তাতেও তাঁর ‘আক্কেল’ হয়নি।
একবার এক বন্ধু বলেছিলেন সন্ধ্যাবেলা ওয়েলিংটন স্ক্যোয়ারে গেলে নাকি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বেশ্যাদের দেখা যায়।— ‘‘তুমি যাবে, আমিও থাকব।’’ বিভূতিভূষণের বয়স তখন চল্লিশের বেশি। কথা মতো নির্দিষ্ট সময়ে তিনি সেখানে গিয়ে হাজির। নভেম্বর মাস। শীতকাল। বাতাসে ঠান্ডা বেশ। বহু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখলেন, সব ভোঁ ভাঁ। বন্ধুও নেই, ‘তারা’ও নেই। রাগে গজগজ করতে করতে মেসে ফিরলেন। নীরদচন্দ্রর মতে, আসলে লেখার রসদ খুঁজতে তিনি জীবনটাকে এমন করেই চেখে দেখতে চাইতেন। তাই-ই এ সব করে কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতেন মাঝেমধ্যে।
বিএ পাশ করার পর প্রথম চাকরি পেলেন হরিণাভির একটি স্কুলে। ক্লাসের ফাঁকে একদিন স্টাফরুমে বসে আছেন। একটি অল্পবয়সি ছেলে এসে বলল, ‘‘চলুন,আমরা দু’জনে মিলে একটা বই লিখি।’’ বিভূতিভূষণ কমবয়সি ছোকরার চাপল্য ভেবে কথাটার কোনও গুরুত্বই দিলেন না। মনে মনে ভাবলেন, ‘‘বই তো দূর অস্ত, কোনও দিন কোনও গল্প, প্রবন্ধ লেখার কথাও আমার মনে আসেনি।” পরের দিন স্কুলে পৌঁছে দেখেন, যেখানে-সেখানে সাঁটা একটা বিজ্ঞাপন।
‘‘শীঘ্র প্রকাশিত হইতেছে….শীঘ্র প্রকাশিত হইতেছে উপন্যাস।’’
ভাবলেন নিশ্চয় ওই ডেঁপো ছোকরার কাজ, উপন্যাসের নামকরণও করে ফেলেছে সে।—চঞ্চলা! এ দিকে সহকর্মীরা বিভূতিভূষণের পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘‘বাঃ, মশাই! আপনি তো বেশ গোপন রসিক দেখছি। তা কবে বেরোচ্ছে উপন্যাস?’’
পরে বিভূতিভূষণ তাঁর বন্ধু এবং ভ্রমণসঙ্গী যোগেন্দ্রনাথ সিংহকে বলেছিলেন, উপন্যাস তো দূর অস্ত, এমনকী তিনি যে আদৌ লেখক নন, বিজ্ঞাপনটা পুরো মিথ্যে, এ কথাও কাউকে বলতে পারছেন না। ছেলেটাকে কার্যত কলার চেপে বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এইসব রসিকতার মানে কী? কোন প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছেয় সে এ সব করল! তাতে ছেলেটি একটুও উত্তেজিত না হয়ে বলেছিল, ভেবেছিল দু’জনে মিলে লিখে ফেলবে, আর ‘চঞ্চলা’ নামটাও তো মন্দ নয়। তাঁর এই ভাবলেশহীন উত্তরে বিভূতিভূষণ আর কিছু বলতে পারেননি। এদিকে রাস্তায়, বাজারে, স্কুলে, সকলের একই প্রশ্ন— কবে বেরোচ্ছে উপন্যাস?
রাগের চোটে কাগজ-কলম নিয়ে বসে একটি ছোট গল্প লিখলেন। পাঠিয়ে দিলেন কলকাতার একটি মাসিক পত্রিকায়। পত্রিকার নিয়ম অনুযায়ী সঙ্গে একটি ঠিকানা লেখা খাম স্ট্যাম্প সেঁটে পাঠালেন। তিন দিন পর থেকেই অপেক্ষা। দুরু দুরু বুকে স্কুলে বসে ভাবছেন এই বুঝি খাম ভর্তি অমনোনীত গল্প ফেরত এল! সপ্তাহ তিনেক বাদে এল সেই খাম। দেখামাত্র বিভূতিভূষণ খামটা পকেটে চালান করে দিলেন।
বিভূতিভূষণ ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘‘দুঃখ তো হল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই আনন্দও হল যে রোজকার দুশ্চিন্তা তো কাটল। আমার মনের অবস্থা এমন হল যে কোনও প্রিয়জন অসাধ্য রোগে মারা গিয়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল।’’
বাড়ি ফিরে খাম খুলে দেখেন, লেখা তো নেই! বদলে একটি চিঠি। সম্পাদক মশাই লিখেছেন, “আপনার রচনা মনোনীত হয়েছে, শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।”
পরবর্তী কালে বিভূতিভূষণ তাঁর বন্ধুকে বলেছিলেন, ছেলেটি বোধহয় ঈশ্বরের দূত হয়ে সে দিন তাঁর কাছে এসেছিল। ওই বিজ্ঞাপন কাণ্ডটি না ঘটলে তিনি কোনও দিন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না। সেই ছোকরার আসল নাম ছিল যতীন্দ্রমোহন রায়। ১৩২৮, মাঘ মাসের ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বিভূতিভূষণের প্রথম গল্প ‘উপেক্ষিতা’। এই গল্পটি সেই বছর শ্রেষ্ঠ গল্পের পুরস্কারও ছিনিয়ে নেয়।
প্রায়শই বিভূতিভূষণ তাঁর মুগ্ধ পাঠিকাদের থেকে প্রেমপত্র গোছের চিঠি পেতেন এবং বন্ধু নীরদচন্দ্র চৌধুরীর মতে, তিনি এ সব বেশ ভালই উপভোগ করতেন। সেই সব গল্প বেশ রসিয়ে রসিয়ে প্রাণের সখা নীরদচন্দ্রকে বলতেন। মির্জাপুর স্ট্রিটের মেসে আসার আগে হরিণাভির স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দেন বিভূতিভূষণ। চাকরিটি ছাড়ার পেছনে একটা রোম্যান্টিক ঘটনা জড়িয়ে। ওই সময় তিনি স্কুলের কাছে একটি দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তাঁদের একটি বিবাহযোগ্যা তরুণী কন্যা ছিল। সে আড়ালে-আভাসে বিভূতিভূষণকে খেয়াল রাখত।
বিভূতি স্কুলে চলে গেলে প্রায়শই মেয়েটি এসে তাঁর এলোমেলো ঘরদোর গুছিয়ে দিত। বিভূতিভূষণ সে সব বুঝতে পারতেন। কিন্তু কিছু বলতেন না। কারণ, মেয়েটিকে তাঁরও বেশ লাগত। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর কখনওই তাঁর মন-মেজাজ ভাল থাকত না। ঠিক তখনই না চাইতেই অমন যত্ন –আত্তি! মেয়েটি নিজেকে ‘আমি আপনার দাসী’ সম্বোধন করে বেশ কয়েকটি চিঠিও লিখেছিল তাঁকে। সে-চিঠি নীরদচন্দ্র দেখে বলেছিলেন, ‘‘এমন পবিত্র পত্র তিনি দেখেননি আগে।’’
কিন্তু হঠাৎই বিভূতিভূষণ ওই চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেন। কারণ ওই মেয়েটির উপর তিনি যতই মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে উঠছিলেন ততই বুঝতে পারছিলেন, তাঁরা কুলীন ব্রাহ্মণ, মেয়েটি তাঁদের সমগোত্রীয় নয়। কাজেই কোনও সম্পর্ক হলে তাঁর পরিবার খুশি হবে না। আশেপাশেও অনেক কথা হবে। এই সব ভেবে তিনি কাউকে না জানিয়ে প্রায় লুকিয়েই কলকাতায় চলে আসেন। ফিরে এসে স্কুলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
এই ঘটনা পেরিয়ে প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার তেইশ বছর পর বিভূতিভূষণ দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
ইছামতী নদীতে স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে বোন জাহ্নবীর মৃত্যু হল। আকস্মিক এই ঘটনায় বিভূতি যেন দুমড়েমুচড়ে গেলেন। তার দু’দিন পর। একটি অল্পবয়সি মেয়ে এল বিভূতির কাছে অটোগ্রাফ চাইতে। মেয়েটিকে খুব ভাল লেগে গেল তাঁর। ধীরে, ধীরে দুই অসমবয়সির বন্ধুত্বও বেশ গাঢ় হল। এক বছরের মাথায় দু’জনে বিয়ে করলেন।
পরবর্তী কালে বিভূতিভূষণ কল্যাণী দেবীকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘এখন মনে হচ্চে হয়তো অনেক জন্মের বন্ধন ছিল তোমার সঙ্গে— নয় তো এমন হবে কেন? কল্যাণী, তুমি আমার অনেক দিনের পরিচিতা, এ বার এত দেরীতে দেখা হল কেন জানি নে, আরও কিছুকাল আগে দেখা হলে ভাল হতো।”
‘খুলিলে মনের দ্বার না লাগে কপাট’— পয়লা উপন্যাস যদি অমরত্ব লাভ করে, তবে পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা অর্জনের কাজটি বেশ খানিকটা সহজ হয়ে যায় সৃষ্টিকর্তার পক্ষে। সেটা সাহিত্য হোক কিংবা চলচ্চিত্র। যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস। এ ভাবেই বাজিমাত করেছিল ‘পথের পাঁচালী’ এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর দুই প্রজন্ম ধরে বাঙালি পাঠক কেবলই পড়েছে তাঁকে আর তাঁর সৃষ্টিকে।
বিভূতিভূষণের বাবা মহানন্দ বন্দ্যাপাধ্যায় ছিলেন যাকে বলে ভবঘুরে। একেবারে গোড়ায় ছেলের লেখাপড়া শুরু হয়েছিল তাঁরই হাতে। তবে বছরের বেশির ভাগ সময়টাই বাইরে বাইরে কাটত তাঁর। কাজ এবং ভ্রমণ, দুই উদ্দেশ্যেই। সেই স্বভাব পেয়েছিলেন বিভূতিভূষণও। চিরকালই হেঁটে স্কুলে যেতেন। অবশ্য সেটা দারিদ্র্যের কারণেও। তবে এই সময়ে পল্লীপ্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন দু’চোখ ভরে। পথের সৌন্দর্যই তাঁর মনে প্রকৃতির প্রতি প্রেম জাগিয়ে তোলে। পরে এই ছাপ ফুটে ওঠে তাঁর লেখায়।
এই পড়া নিয়ে একটা মজার গল্প রয়েছে। বিভূতিভূষণের লেখাপড়ার গোড়ার দিনগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ‘বর্ণপরিচয়’-এর। মাসের প্রথমেই সাড়ে সাত আনা পয়সা দিয়ে এক মাসের ‘বর্ণপরিচয়’ কিনে রাখতেন মহানন্দ। তাঁর কাছেই লেখাপড়া শুরু হয়েছিল বড় ছেলের। রোজ সকালে এক পয়সা দামের একটা ‘বর্ণপরিচয়’ দিয়েই পড়া শুরু হত। সন্ধের পরে সেই বইয়ের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।
বাবার জিম্মা থেকে হরি রায়ের পাঠশালা, তার পরে হুগলি জেলার সাগঞ্জ-কেওটা, অবশেষে মহানন্দের কলকাতা বাসের কালে বৌবাজারের আরপুলি লেনের পাঠশালা— এত দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সম্পন্ন হয় বিভূতিভূষণের প্রাথমিক শিক্ষা। এর সঙ্গে পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাবার কাছে সংস্কৃত এবং মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পাঠ। বিভূতিভূষণের স্কুলের নাম বনগ্রাম উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়। তাঁর সেখানে ভর্তি হওয়াটাও একটা গল্প। মহানন্দ বাড়িতে থাকতেন না। প্রবল অভাবের সংসারে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করার আশা পোষণ করতেন না মৃণালিনী। এ দিকে বিভূতিভূষণ দেখতেন, প্রতিবেশীর ছেলেরা বনগ্রামে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়। তাঁরও খুব ইচ্ছে হল। দ্বিধা কাটিয়ে কোনও এক ইংরেজি বছরের মাঝামাঝি গিয়ে ভর্তি হয়ে গেলেন সেখানে। ‘লক্ষ্মীর ঝাঁপি’ থেকে সিঁদুর মাখানো টাকা দিলেন মৃণালিনী।
কড়া নজর ছিল প্রধান শিক্ষক চারুচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের। প্রথম দু’দিন ভয়ে স্কুল কম্পাউন্ড অবধি গিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন বিভূতিভূষণ। তৃতীয় দিন তাঁকে ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষক। সিঁদুর মাখানো টাকা দেখে আসল ঘটনা জানতে চান এবং জানার পরে, ছাত্রের বেতন মাফ করে দেন। পড়াশোনা চলতে থাকে। তিনি যখন ক্লাস এইট, প্রয়াত হন মহানন্দ। সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন বিভূতিভূষণ।
১৯১৮ সালে রিপন কলেজ থেকে ডিসটিংশন নিয়ে বিএ পরীক্ষায় পাশ করেন বিভূতিভূষণ। তার পরে কিছু দিন এমএ এবং ল ক্লাসে পড়েছিলেন। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ে বসিরহাটের মেয়ে গৌরীদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বিসূচিকা রোগে মারা যান গৌরীদেবী। বিভূতিভূষণেরও পড়াশোনায় ইতি ঘটে। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার মাইনর স্কুলে শিক্ষকের চাকরি নেন। পরে জাঙ্গিপাড়া থেকে সোনারপুরের হরিনাভি।
