দেশের গাড়ি-বাড়ি- বাজার বোঝে হাতের তালুর মতো সেরকম এক কেউকেটা দাদার সাথে কথা হচ্ছিল। সেই গুজ্জু দাদা মুম্বাইয়ে এক দিনে দশ কোটি ও কামিয়েছে বাজার বুঝে। বলে গাড়ি শিল্পে মন্দাটা ফ্যাক্টর না ‘বাংগালি বাবু’। ওটা পৃথিবী জুড়ে চলছে। ভয়টা চাকুরিজীবীদের সাবধানী হওয়ায়৷ মাথায় ঢুকে যাওয়া, “আমাদের কোন ভয় নেই তো?”
মানে, যে নতুন গাড়ি সস্তায় কিনবে ভাবছিল, সে কিনছে না। আবার ওলা-উবরের টাকাটা ও বাঁচানোর চেষ্টা করছে ট্রেনে-মেট্রোতে চেপে অফিস গিয়ে। কারণ? কারণ তার মাথায় ঢুকে গেছে যে তাঁর চাকরিটা বাঁচানোটা এখন লড়াই, চাকরি করে ইনক্রিমেন্ট পাওয়াটা না। গোটা দেশে কস্ট-কাটিং চলছে। সে মেদহীন কর্পোরেট তো পুঁজিবাদের লক্ষন হবেই। কিন্তু সেই ডায়েট প্ল্যানটা একদিন যদি বদলে একবেলা খাবার নিদান হয়, সেটাকে কী বলবেন? আমাদের কোন ভয় নেই তো?
শেয়ার বাজারে টাকা লাগালে বুঝবেন। ১৭লাখ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে মুম্বাই শেয়ার বাজারে। এখনো রক্তক্ষরণ চলছে৷ এটার ফল ভোগ করবে কারা? কাদের পিএফ, পেনশেনের টাকা বাজারে খাটানো হবে?
রেস্টুরেন্টে সেরকম লোক হচ্ছেনা। জোম্যাটো, সুইগির মতো কোম্পানিকে ডিরেজিস্টার করছে তারা কারণ রেঁস্তোরায় মাছি তাড়াতে হচ্ছে। ওদিকে সুইগি, জোম্যাটোতে লাভ বিশেষ না হলে ও ডেলিভারি বয়েদের লাইন লেগে আছে চাকরির তাগিদে। এমএ, বিএ পাশ ছেলে ও ঢুকে পরছে। র্যাপিডো, ওলা বাইক এর পাশাপাশি ফুড ডেলিভারি করে সংসার চলছে।
মুম্বাইয়ে তাজ হোটেল চেনেন তো? মানে যেখানে কাসাব ঢুকে ২৬/১১ এর সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল৷ সেই তাজ হোটেলের বেশ কিছু সম্পত্তি বেচে দেওয়া হচ্ছে। টাটা কস্ট কাটিং শুরু করেছে। এতে আপনার চালে ডালে কোন পরিবর্তন নেই কিন্তু বৃদ্ধি থেমে যাচ্ছে, বিনিয়োগ আসছে না, পুঁজিবাদ মার খেতে চলেছে সেটা সবচেয়ে আগে আঁচ করে হোটেল শিল্প। তাজে বুকিং কমছে, আগের মতো টাকা ওড়ানো কমছে মানে বিলাশবহল জীবনযাপন করার লোক কমছে। শিল্প পরছে। আমাদের কোন ভয় নেই তো?
টাকার দাম রেকর্ড কমেছে, শেয়ার বাজার নিচের দিকে, বৃদ্ধি আর জিডিপি অসুস্থ। বাজাজের মতো কোম্পানির মালিক বলছে দেশের অর্থনীতির হাল খারাপ। মানে লোক কমিয়ে দেওয়া হবে। ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখা হবে। আমাদের কোন ভয় নেই তো?
বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেলি, তা এই ভয়ে ভয়ে অর্থনীতি যখন চলছে, মানুষের চাকরি যাওয়ার যখন ভয়, মুদ্রাস্ফীতির যখন ভয়, রিসেশনের ভয়, তা মানুষ ওসব পেটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত কেন?
গুজ্জু দাদা আমার ফোনের মধ্যেই পিক করে একটা আওয়াজ করে, গলা ঝেড়ে বললো, বাংগালি বাবু আপ নিউক্লিয়ার এট্যাক দেখেছেন? সিরি রামচন্দর জী কে দেখেছেন? বাংলা ইসলামিক স্টেট হো জায়েগা তো কী হবে ভেবেছেন? মোহামেডান লোগ ইতনে সাল বিনা হেলমেট ঘুমতা থা, ধরম কে না পে যা মন মে আয়ে করতা থা, এসব বদলে গেলে কিরকম দেখতে ভেবেছেন? পাকিস্তান সত্যি অমৃতসর দিয়ে এদেশে এসে দিল্লি দখল করলে কি হবে ভেবেছেন? কাশ্মীর ভারত থেকে আলাদা হয়ে গেলে কেমন লাগে ভেবেছেন? অব তোল মোল কে দেখিয়ে কোন ভয়টা বেশী লাগছে।
আমরা যা এখনো দেখে উঠতে পারিনি, তাই নিয়ে আমাদের রোমাঞ্চ বেশী থাকে। আমরা যা দেখে ফেলেছি তা নিয়ে ভয়, সমীহ, আশঙ্কাকে ও ছাপিয়ে যায় অজানাকে জানার তাগিদ। স্বচক্ষে দেখার রোমাঞ্চ বা সেই নাম না জানা জুজু৷ যে রোজ আমাদের অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে দিচ্ছে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত