প্রথম ভাদ্রের পড়ন্ত বিকেল। যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে মোহন বাগান ফুটবলারদের গা ঘামানো তখন অন্তিম পর্বে। অদূরে হায়াত রিজেন্সি ক্রমশ ভরে উঠছে কৃত্রিম আলোয়। কোচ কিবু ভিকুনার তত্ত্বাবধানে চলছে সিচুয়েশন প্র্যাকটিস। মাঝমাঠে বল পেয়ে দুরন্ত টার্নিংয়ে হোসেবা বেইতিয়া কয়েক হাত ছিটকে দিলেন তাঁর মার্কারকে। তারপরেই মাপা থ্রু খুঁজে নিল চামোরো সিলভাকে। কিন্তু লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হলেন সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ স্ট্রাইকারটি। সঙ্গেসঙ্গে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বেইতিয়া বোঝাতে চাইলেন, ‘এই পাস থেকে গোল করতে পারলে না!’ চামেরোর প্রতিক্রিয়া, ‘ম্যাচে এরকম হবে না।’ বোঝাই যাচ্ছে আজ রিয়াল কাশ্মীরের বিরুদ্ধে জয়ে ফিরতে ঠিক কতটা মরিয়া মোহনবাগান।
কলকাতা লিগের দুটি খেলায় জয় নেই। সেই চাপ থেকে বেরোনোর জন্য কিবু এবং তাঁর চার স্প্যানিশ যোদ্ধার কাছে ডুরান্ড জয়ই আপাতত পাখির চোখ। সেই লক্ষ্যে শেষ ধাপে পৌঁছতে সালভা চামোরোদের আজ, বুধবার পেরোতে হবে রিয়াল কাশ্মীর নামের পাহাড়। গ্রুপের তিন ম্যাচে যারা একটা গোলও খায়নি। উল্টে করেছে পাঁচ গোল। তা মাথায় রেখে এ দিন সেট পিসের সঙ্গে বিপক্ষের রক্ষণ ভাঙার পাঠ দিলেন কিবু। পায়ের জঙ্গল থেকে বল বের করে আনার মুভ, দুই বা তিন টাচে বিপক্ষের গোলে বল পৌঁছনোর মন্ত্রের পাশে সেট পিস অনুশীলন করিয়ে রাখলেন জেসেবো বেইতিয়াদের। ঘণ্টা দুয়েক অনুশীলনের পরে কিবুর মুখ থেকে তার পরও বেরিয়েছে, ‘‘কাশ্মীর অত্যন্ত শক্তিশালী দল। শারীরিক ভাবেও খুব চাঙ্গা। তবে আমরাও তৈরি।’’
সবুজ-মেরুনের মাঝমাঠের ইঞ্জিন বেইতিয়া সুস্থ হওয়ায় কিবু বুকে জোর পেয়েছেন। বাকি তিন স্প্যানিশ ফুটবলারও তৈরি। কিন্তু কোন তিন জন কাশ্মীর-জয়ের জন্য নামাবেন, তা এখনও ঠিক করেননি মোহনবাগান কোচ। কারণ তাঁর দলের রক্ষণ এখনও তৈরি নয়। সে জন্যই সম্ভবত তিনি বললেন, ‘‘রক্ষণ নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা করছি। তা জমাট করার চেষ্টা চলছে।’’ যা থেকে স্পষ্ট নক-আউট ম্যাচে রক্ষণ শক্তিশালী করেই গোলের জন্য ঝাঁপাতে চান পালতোলা নৌকার কাণ্ডারি। কথায় স্পষ্ট, রিয়াল কাশ্মীর সম্পর্কে পড়াশোনা শেষ তাঁর। সাত মাস আগে আই লিগের এই ম্যাচে হেরেছিল মোহনবাগান। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই কিবু বললেন, ‘‘ওই ম্যাচটা ইউ টিউবে দেখেছি। ওদের প্রায় পুরো দলটাই আছে। আমাদের দলে চারজন ছাড়া সবাই নতুন। ফলে এটা অন্য ম্যাচ। যুবভারতীতে রাতের খেলায় আবহাওয়ার সুবিধাও পাব।’’
চলতি মরশুমে মোহন বাগান এখনও পর্যন্ত ছ’টি গোল করেছে। এর প্রত্যেকটি এসেছে স্প্যানিশ ফুটবলারদের পা কিংবা মাথা থেকে। ভারতীয়রা এখনও পর্যন্ত নিষ্প্রভ। তাই রিয়াল কাশ্মীরের চ্যালেঞ্জ টপকে ডুরান্ড কাপ ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য নিজেদের অবশ্যই নিংড়ে দিতে হবে সুরাবুদ্দিন-সাহিলদের। প্রতিপক্ষের বিদেশিরা অর্থাৎ বাজি আর্মান্ড, অ্যারন কাটেবে, লাভডেরা অঘটন ঘটাতোই পারেন। এছাড়া রয়েছেন চেস্টারপল লিংডো এবং সুভাষ সিংয়ের মতো ফুটবলার। কোচ ডেভিড রবার্টসন এই দু’জনকেই উইংয়ে ব্যবহার করছেন। মোহন বাগানের দুই সাইড ব্যাক আশুতোষ মেহতা এবং গুরজিন্দর মোটেই ছন্দে নেই। সিঙ্গল স্ট্রাইকারে দানিশ ফারুককে ব্যবহার করছেন স্কটিশ কোচ। উল্লেখ্য, অনুশীলনের শেষ দিকে পেনাল্টি মারতে দেখা গেল মোরান্তে-বেইতিয়াদের
ডেভিড রবার্টসন যে দল নিয়ে আজ ফাইনালে ওঠার লড়াইতে নামবেন, সে দলের ছয় জন ফুটবলার কাশ্মীরি। পাঁচ জন শ্রীনগরের, এক জন জম্মুর। অনুশীলনের পরে স্কটিশ কোচ বলে দিলেন, ‘‘মাত্র চার দিন অনুশীলন করে এখানে এসেছি। ডুরান্ড কাপকে প্রাক-মরসুম প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে দেখছি। সেমিফাইনালে উঠেছি, এটাই বড় ব্যাপার। ফাইনালে উঠলে সেটা হবে বোনাস। ছেলেদের বলেছি আনন্দ করে খেলতে।’’ যা শুনলেই বোঝা যায় চাপ কাটাতে এটাই আপাতত অস্ত্র কাশ্মীর কোচের। অনুশীলনে অবশ্য সেটা বোঝা যায়নি। টাইব্রেকার অনুশীলন ছাড়াও সেট পিসের নানা কৌশল অনুশীলন করিয়েছেন। দানিশ ফারুকদের দলের গড় উচ্চতা ছয় ফুট। সেই সুবিধাটা তারা পাবে আজকের ম্যাচে। রবার্টসন বলছেন, ‘‘মোহনবাগানের কোনও ম্যাচ দেখিনি। আর আগে কবে কী হয়েছে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।’’