এর পরে এগিয়ে যেতে হয় প্রায় দু’দশক। এক দিন হঠাৎ হইচই পড়ে যায় ছোট্ট বনগ্রামে। অঞ্চলে খবর ছড়িয়ে পড়ে, ইছামতী নদীতে স্নান করতে নেমে ডুবে গিয়েছেন বিভূতিভূষণের বোন জাহ্নবীদেবী। সেই খবরের সূত্রেই প্রখ্যাত লেখকের ঠিকানা এসে পৌঁছয় ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় কন্যা রমাদেবীর কাছে। বাবার দেওয়া আকাশি-নীল রঙের সোনালি ঢেউ খেলানো শাড়ি পরে বিভূতিভূষণের সঙ্গে দেখা করতে যান রমাদেবী। লেখক তখন বড়ই বিষণ্ণ। অটোগ্রাফ খাতায় সই করে লিখে দিলেন, ‘‘গতিই জীবন, গতির দৈন্যই মৃত্যু।’’ অতঃপর ২৯ বছর ব্যবধানের দুই মানব-মানবীর বন্ধুত্ব এবং চিঠি চালাচালি।
রমাদেবী বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। সময় চাইলেন বিভূতিভূষণ। মনে করিয়ে দিলেন গৌরীদেবীর কথা। বোঝালেন নানা ভাবে। বললেন, ‘‘আমার সাথে তোমার বয়সের অসম্ভব তফাত। তুমি না হয় ছেলেমানুষ, বুঝতে পারছ না, কিন্তু আমি একজন বয়স্ক লোক হয়ে কি করে তোমাকে ডোবাই?’’ এমনকি এ-ও বললেন, ‘‘দেখ আমার গায়ের রোমে, মাথার চুলে পাক ধরেছে।’’ কিন্তু রমাদেবী নাছোড়, ‘‘আপনাকে মাত্র দশদিনের জন্য স্বামী হিসেবে পেলে আমি ধন্য।’’ ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪০ সম্পন্ন হল সেই শুভকাজ। সাত বছর পরে জন্ম হল পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের (বাবলু)।
এমএ এবং ল ক্লাসে পড়ার সময়ে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল নীরদচন্দ্র চৌধুরীর। তিন বছরের ছোট-বড় এই দুই সহপাঠীর ঘনিষ্ঠতার কথা সুবিদিত। নীরদচন্দ্রের ‘দাই হ্যান্ড গ্রেট অ্যানার্ক’ বইয়ে তার কিছু পরিচয় মেলে। মূলত সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই দু’জনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। নীরদচন্দ্রের বিয়ে হয়নি তখনও। অন্য দিকে গৌরীদেবীর মৃত্যুতে বিভূতিভূষণ সদা-বিচলিত। সেখানেই একই মেসের বাসিন্দা নীরদচন্দ্র ‘পথের পাঁচালী’ শেষ করার জন্য তাগাদা দিলেন বন্ধুকে। প্রায় তিন বছর ধরে। তাঁর লেখায় পাওয়া যায়— ‘‘১৯২৮-এ প্রকাশিত তাঁহার প্রথম উপন্যাস তাঁহার আসন প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিল এবং এখন ওই গ্রন্থটির সত্যজিৎ রায়-কৃত চলচ্চিত্র রূপ সারা বিশ্বে সমাদৃত হইয়াছে। ১৯২৪-এ প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা লিখিয়াই তিনি আমাকে পড়িয়া শুনাইয়াছিলেন… ১৯২৮-এ উহা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইবার পর আমি এক প্রকাশক খুঁজিয়া পাই যিনি উহা গ্রন্থাকারে ছাপিতে সম্মত হন।’’
বিভূতিভূষণের একাকিত্বের কথাও লিখেছেন নীরদচন্দ্র। প্রায় সন্ধেতেই তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে আসতেন বিভূতিভূষণ। বন্ধুর কাছে স্ত্রী বিয়োগের যন্ত্রণার কথা বলতেন। তবে বিভূতিভূষণের আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা চালানোর ব্যাপারটা জানতেন না নীরদচন্দ্র। পরে সে সব কথা জেনেছেন ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের ভিতর দিয়ে। তাঁর কাছে তাই বিভূতিভূষণই স্বয়ং ‘অপরাজিত’। তিনি জানান, বন্ধু ছিলেন কঠোর বাস্তববাদী ও স্থিতধী। প্রবল জীবনসংগ্রাম তাঁকে তেতো করে তুলতে পারেনি। জীবন সম্পর্কে কোনও হতাশাও জাগিয়ে তোলেনি। বরং সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল করেছিল। গড়ে তুলেছিল তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। সে কারণেই প্রকৃতি এবং মানুষের মন নিয়ে এত জটিল কাটাছেঁড়া করতে পেরেছেন বিভূতিভূষণ।
দু’জনে প্রবল বন্ধুত্ব হলেও জীবনযাপনে তফাত ছিল। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বিভূতিভূষণ চিরকালই খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। এমনকি কিছুটা আয়েশ করার সঙ্গতি হওয়ার পরেও। নীরদচন্দ্রের কলমে, ‘‘বহু বৎসর পর, আমার বিবাহ পরবর্তীকালে, তিনি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ভারী বন্ধুত্ব করিয়াছিলেন, তাঁহার সহিত আসিয়া পছন্দ-অপছন্দের গল্প করিতেন। কিন্তু বৈঠকখানায় না বসিয়া তিনি নির্বিকার, শান্তভাবে বিড়ি টানিতে টানিতে সোজা তাঁহার শয়ন কক্ষে চলিয়া যাইতেন এবং সূচী-শিল্প করা চাদরের উপর বসিয়া, দুর্গন্ধময় নিম্ন মধ্যবিত্ত গন্ধ ছড়াইতেন। আমার স্ত্রী তাঁহাকে বিড়ি ফেলিতে বাধ্য করিয়া, ভৃত্যকে দিয়া একপ্যাকেট খ্যাতনামা সিগারেট আনাইয়া দিতেন।’’ নীরদচন্দ্রের উচ্চ মধ্যবিত্ত আভিজাত্যের গরিমা ছিল। তবু বন্ধুত্ব ছিল অটুট।
বিভূতিভূষণের প্রিয় ফল ছিল আম আর কাঁঠাল। ভালবাসতেন চাঁপা, বকুল, শেফালি ফুল। বন্য ফুলের মধ্যে পছন্দ ছিল ঘেঁটু আর ছোট এড়াঞ্চি। ঋজু বনস্পতিতেও আকর্ষণ ছিল তাঁর। গাছ আর মেঘমুক্ত রোদের দিনে দিগন্ত— এ সব নিয়েই চলত তাঁর পড়াশোনার নেশা। সাহিত্য পড়তেন। সঙ্গে পড়তেন জ্যোতির্বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান আর উদ্ভিদবিদ্যা। শেষ জীবনে নাকি পরলোকতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন। তাই সারা বাড়িতে বইপত্র ছড়ানো থাকত। আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন না।
