বাম আমলে কৃষকদের দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হতো। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তা পরে শোধ না করতে পেরে অনেকেই ডুবে যেতেন দেনার দায়ে। বেছে নিতেন আত্মহত্যার পথ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্যাণে এখন আর বাংলার কৃষকদের সেই দুর্দশা নেই। কৃষকদের স্বার্থে নতুন বছরের শুরুতেই ‘কৃষকবন্ধু’ নামে এক নয়া প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার বহু কৃষক উপকৃত হয়েছেন এই প্রকল্পে। নবান্ন সূত্রে খবর, তৈরি হয়েছে ৩৪ লক্ষ চাষির চেক।
কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, কৃষকবন্ধু প্রকল্পে গত ৩০ অগস্ট পর্যন্ত মোট ৪০ লক্ষ ৩ হাজার ৩৭৬ জন কৃষকের আবেদনপত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৯২ জনের চেক তৈরি হয়ে গিয়েছে।কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘চেক তৈরি হয়ে গেলে তা ফেলে রাখা হয় না। এটা যেহেতু একটা ক্রমান্বয়ে চলা পদ্ধতি, চেক বিলির আজকের হিসেবটা কালকেই বদলে যায়। এটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই ধরনের সাহায্য চাষিরা আগে কখনও পাননি।’
সরকারি তথ্য বলছে, মার্চ মাসে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার পর থেকে ২৭ মে পর্যন্ত কৃষকবন্ধু প্রকল্পে অনুদানের আবেদন গ্রহণ করা যায়নি। না হলে আবেদনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। কৃষকবন্ধু প্রকল্পের এটাই প্রথম বছর হওয়ায় ফি বছর কত আবেদন আসতে পারে তার ধারণা পেতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে।২০১৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকবন্ধু প্রকল্প ঘোষণা করেন। সে সময় বেশ কয়েকটি রাজ্য কৃষি-ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি স্থায়ী বন্দোবস্তের পথে হেঁটে এই প্রকল্প চালু করেন। লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর সরকার অনুরূপ একটি প্রকল্প চালু করেছিল। সে সময় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কটাক্ষ করেছিল তাদের প্রকল্পকে ‘কপি’ করেছে কেন্দ্র।
লোকসভা ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রথম জেলা প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে। সেদিনই তিনি সার্বিক ভাবে সব জেলাকে বলেছিলেন, ‘বৃষ্টি নিয়ে একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এটা কারও হাতে নেই। কিন্তু আপনারা দেখবেন চাষিদের চেক দিতে যেন দেরি না-হয়। চাষের সময় টাকাটা পেলে তাঁরা সেটা কাজে লাগাতে পারবেন।’ তখনও দক্ষিণবঙ্গের আকাশ দরাজ হয়নি। কিন্তু পরে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে চাষ শুরু করার ক্ষেত্রে ঘাটতি পুষিয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, সমানতালে চেক বিলি চলায় আবেদনকারী কৃষকদের সুরাহা হচ্ছে।
চাষের মরশুমে কৃষকবন্ধু প্রকল্পে চাষিদের হাতে দ্রুত চেক পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খরিফ মরশুম ফুরোনোর আগেই ৭২ শতাংশেরও বেশি আবেদনকারীর চেক তৈরি করে ফেলেছে কৃষি দফতর। জুন-জুলাইয়ের অনাবৃষ্টির ফাঁড়া কাটিয়ে কৃষিপ্রধান জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করা গিয়েছে বলে দাবি নবান্নের। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে এ বছর কৃষিজ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলা যাবে বলে আশাবাদী সরকার।