সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে দিন কয়েক আগেই বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের। বিলোপ ঘটেছে ৩৭০ ধারার। আর তারপর থেকে কার্যত ‘গৃহবন্দী’ বা ‘তালাবন্ধ’ গোটা উপত্যকা। এমনটাই জানাচ্ছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রবীণ সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা বা সে রাজ্যের প্রাক্তন আইএএস অফিসার তথা জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্ট পার্টির নেতা শাহ ফয়জলরা। আবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো বিদেশি সংবাদ সংস্থাদের তরফেও বলা হচ্ছে, ‘কাশ্মীর উপত্যকাটিকে কার্যত গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। হাজার হাজার ভারতীয় সেনা রাস্তা আটকে, স্কুল-কলেজ বন্ধ করে, সাধারণ মানুষের বাড়ির ছাদ দখল করে নিয়েছে। ইন্টারনেট, মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন বন্ধ, ফলে বাইরের দুনিয়ায় যোগাযোগের কোনও উপায় নেই।’ তবে এ তো গেল উপত্যকার অন্দরের কথা। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরে বাড়ি ফিরতে পারেননি দিল্লীতে পড়তে আসা কাশ্মীরের অনেক ছাত্রছাত্রীও। গতকাল ঈদের দিনে রাজধানীর বুকে জমায়েত করেন তাঁরা। যেখানে যোগ দিলেন রাজধানীর বাসিন্দারাও।
‘আসলে কাশ্মীরে কোনও ইদ উদ্যাপন হচ্ছে না। কাশ্মীরে কোনও ইদ উদ্যাপন হতে পারে না। কিছু উদ্যাপন করার নেই। ছোট্ট ভাইঝিটা সবে কথা বলতে শিখেছে। ইদের দিনে ওর সঙ্গেও কথা বলতে পারিনি।’ শাকিরা আমিনের মুখ থেকে প্রায় গুমরে গুমরে বেরিয়ে আসে কথাগুলো। আরেক ছাত্র জুবের রশিদ বললেন, ‘সকাল থেকে দিল্লীর বন্ধুদের ফোন করছিলাম। ঈদ মুবারক বলছিলাম। বেশ একটা ঈদ-ঈদ ভাব আনার চেষ্টা করছিলাম। হল না। নিজেকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছিলাম আসলে। সাত দিন আম্মি-আব্বুর সঙ্গে কথাই হয়নি।’ দিল্লীতে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আসা জুবেরের বাবা জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে কাজ করেন। তিনিও বারামুলা থেকে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। শাকিরার কথায়, ‘বাধ্য না-হলে কি ঈদের দিনে যন্তরমন্তরের ফুটপাথে এসে বসি?’ শাকিরা-জুবেরদের দাবি, ‘আমরা ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা বলতে চাই না। সংবিধানে কী রয়েছে, সংসদে কী হয়েছে, আদালতে কী হবে, কিচ্ছু জানি না। শুধু বাড়িতে একটু কথা বলার সুযোগ করে দিন। ফোনগুলো চালু করে দিন। এই ‘কমিউনিকেশন ব্ল্যাকআউট’ তুলে দিন।’
প্রসঙ্গত, দিল্লীতে পড়াশোনা করতে আসা এই কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদেরই কয়েক জন গতকাল সকলকে জড়ো করেছিলেন। পুলিশের অনুমতি নিয়েই। পরবের দিনে আনন্দ নয়, দুঃখ ভাগ করে নিতেই। পুলিশের চিন্তা ছিল, বিক্ষোভ না শুরু হয়ে যায়! কিন্তু সেসব কিছুই হল না। যন্তরমন্তরের ফুটপাতে তখন সাদা কাপড়ে কালো রঙে জম্মু-কাশ্মীরের মানচিত্র। শুধুই জম্মু-কাশ্মীর। তার এক পাশে লেখা ‘আনহ্যাপি’ (বিষণ্ণ), অন্য পাশে লেখা ‘এগজাইলড’ (নির্বাসিত)। কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের ভিড়টাকে ঘিরে লোহার ব্যারিকেড। সতর্ক খাকি উর্দির পুলিশ। কালাশনিকভ উঁচিয়ে আধাসেনা। এরই মধ্যে দুপুর গড়াতে হাজির হয় বিরিয়ানি-কাকোরি কাবাব-শাহি টুকরা-ফিরনি। আসলে দিল্লীর বহু মানুষই খাবার নিয়ে চলে এসেছিলেন এই কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁদের অনেকই কিন্তু কাশ্মীরি নন। সকলে মুসলিমও নন। লেখিকা অরুন্ধতী রায় যেমন শুরু থেকেই হাজির ছিলেন। আবার খাবার পরিবেশনে হাত লাগান সমাজকর্মী হর্ষ মন্দারও।