দৈনন্দিন রুটিনটাও ছিল ভারী মজার। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। প্রবল গরম হোক বা প্রবল শীত, স্নান করতে যেতেন ইছামতীতে। ফিরে লিখতে বসতেন। প্রথমে দিনলিপি। তার পর চিঠিপত্রের উত্তর। ৭টা নাগাদ প্রাতরাশ। ৯টা নাগাদ স্কুলের পথে যাত্রা। শোনা যায়, গোপালনগর উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে যাওয়ার সময় সদ্য-ভাঙা গাছের ডাল বা বাঁশের কঞ্চি জাতীয় কিছু একটা নিয়ে যেতেন বিভূতিভূষণ। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে জলযোগ। ইছামতী অথবা বাওড়ের ধারে শক্তপোক্ত গাছের ডালের উপরে গিয়ে বসতেন। খানিক বাদে আবার পড়ানো। প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েরা ভিড় করে আসত তাঁর কাছে। পড়াতেন, গল্প বলতেন। রাতের খাওয়ার পরে কোনও কোনও দিন আড্ডা দিতে বাইরে যেতেন। বাড়ি ফিরতে হয়তো একটা বেজে যেত। আর এই পুরো সময়টাই প্রকৃতিকে নিরীক্ষণ করতেন। বিশেষত, বিকেল আর বেশি রাতে। গাছের ডালে বসে আকাশের বদলাতে থাকা রং দেখতেন। গভীর রাতে দেখতেন গভীর কালো আকাশ।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘‘বিভূতিভূষণ আর সমস্ত সার্থক-কর্মা দিব্যদৃষ্টি লেখকের মত এই দুইটি প্রধান বিষয় বা বস্তু নিয়েই যা কিছু বলবার তা ব’লে গিয়েছেন।’’ সেই দু’টি প্রধান বিষয় হল প্রকৃতি আর মানুষ। প্রকৃতির কথা কিছু হল। মানুষ নিয়ে আরও ভয়ের কিছু বাস্তব এঁকেছিলেন বিভূতিভূষণ।
‘তালনবমী’র আগের রাত জুড়ে গোপাল স্বপ্ন দেখেছিল— ‘‘খোকা, কাঁকুড়ের ডাল্না আর নিবি? মুগের ডাল বেশি করে মেখে নে… খোকা যাই তাল কুড়িয়ে দিয়েছিলি, তাই পায়েস হল! …
খা, খা,—খুব খা—আজ যে তালনবমী রে…’’ বিভূতিভূষণের অনেক চরিত্রই এমন অভুক্ত।
‘পথের পাঁচালী’তে ছিল অপু-দুর্গার আশ-শ্যাওড়ার ফল খাওয়ার গল্প। বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন, জন্মে থেকে তারা কোনও ভাল জিনিস খেতে পায়নি। অথচ তারা তো পৃথিবীতে নতুন। তাই মিষ্টি রসের স্বাদ পেতে চায় তারা। কিন্তু মিষ্টি কিনে খাওয়ার অবস্থা তাদের নেই। তবে বিশ্বের সম্পদ অনন্ত। সেখান থেকেই সামান্য বনের গাছ থেকে, তারা নিজেদের ভাল লাগার জিনিস সংগ্রহ করে। লেখকের কলমে: ‘‘…লুব্ধ দরিদ্র ঘরের বালকবালিকাদের জন্য তাই করুণাময়ী বনদেবীরা বনের তুচ্ছ ফুলফল মিষ্টি মধুতে ভরাইয়া রাখেন।’’ তার পরে এক দিন নিশ্চিন্দিপুরের পাশের গ্রামে আদ্যশ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণে গিয়ে ব্রাহ্মণদের দেখাদেখি ছাঁদা বাঁধে অপু। সেই ছাঁদা দেখে বড় খুশি হয় তার মা সর্বজয়া।
‘দৃষ্টিপ্রদীপ’ উপন্যাসের একেবারে গোড়ায় জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতে জিতুর দাদা বাড়ির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সমান ভাগে খাবার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিল— ‘‘মাছ তো কম কেনা হয়নি, তার ওপর আবার মাঠের পুকুর থেকে মাছ এসেছিল—এত মাছ সব হারু আর ভুন্টিরা খেয়ে ফেলেচে! বাবারে, রাক্কোস্ সব এক-একটি! একখানা মাছও খেতে পেলাম না।’’
‘সই’, ‘পুঁইমাচা’ বা ‘অনুবর্তন’-এ বারবার খিদে উঠে এসেছে বিভূতিভূষণের কলমে। বড় বেশি দারিদ্র্য দেখেছেন লেখক। সাহিত্যে তার ছাপ থাকবে না, তা-ও কি হয়? লেখালেখির প্রাণ পায় সেখান থেকেই। ‘পথের পাঁচালী’ প্রসঙ্গে দিলীপকুমার রায়কে এক চিঠিতে বলেছিলেন, ‘‘দৈনন্দিন ছোটখাটো সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে যে জীবনধারা ক্ষুদ্র গ্রাম্য নদীর মত মন্থর বেগে অথচ পরিপূর্ণ বিশ্বাসের ও আনন্দের সঙ্গে চলেছে—আসল জিনিসটা সেখানে… নভেল কেন কৃত্রিম হবে?’’
বিভূতিভূষণের ভালবাসাও ছিল অকৃত্রিম। দিনলিপিতে লিখেছিলেন, ‘‘ভালবাসা Pity নয়, করুণা নয়, Charity নয়, সহানুভূতি নয়, এমন কি বন্ধুত্বও নয়— ভালবাসা ভালবাসা। এখন সেই জিনিসের সূক্ষ্ম মহিমা ও রসটুকু না বুঝে যে নষ্ট করে ফ্যালে অযাচিতভাবে দিয়ে, অপাত্রে দিয়ে— তার চেয়ে বড় মূর্খ আর কে?’’ প্রকৃতি আর মানুষ পছন্দ করতেন বলেই মন দিয়ে দেখতেন জগতের সৃষ্টি। ভালবাসা দিয়েও। নিজে সৃষ্টি করতেন তার থেকে রস আহরণ করে। ভালবাসা সেখানেও ছিল কানায় কানায়।
পুজোর ঠিক কয়েক দিন আগে ঘাটশিলা চলে যেতেন বিভূতিভূষণ। ফিরতেন মাঘের শেষে অথবা ফাল্গুনের গোড়ায়। আসলে তিরিশের দশকের শুরু থেকেই ঘাটশিলা আর গালুডির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। পরে ঘাটশিলায় একটি বাড়ি কেনেন, গৌরীদেবীর নামে নাম দেন ‘গৌরীকুঞ্জ’। ১৯৪২ সালে ব্যারাকপুরে পুরোদস্তুর সংসারি হওয়ার পরেও ঘাটশিলায় গিয়ে মাসকয়েকের অবসর যাপন চলত। বছরের এই সময়ে সেখানে যেতেন তাঁর সাহিত্যিক বন্ধুরা। প্রমথনাথ বিশী, বিশ্বপতি চৌধুরী, গজেন্দ্রকুমার মিত্র, প্রবোধকুমার সান্যাল, বাণী রায়, সুমথনাথ ঘোষ, নীরদরঞ্জন দাশগুপ্তদেরও ছুটিটা ঘাটশিলাতেই কাটত। ফলে আড্ডা জমত। আর চলত প্রকৃতি দেখা। নির্জন এলাকায় একা একা বেড়াতেন বিভূতিভূষণ। এঁদেলবেড়ের জঙ্গল, সুবর্ণরেখা নদী, পাণ্ডবশীলা, কাছিমদহ রাত-মোহনা ছিল তাঁর প্রিয় ভ্রমণের জায়গা। শোনা যায়, ফুলডুংরি পাহাড়ের পিছনে একটি পাথরের উপরে বসে উপাসনা করতেন তিনি। বাড়ির সামনেও তেমন একটা পাথরখণ্ড ছিল। কূর্মাকৃতি বলে বিভূতিভূষণ নাম দিয়েছিলেন, ‘কূর্মকূট’। ঘাটশিলা তাঁর এতই পছন্দ হয়েছিল যে গজেন্দ্রকুমার মিত্র, সুমথনাথ ঘোষ এবং বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়কে সেখানে বাড়ি কিনিয়েছিলেন।
