দিন কয়েক আগেই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের। তাই ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এটাই ছিল প্রথম উপত্যকার প্রথম ঈদ৷ যা গোটা রাজ্যজুড়ে পালিত হল কার্যত ‘গৃহবন্দী’ ও ‘তালাবন্ধ’ পরিস্থিতিতে। আসলে কড়া পাহারায় মোটামুটি ‘শান্তি’তে ঈদ পালিত হলেও উৎসবের লেশটুকু ছিল না কাশ্মীরে।
শ্রীনগরের প্রধান মসজিদটি ছাড়া অন্য মসজিদগুলিতে গতকাল সকালে ঈদের নমাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ঈদগা পরিষ্কার করে জমায়েতের বন্দোবস্তও করেছিল প্রশাসন। ১৪৪ ধারার মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ সেখানে নামাজ পড়ে আসেন। তবে পুরোটাই হয় দাঙ্গা-রোধী পোশাক পরা রাইফেলধারী জওয়ানদের কড়া নজরদারিতে। যার ফলে নমাজিদের অভিব্যক্তির অস্বস্তি নজর এড়ায়নি।
পুরনো শহরের কয়েক জায়গায় নামাজের পরে ছোটখাটো বিক্ষোভ, সড়কে মোতায়েন আধাসেনাদের নিশানা করে পাথর ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা। কিন্তু কাঁদানে গ্যাস ও ছররা বন্দুকেই তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে সিআরপি এবং পুলিশ। শৌরা এলাকায় কয়েকশো মহিলা ভারত-বিরোধী স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে ফেস্টুন হাতে কিছু শিশু-কিশোরকেও দেখা যায়। যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রোহিত কানসালের কথায়, ‘এ তো কাশ্মীরে নতুন নয়!’
তবে মোটের ওপর পুলিশকর্তারা খুশি। কারণ বিক্ষোভ থামাতে একটিও বুলেট খরচ করতে হয়নি। স্বস্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের আগে থেকে কাশ্মীরিদের ঘরবন্দী করে বড়সড় বিক্ষোভ এড়ানো গিয়েছিল। ঈদের জন্য নিরাপত্তা ঢিলে হলে বিক্ষোভ মাত্রাছাড়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিলই। তবে দিন সাতেকের কার্ফুর ফাঁসে উপত্যকাবাসীর এখন পেটের দায়ই বড় দায় হয়ে উঠেছে। সেই ফাঁস আলগা হতে রসদ সংগ্রহেই ব্যস্ত থেকেছেন মানুষ।
তবে ঈদের নমাজের সময় পেরোতেই ফের কঠোর হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্রে কাঁটাতারের ব্যারিকেড ওঠেনি। মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগফেরেনি। বাইরে থাকা স্বজনদের গলা একটি বার শোনার জন্য সকালেও ‘হেল্পলাইন’ বুথে লম্বা লাইন। যেখানে ছেলের ‘ঈদ মোবারক’ শুনে কেঁদে ভাসিয়েছেন মা। সংবাদমাধ্যমও স্তব্ধ। যে দু-একটি সংবাদপত্র দেখা গিয়েছে, সেগুলিতে বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিলেরই বিজ্ঞাপন।
গতকাল দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতির বসতবাড়ি ছিল শুনশান। আগে যেখানে ঈদ হলেই দুই বাড়ি গমগম করত অনুগামী-স্বজনদের সমাগম ও খাতিরদারিতে। জানা গেছে, সরকারি অতিথি ভবন ‘হরি নিবাস’-এই রাখা হয়েছে ওমরকে। আর কয়েক কিলোমিটার দূরে চশমে শাহির অতিথি নিবাসে মেহবুবাকে। সরকারি মুখপাত্র জানান, ওমর ও মেহবুবার কাছে দু’জন মৌলবি পাঠানো হয়েছিল নমাজ পড়াতে। অন্যদিকে, গৃহবন্দী ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি কাউকে।