গত ১ সপ্তাহে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। নিজের বাড়ি ছেড়ে হোটেলে গিয়ে উঠেছে প্রায় ৫০ টিরও বেশি পরিবার। তারপরেও বিপর্যয় থামার যেন কোনো লক্ষণই যেন চোখে পড়ছে না বউবাজারে। মঙ্গলবারের পর এদিন বুধবার ভোরবেলা স্যাঁকরা পাড়া লেনে ফের ভেঙে পড়ল একটি বাড়ির সামনের অংশ। যদিও এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর মেলেনি।
বুধবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বউবাজারের ৭/১ স্যাঁকরা পাড়া লেনের একটি দোতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। মঙ্গলবার রাতে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয় কলকাতায়। তারপরই ফের বাড়ি ভাঙার ঘটনা ঘটল। উল্লেখ্য, এই বাড়িরই একটি অংশ ভেঙে পড়েছিল কয়েকদিন আগে। যদিও দুর্গা পিতুরী লেন, স্যাঁকরা পাড়া লেন-সহ গোটা বউবাজারের একাধিক এলাকা এখন কার্যত জনশূন্য। বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বুধবার ভোরের ঘটনায় তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই খবর।
১ সপ্তাহ আগে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গের জন্য টানেল বোরিং মেশিনের কাজ চলাকালীন বউবাজারে ভেঙে পড়ে বাড়ি। আতঙ্ক তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। তদন্তে নেমে বোঝা যায়, সুড়ঙ্গে জল জমে মাটির আলগা হয়েই বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বিপর্যয়ের দায় নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নতুন বাড়ি তৈরি এবং আপদকালীন আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রতি দেয়।
সেই অনুযায়ী বাসিন্দাদের হাতে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়াও হয়। কিন্তু ১ সপ্তাহ কেটে গেলেও আতঙ্ক এখনও কাটেনি। ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ক্রমাগত বাড়ি ভেঙে পড়েছে বা কোনও বাড়ি থেকে চাঙড় খসে পড়ছে। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্গা পিতুরী লেন, স্যাঁকরা পাড়া, গৌর দে লেন জুড়ে আতঙ্ক বিরাজমান।
অন্যদিকে খবর মিলেছে, এই ঘটনার মধ্যেই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বউবাজারের এক বাসিন্দার। মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় অঞ্জলি মল্লিক নামের অশীতিপর এক বৃদ্ধার। জানা গিয়েছে, বউবাজারের স্যাঁকরা পাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি ছিল। বিপর্যয়ের পর তাঁকে হোটেলে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু হোটেলের পরিবেশের সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিতে পারছিলেন না।
১ সেপ্টেম্বর থেকে আতঙ্কে দিন কাটছে বউবাজারের বাসিন্দাদের। একের পর এক ভেঙে পড়ছে বাড়ি। প্রাণে বাঁচলেও সারা জীবন ধরে তিল তিল করে যে বাড়ি বানিয়েছিলেন, মুহূর্তে তা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি কেউই। বছর ৮০-র বৃদ্ধা অঞ্জলি মল্লিকও ব্যতিক্রম ছিলেন না। স্যাঁকরা পাড়া এলাকায় থাকতেন তিনি। তাঁর বাড়িটি ছিল বেশ খোলামেলা। ওইরকম পরিবেশই পছন্দ করতেন বৃদ্ধা। কিন্তু বউবাজারে বাড়ি ভেঙে পড়ার পর অন্যদের মতো তাঁকেও স্থানান্তরিত করা হয় হোটেলে।
কিন্তু হোটেলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তিনি। মঙ্গলবার রাতে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালের তরফেই জানানো হয়, হোটেলেই মৃত্যু হয়েছে সেই বৃদ্ধার।