ঝাড়গ্রামের পথ ‘পথের কবি’ বিভূতিভূষণকে সত্যিকারের ডাক দিল ঘটনাচক্রে। ১৯৪২ সালে জন্মের তিন দিন পরে মৃত্যু হল মেয়ের। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ভেঙে পড়েন। লেখকের শ্বশুরমশাই ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ছিলেন আবগারি ইনস্পেক্টর। কর্মসূত্রে থাকতেন কোলাঘাটে। কল্যাণীকে ১১ জুলাই কোলাঘাটে পাঠিয়ে নিজে এলেন পুজোর সময়। সেবার পুজোর সময় হল ভয়ানক আশ্বিনের ঝড়। সবচেয়ে ক্ষতি হল মেদিনীপুর জেলার। এর পরই ষোড়ষীকান্ত বদলি হয়ে এলেন ঝাড়গ্রামে। কল্যাণীকে ঝাড়গ্রামে পাঠিয়ে ভাইয়ের খোঁজ নিতে এলেন ঘাটশিলায়। নভেম্বেরে ঝাড়গ্রাম থেকে কল্যাণীকে ঘাটশিলায় নিয়ে যান। নিজে এসেছিলেন না কেউ কল্যাণীকে পৌঁছে দিয়েছিলেন তা জানা যায় না।
১৯৪৩ সালের শুরুতে আবার এলেন চাঁইবাসা–সরাইকেলা অঞ্চলে। ৯ জানুয়ারি কল্যাণীকে ঘাটশিলায় রেখে চাঁইবাসার ইঞ্জিনিয়ার সুবোধ ঘোষের মোটরে নুটুকে নিয়ে ধলভূমগড়, চাকুলিয়া দিয়ে ঝাড়গ্রামে এলেন। ডায়েরিতে লিখলেন, ‘বিহার ছাড়ালুম বাংলা আরম্ভ হোল। তালগাছ, নারিকেল গাছ। বাংলার খড়ের ঘর। বাংলা মায়ের উদ্দেশে প্রণাম করি। কইজুড়ি (দইজুড়ি) বলে একটা গ্রাম পথে পড়ে। ঝাড়গ্রাম পৌঁছে নুকুর সাথে মায়াদির (বড় শ্যালিকা) দেখা পথেই। রাজার বাড়ী ও সাবিত্রী মন্দির ঘুরে চা ও খাবার খেয়ে বেলুকে (কল্যাণীর পরের বোন) নিয়ে তখুনি রওনা’।
১৯৪৩ সালে জানুয়ারি মাসের গোড়ায় চাঁইবাসার বাংলা সাহিত্যর অনুরাগীদের ডাকে স্ত্রীকে নিয়ে বিভূতিভূষণ চাঁইবাসা যান। আলাপ হয় যোগেন্দ্রনাথ সিংহের (ধলভূমগড়ের বিএফও) এবং হরদয়াল সিং (কোলহান ডিএফও) এর সঙ্গে। ইঞ্জিনিয়ার সুবোধ ঘোষ এঁদের বিভূতিভূষণ পড়ে শোনাতেন। তাই তাঁরা বন পাগল বিভূতিভূষণকে সিংভূমের অনাঘ্রাত গভীর অরণ্য দেখার আমন্ত্রণ জানালে তিনি উৎফুল্ল হন। ৫ জানুয়ারি সরাইকেলার রাজবাড়ি দেখে হলুদ বিকেলে একটি অল্প উচ্চ স্লেট পাথরের সুন্দর টিলা দেখে বন্ধুরা নামকরণ করলেন ‘বিভূতি শৈল’।
কল্যাণীর মন প্রকৃতির স্পর্শে সজীব হয়। কিন্তু একটানা বন–পাহাড় ভ্রমণে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাই ৯ জানুয়ারি বিভূতিভূষণ চাঁইবাসা থেকে মোটরে ঝাড়গ্রাম এলেও কল্যাণী ঘাটশিলায় থেকে যান। মাসের একটা সময় রসদ সংগ্রহের তাগিদে তাঁকে কলকাতায় প্রকাশকদের কাছে যেতে হত। তাই কল্যাণী ঝাড়গ্রামে যেতে চাইলে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরের ট্রেনে শ্যালিকা বেলু, গুটকে (বন্ধুপুত্র অজিত রায়) এবং কল্যাণীকে নিয়ে দ্বিতীয়বার ঝাড়গ্রামে আসেন। শ্বশুরমশাই স্টেশনে ছিলেন। ওই ট্রেনেই কলকাতায় যান লেখক।
কলকাতায় ফিরে কর্মব্যস্ততার মাঝে মনে পড়ে কল্যানীর কথা। সেই স্বপ্নের ঘোর লাগা বন ভ্রমণের কথা। ৬ ফেব্রুয়ারি হাওড়া থেকে খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার ধরলেন। ঝাড়গ্রাম স্টেশনে নেমে রিকশা করে শ্বশুরবাড়ি। কল্যাণী খুব খুশি। বিকেলে কল্যাণীর জন্য কাপড় কিনে আনেন। আসলে সন্তান শোক ভোলানোর জন্য স্ত্রীকে নানা ভাবে খুশি রাখার চেষ্টা সব সময় করতেন। কিন্তু কল্যাণীর আক্ষেপ যায় না। রাতে স্বামীকে বলেন, ‘আমার যদি একটা খোকা থাকত’! ৭ ফেব্রুয়ারি ছোট শ্যালক দেবীদাসকে (বাদু) নিয়ে বিভূতিভূষণ গেলেন প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঝাড়গ্রামের বাসায়। কিন্ত দেখা পেলেন না। সেবার ঝাড়গ্রামে থেকেছিলেন ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সকালে বাদুর সঙ্গে শালবনে বেড়ানো। বাসায় বড় ইঁদারা থাকলেও তাঁর পছন্দের স্নানের জন্য যেতেন রাজবাড়ির পুকুরে। বাঁধানো পুকুরপাড় দেখে মনে হয়েছিল, আহা দেশের পুকুরের (বিলবিলে) পাড় যদি এরকম বাঁধানো যেত! আর যদি রাজবাড়ির সামনের মতো রাস্তার দু’ধারে পাম প্যাভেলিয়ান করা যেত! বিকেলে সাবিত্রী পুকুরের পাশ দিয়ে চলে যেতেন বাণীভবনের রাস্তায়। কখনও সঙ্গী বাদু, শুবু। কখনও একলা। রাজবাড়ির সামনে দিয়ে যেতেন ‘কালাচুনি’ গ্রামে। একদিন বিকেলে রাজবাড়ির ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে হয়েছিল। দেখা বোধহয় হয়নি। কারণ সে সময় ম্যানেজার দেবেনবাবুর উদ্যোগে গণ্যমান্য কেউ ঝাড়গ্রামে রাজবাড়িতে এলেই রাজাবাহাদুর তাঁকে অন্তত এক বিঘা জমি দিয়ে থাকার জন্য উৎসাহিত করতেন। ফলে অরণ্যশহরে বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি বাড়ি করেছেন। এবং এলাকাটির উন্নয়নে যোগ দিয়েছেন।
সরস্বতী পুজো ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। বিভূতিভূষণেরা অঞ্জলি দেন বাসার ঠিক উল্টোদিকে ঝাড়গ্রাম রাজ প্রাইমারি স্কুলে। সেখানে আলাপ এক মৌলবির সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে বাজারে যান। ফেরার পথে আড্ডা দিতে যান বনগাঁর বাসিন্দা কান্তিবাবুর কাছে। কান্তিবাবু সাবরেজিস্টার ছিলেন। বিকেলে ঘাটশিলায় যাওয়ার জন্য ট্রেনে তুলতে আসেন কল্যাণী ও খোকা (বিভূতিভূষণের বড় শ্যালক তথা তাঁর অন্যতম জীবনীকার চণ্ডীদাস)। সারাক্ষণ ছোটবড় সবাইকে নিয়ে এত মজা করতেন যে উনি যাবার সময় সবার মন খারাপ হত। কল্যাণীর তো কথাই নেই। ট্রেনে ওঠার পরেও চেয়ে রইলেন স্বামীর যাত্রাপথের দিকে, যতক্ষণ দেখা যায়। সেই দৃষ্টিতে বিভূতিভূষণের কষ্ট হয়। আরও মায়া পড়ে কল্যাণীর উপর।
এদিকে খ্যাতি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে লেখার চাহিদা। বিশেষত ভ্রমণমূলক লেখার। বেড়াচ্ছেন অজানা সিংভূম, মানভূম বা লাগোয়া ওড়িশার ‘বনে-পাহাড়ে’। ২১ ফেব্রুয়ারি এলেন বহড়াগোড়া। সঙ্গী যোগেন্দ্র সিংহ। পরের দিন চিচড়া গ্রামের কাছে দুধকুণ্ডিতে। শুনলেন, ঝাড়গ্রাম মাত্র ৩০ মাইল। কল্যাণীর টান প্রবল হল। ফেকোঘাটে ডুলুং নদী কংক্রিটের চাতালের ওপর দিয়ে পেরিয়ে চন্দ্রীমোড়, নৌদাশোল (লোধাশুলি) এলেন ঝাড়গ্রামে। হঠাৎ আগমনে কল্যাণী তো বেজায় খুশি। পরবর্তীকালে, যোগেন্দ্রনাথ সিংহ বিভূতিভূষণের স্মৃতিচারনায় একটি বই লেখেন, ‘পথের পাঁচালী কে বিভূতিবাবু’। সেখানে এই দিনটির কথা লিখতে গিয়ে তিনি বলেছেন- ‘এদিকে তিন চার দিন যাবত বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তা কাঁচা ছিল ও নালার উপর পুল ছিল না। আমি বিভূতিবাবুর উৎসাহের রাশ টানতে পারি কিন্তু শ্বশুরবাড়ির টান তা মানবে কেন!…পথে কাউকে পেলেই বিভূতিবাবু রাস্তার খবর জিজ্ঞাসা করছেন। যেন সীতা-হারা রামচন্দ্র। …আমাদের সবচেয়ে ভয় ছিল একটি বিশেষ নালার (ফেকো’র ডুলুং)।…নালার একটু আগেই এক বুড়ির সঙ্গে দেখা হল।…বুড়ি জলের পরিমাণ দেখাতে হাঁটুতে হাত রেখে নাটকীয় ভঙ্গি করে সুর করে বলল –“মাগো এত জল গো! কী করে পাঁরাবি গো?”…বিভূতিবাবুর মুখ শুকিয়ে গেল দেখে আমার মনে দয়া হল। হয়তো গুরু ভক্তি জেগে থাকবে। হনুমানের ভাব আর কী। মোটর যদি ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত না পৌছাতে পারে তবে ঝাড়গ্রামকেই তুলে এনে গুরুর চরণে অর্পণ করব’।
ঝাড়গ্রামে পৌঁছে ‘বিভূতিবাবু’ বাড়ি না গিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে গেলেন পরিত্যক্ত পুরাতন রাজবাড়িতে। বিকেলে আমরা মোটরে ঝাড়গ্রামের উত্তর দিকে বেড়াতে গেলেন। যোগেন, বিভূতি, কল্যাণী, মায়া ও তাঁদের দুই বোন ছিলেন। একটি নালার (সম্ভবত নহর খাল) কিনারে মোটর দাঁড় করিয়ে তাঁরা আড্ডা দেন। বিভূতিবাবু প্রস্তাব করেন, ‘একটি সুন্দর গান হোক’। প্রস্তাবে সকলে লজ্জায় এ ওর পিঠে মুখ লুকোচ্ছেন। বিভূতিভূষণ হাতের ছড়ি উঁচিয়ে বললেন, ‘দ্যাখো, আমি মাস্টারি করি। এই ছড়ির ব্যবহার আমার জানা আছে। বাঁচতে চাও তো গান করো’। শেষ পর্যন্ত ছড়ি ও লজ্জার বোঝাপড়ায় সমবেত সংগীত হল।
তত দিনে বেরিয়ে গিয়েছে ‘আরণ্যক’। সময়টা ১৯৪৩ সালের শেষ দিকে। শীত কাল। বন আধিকারিক যোগেন্দ্রনাথ সিংহের আমন্ত্রণে সারান্ডার জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। সেই জঙ্গলে ভ্রমণ করার সময়ে লিখলেন ‘দেবযান’। মুগ্ধ হয়েছিলেন এতটাই যে, এক দিন রাত দেড়টা অবধি জেগে ছিলেন। মাথার উপরে দ্বিতীয়ার চাঁদ, পাশে কোয়না নদী— তার মধ্যে বসে বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন, ‘‘অরণ্যই ভারতের আসল রূপ, সভ্যতার জন্ম হয়েচে এই অরণ্য-শান্তির মধ্যে, বেদ, আরণ্যক, উপনিষদ জন্ম নিয়েচে এখানে— এই সমাহিত স্তব্ধতায়— নগরীর কোলাহলের মধ্যে নয়।’’
ঠিক এত দূরই দেখার ক্ষমতা ছিল বিভূতিভূষণের। তাই এইচএইচ জনস্টন, রোসিটা ফোর্বস-এর মতো কয়েক জন বিখ্যাত পর্যটকের বই পড়ে আফ্রিকার ভূপ্রকৃতি নিখুঁত বর্ণনায় সাজিয়েছিলেন ‘চাঁদের পাহাড়’-এ। আসলে প্রায় সাধকের মতোই লিখতেন বিভূতিভূষণ। জীবনের প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত। শেষ দশ বছর, ব্যারাকপুরে থাকাকালীন লিখেছেন ‘অশনি সংকেত’ বা ‘ইছামতী’র মতো কালজয়ী উপন্যাস। মৃত্যুর ঠিক পাঁচ-সাত দিন আগে পুজোর ছুটিতে শেষ করেছিলেন জীবনের শেষ গল্প ‘শেষ লেখা’। পরে বিভূতিভূষণের লেখার বাক্স থেকে উদ্ধার হয়েছিল সেই গল্প।
ভরা বসন্তে ঝাড়গ্রাম এলেন বিভূতিভূষণ। ১৯৪৩ সালের ৪ মার্চ। ডায়েরিতে লিখলেন, ‘বিকেলে একটা নতুন পথে অনেক জঙ্গলের মধ্যে বেড়িয়ে এলুম কিছুদূর। কল্যাণী খুব ভাবছিল। আমায় দেখে খুশি হোল’। বিকেলে কল্যাণীকে নিয়ে একান্তে বেড়াতে যান বাণীভবনের পথে। বাণীভবনের পুকুরে নামার চেষ্টা করেন। ফেরার পথে সাবিত্রী পুকুরের পাড়ে কল্যাণীকে নিয়ে বসে পড়েন। অনেকক্ষণ ধরে পুরনো দিনের গল্প চলল। পরের দিন বাজার-স্টেশন চত্বরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। কিছু ছাত্র তাঁকে চিনতে পারেন। প্রিয় লেখককে মেসে নিয়ে গিয়ে চা খাওয়ান তাঁরা। সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় ‘ডাকঘর’ নাটক অভিনয় হয়। সকলেরই শুতে অনেক রাত হয়। কল্যাণী স্বামীকে বলেন, ‘আমায় খোকার গল্প কর। তারপর ছেলেমানুষের সুরে ঘুমপাড়ানি গোছের একটি কবিতা বলে– ‘খোকা আমার সাত সাগরের পার…’। বিভূতিভূষণের বেশ লাগে। পঙক্তিটি মনে গেঁথে যায়। পরে বহু জায়গায় এর উল্লেখ আছে। একটি পুত্র সন্তানের কামনা সেই সময়ে তাঁদের হৃদয়ে গভীর হচ্ছিল।
৬ই মার্চ সাবরেজিস্টার কান্তিবাবুর সঙ্গে বাজারে যান, ফেরার পথে মহকুমাশাসক মির্জা সাহেবের সঙ্গে আলাপ হয়। বিকেলে বাণীভবনের রাস্তা ধরে ‘বনে-পাহাড়ে’তে উল্লেখিত সাধুর খানাকুই (পড়ুন খানাকুল) এর আশ্রমে এলেন। উন্মুক্ত প্রান্তর, ঘন শালবন আর ঝরনা দেখে সেখানে বাড়ি তৈরির ইচ্ছে জাগে লেখকের। সাধু বলেন, জমি খুব সস্তা। বিভূতিভূষণ উৎসাহিত। সাধুকে জমি দেখা ও বাড়ি তৈরির দেখাশোনা করে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে ভুলে যান।
খানাকুই পর্বের কথা ‘বনে-পাহাড়ে’ বিস্তারিত রয়েছে। পরের দিন সকালে কল্যাণী, মায়া ও বেলুকে নিয়ে আবার ওই আশ্রমে যান। বিকেলে ঝরনার টানে শালবনে বসে লিখলেন, ‘শালবনের পথে কতদূর গিয়ে একটা ঝর্ণা পেলুম। চুপ করে বসলুম তার নির্জন তীরে। এক জায়গায় একটা বাঁধানো বাঁধ। সন্ধ্যায় নিবিড় ছায়া নেমেছে শালবনে, শুষ্ক ঝরাপাতার কেমন সুন্দর গন্ধ। উদাস করে মন—ঘন শালবনে ভয়ও হয়—…কতক্ষণ বসে বসে ভাবলুম, পৃথিবীতে এক লক্ষ beauty spot আছে। মানুষ জীবনে পাঁচ হাজার দেখতে পারে।…কি সুন্দর রাত্রির হাওয়া’! সেদিন রাতেই ছিল ব্রহ্মানন্দ হোতার বাড়িতে বিবাহ অনুষ্ঠান। বসন্তের শালবন বিভূতিভূষণের মনকে নিয়ে গিয়েছিল এক কল্পলোকে। পরের দিন সকালে আবার এলেন সেই শালবনে। ডায়েরিতে লিখলেন, ‘মনে অপূর্ব ধ্যানের ভাব আসে।…ঝরা শালপাতার রাশির ওপরে গভীর বনে পাখীর কুজনের মধ্য বসে গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ করে যেন মনে হয় বৈদিক যুগে আছি। গভীর শান্তি। ভগবানকে মুখোমুখি পাই। তিনি এই বিরাট শান্তির মধ্যে, নিস্তব্ধ প্রকৃতির কোলে আসন পেতেছেন’। এরকম ভাবে আর কেউ কি ঝাড়গ্রামের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করেছেন? সেদিন বিকেলে স্টেশনে ছাড়তে এসেও কল্যাণী প্রিয় মানুষটিকে বলেন, ‘চল আজ ফিরে যাই’। কিন্তু ডাক এসেছে সিং সাহেবের, মানভূম বেড়ানোর জন্য।
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু। জিনিসপত্রের দামও চড়ছে। বাসায় স্থানাভাব, স্টেশন থেকেও অনেকটা দূর। তাই পুরনো ঝাড়গ্রামের বাসা ছেড়ে ষোড়শীকান্তের পরিবার উঠে এল রেললাইনের কাছে এক মাড়োয়ারির বাড়িতে। তাঁদের ছোট্ট মেয়েটির নাম রেবতী। ২৭ অগস্ট নতুন বাসা খুঁজে আবার ঝাড়গ্রামে এলেন বিভূতিভূষণ। মেজদির বর। তাই সবাই ওঁকে মেজদা বলে ডাকতেন। ছোট্ট রেবতীরও ‘মেজদা’। লেখক মজা পান। তাঁর কোলে চেপে রেবতী পুকুরে স্নানে যায়। পরম মমতায় তিনি তাকে স্নান করান। বুকে যে কন্যা হারানোর দুঃখ। গুণী মানুষটিকে বিরক্ত করার অপরাধে রেবতীর মা তাঁকে মেরেছিলেন।
ষোড়শীকান্তের প্রথম বাসাটি ছিল পুরনো ঝাড়গ্রামের আবগারি অফিসের চত্বরে একটা ল্যাটেরাইট (মাকড়া) পাথরের বাড়ি। বাইরে টিনের বারান্দা। ওই বাসায় থাকতেন ষোড়শীকান্তের স্ত্রী, দুই পুত্র ও কন্যারা। যার পাশেই ছিল ইনস্পেক্টর অফিস এবং অন্যদের থাকার টিনের ব্যারাক। পাশেই থাকতেন সর্বাধীকারী পরিবার। ঝাড়গ্রামের বর্তমান রাজবাড়ি এঁদের তত্ত্বাবধানে তৈরি। পরের দিনই কল্যাণীর বাক্স নিয়ে বিভূতিভূষণ ঘাটশিলায় ফেরেন শ্বশুরবাড়ির দেশ ঝাড়গ্রামকে শেষ প্রণাম জানিয়ে।
ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামে তৈরি হয়েছে অনেক গুণমুগ্ধ। যেমন মিসেস দাস। যাঁর কথা বারে বারে লিখেছেন। মিসেস দাসের বাড়িতেই ‘ডাকঘর’ অভিনয় উপলক্ষে ১৯ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রামে এলেন। তখনও বোধহয় ঝাড়গ্রামের মূল পথটি পাকা হয়নি। ডায়েরিতে লিখছেন, ‘ঝাড়গ্রামের ধূলিধূসর পথে রাজবাড়ী, সাবিত্রী মন্দির, আমার পুরানো শ্বশুরবাড়ী ইত্যাদি ঘুরে রাজবাড়ীর হাট দেখে, দারুচিনি গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে এলুম। এসে ভূরিভোজন করা গেল…ডাকঘর হোল। বেশ পরিকল্পনা করেছিল বাড়ীটার’। বাড়ি বলতে এখানে উনি বোধহয় নাটকের সেট বোঝাতে চেয়েছেন। অনেক রাতে রাঁচি এক্সপ্রেস ধরে ঘাটশিলায় ফেরেন।
এই সময়ে বিভূতিভূষণ এক সঙ্গে ‘দেবযান’ ও ‘বনে-পাহাড়ে’ লিখছিলেন। কাজের চাপ ছিল। কিন্তু ঘাটশিলায় থাকলে দ্বিজুবাবুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ মল্লিক, বাড়ি যাওয়া চাই–ই-চাই। ওখানেই ২৯ ডিসেম্বর মিসেস দাস-সহ ৪৫ জনের দল ঝাড়গ্রাম থেকে ‘ডাকঘর’এর কল শো করতে আসেন। পরের দিন সেখানে ঝাড়গ্রামের প্রখ্যাত সাহিত্যিক নৃপেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে আলাপ ও বহুক্ষণ সাহিত্য আলোচনা করেন। ১৯৪৪, ১৯৪৬, ১৯৪৭, ১৯৪৮, ১৯৪৯ সালের কোনও ডায়েরি পাওয়া যায় না। ১৯৪৫ সালের ডায়েরিতে ঝাড়গ্রামের কথা একবারই আছে। ৩ নভেম্বর মুসৌরি ভ্রমণ করে হাওড়া ফেরেন। তারপর ওখান থেকেই ট্রেন বদলে ঘাটশিলা ফেরেন রাতে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনে গাড়ি থামলে দেখেন শহরে দীপাবলির উৎসব চলছে। ১৯৫০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শেষবারের মত বিএনআর-এর পথে ঘাটশিলায় আসেন। ডায়েরিতে লিখলেন, ‘খড়গপুর ছাড়িয়ে হঠাৎ ন’মাস পরে আজ সবুজ লতাঘাস, মুক্ত space ও শালবনের দৃশ্য দেখে মন কোথায় উঠে গেল।…রাস্তার দু’ধারে সবুজ বনানী। গিডনি ছাড়িয়েই পাহাড় দেখলুম ন’মাস পরে’।
বিভূতিভূষণ তখন হরিনাভিতে। বন্ধু ‘বালক-কবি’ পাঁচুগোপাল ওরফে যতীন্দ্রমোহন রায় এক দিন তাঁকে বললেন, ‘‘আপনার সঙ্গে ঘুরতে হলে, পা-দু’খানি লোহার করতে হবে।’’ স্কুল থেকে ফিরে খানিক বিশ্রাম নিয়েই বেরিয়ে পড়তেন বিভূতিভূষণ। কখনও বসতেন ছ’আনি চৌধুরীদের ভাঙাবাড়ির দোলমাচার সামনে, কখনও ময়রা পাড়ার খোঁড়া গুরুর পাঠশালে। সেখানে ছাত্ররা সুর করে ধারাপাত পড়ত। শুনতে ভালবাসতেন বিভূতিভূষণ। এক এক দিন যতীন্দ্রনাথের আসতে দেরি হলে একাই বেরিয়ে পড়তেন। তখন সন্ধে হলে বোসপুকুর কিংবা নিশ্চিন্দিপুরের ফাঁকা, মেঠো রাস্তায় তাঁকে খুঁজতে বেরোতে হত। প্রায়ই খগেন বোসের বাড়ির সামনে কাঁঠালিচাঁপা বনের ধারে খুঁজে পাওয়া যেত বিভূতিভূষণকে। এ রকমই এক দিন হাঁটতে হাঁটতে বোড়াল পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন তিনি। রাজনারায়ণ বসুর বাড়ি দেখতে। আবার এক দিন বোড়াল থেকে ফেরার পথে রাজপুর বাজারে গঙ্গার ধারে এসে বিভূতিভূষণ বললেন, “এত দূর ঘুরে দেখে এলাম মন্দিরটার কাছে না বসলে, কর মশাই রাগ করবেন।” যতীন্দ্রনাথ প্রবল অবাক হলেন। কারণ সেই ব্যক্তি তখন প্রয়াত হয়েছেন। তবু বিভূতিভূষণ বললেন, “তাঁর দেহ নেই কিন্তু আত্মা আছে তাঁর কীর্তিগুলি ঘিরে, তুমি টের পাও না, আমি কিন্তু টের পাই।” যতীন্দ্রমোহনের লেখা থেকে পাওয়া যায়— “ভবিষ্যতে ‘দেবযান’ নির্মাতার তখনকার এই কথাগুলি মনে পড়্লে আজও দেহ রোমাঞ্চিত হ’য়ে ওঠে।”
ঠিক যেমন, ছ’আনি চৌধুরীদের ভাঙা বাড়ি থেকেই গড়ে উঠেছিল ‘কেদার-রাজা’র পটভূমিকা।
এখানেই শুরু বিভূতিভূষণের লেখালেখিও। ১৯২০ সালের জুন মাসে হরিনাভির দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ অ্যাংলো সংস্কৃত বিদ্যালয়ে পড়ানোর কাজে যোগ দিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। সেখানে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল যতীন্দ্রমোহনের। সে সময়ে কলকাতার এক প্রকাশক ‘ছয় আনা গ্রন্থাবলী’ নামে এক সিরিজ বার করত। তাদের গ্রন্থাবলি প্রকাশ শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দিয়ে। স্থানীয় লাইব্রেরি থেকে তেমনই একটি বই বিভূতিভূষণকে দিয়ে যতীন্দ্রমোহন প্রস্তাব করেছিলেন— ‘‘আসুন আপনাতে আমাতে এইরকম একটা উপন্যাস সিরিজ বের করা যাক।’’ তার পরে বিভূতিভূষণের নামে স্কুলের নোটিস বোর্ড, দেওয়াল, নারকেল গাছের গায়ে পোস্টার পড়ল। বাধ্য হয়ে গল্প লিখলেন বিভূতিভূষণ— ‘পূজনীয়া’। সে নামে অবশ্য বেরোয়নি। প্রকাশিত হয়েছিল ‘উপেক্ষিতা’ নামে।
সে-ই হল লেখার শুরু। তার পর আর কলম থামেনি। দু’চোখ ভরে জগৎকে দেখেছেন। দুনিয়ার পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছেন। এবং লিখেছেন।
প্রকৃতি প্রেমে মুগ্ধ আনন্দময় পুরুষটি ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ঘাটশিলায় মারা যান। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে। শ্বশুরবাড়ির দেশ ঝাড়গ্রামের মানুষেরা কি মনে রেখেছে বিভূতিভূষণকে? ঝাড়গ্রাম পাল্টেছে অনেকটাই। তাঁর শ্বশুরবাড়ির পুরনো বাসা ও ব্যারাক ভেঙে হয়েছে নতুন কমপ্লেক্স। থেকে গিয়েছে পুরনো ইঁদারা ও শিমূল গাছটা। তাঁর প্রিয় শাল গাছগুলোর কিছু এখনও আছে অনাদরে। তাঁর প্রিয় বাণীভবনের রাস্তাও পাল্টেছে অনেক।
এই পথে একা একা হাঁটতেন ‘পথের কবি’।
(তথ্যসূত্র:
১- আমাদের বিভূতিভূষণ, রমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৌসুমী পালিত, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ (১৯৯৭)।
২- আমার শিক্ষক বিভূতিভূষণ, আবিরলাল মুখোপাধ্যায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ (২০১০)।
৩- বিভূতিভূষণ রচনাবলী।
৪- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যা (দিবারাত্রির কাব্য): আফিফ ফুয়াদ (সম্পাদিত)।
৬- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্ধানে: রুশতী সেন (সম্পাদিত)।
৭- বিভূতিভূষণের অপ্রকাশিত দিনলিপি: সুনীলকুমার চট্টোপাধ্যায় (সম্পাদিত)।
৮- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ সাল।
৯- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯শে নভেম্বর ২০১৬ সাল।
১০- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ই জুলাই ২০১৬ সাল।
১১- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ই মার্চ ২০১৯ সাল।
১২- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ঠা মার্চ ২০১৯ সাল।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত