“আমার রবি কাকু সুপুরুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সব সময় মনে হয় তিনি যৌবনের চেয়ে বৃদ্ধ বয়সে বেশি সুন্দর মানুষে পরিণত হন।” – বাকিগুলো লিখেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী (১৮৭৩-১৯৬০)।
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে যখন সবেমাত্র আধুনিকতার বাতাস বাড়ির প্রাচীর ডিঙিয়ে অন্দরে প্রবেশ করতে চাইছে সে সময় হিন্দু পরিবারের সদস্যরা বাইরে আচকান এবং জোব্বা পরতেন। ইন্দিরা লিখেছিলেন,
“আচকান আর জোব্বা ছেঁটে ছোট করা হয়। নারী-পুরুষের ছিল কুর্তা এবং পায়জামা। রবি কাকু বাইরে যাবার সময় ধূতি এবং চাদর ব্যবহার করতেন। কখনো সঙ্গে নিতেন শাল। জোব্বা তিনি পরিহার করে চলতেন।”
সেকালে বিশেষ কোথাও বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য মাথায় এক ধরনের পাগড়ি ব্যবহারের চল ছিল। ঠাকুর বাড়ির পুরুষেরাও বিভিন্ন পাগড়ি ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও বিভিন্ন সময় পাগড়ি মাথায় দিতে দেখা গেছে। ছোট এবং শক্ত এই পাগড়িগুলোকে ‘পীর-আনি’ পাগড়ি বলা হতো। ইন্দিরা দেবীর মা জ্ঞানদা দেবী এই পাগড়ি সুনিপুণভাবে ভাঁজ করতে পারতেন। তিনি পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের পাগড়ি ব্যবহারের উপযোগী করে দিতেন।
ঠাকুর পরিবারে এশিয়ার অন্যান্য দেশের কিছু ফ্যাশন প্রচলিত ছিল। কবির চুল বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর শেষ বয়সের কিছু আলোকচিত্রে। তিনি দীর্ঘদেহী ছিলেন। দৈহিক সৌন্দর্যচর্চা সেকালে ঠাকুর বাড়িতে প্রচলিত ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিমলাতে উডফিল্ড নামে একটি বাড়িতে বেশ কিছুদিন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। কাকা ও ভাইঝির নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এই বয়সের পার্থক্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনি। ইন্দিরা দেবী লিখেছিলেন,
“আমি মনে করি ঠিক তখন তাঁর চামড়ায় পরিবর্তন এসে রুক্ষতা ভর করেছিল এবং তাঁর থাক থাক চুল এবং সাদা দাঁড়ি তাকে এনে দিয়েছিল ঋষী অথবা বৃদ্ধ ভবিষ্যত দ্রষ্টার সৌন্দর্য। সমগ্র ভারতে কবি এমন এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যাঁর জীবনের নানা বাঁক অনুভব করা যায়।”
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভাই – ভাইঝিদের গান শোনাতেন। হিন্দি গান শোনাতেন কৌতুককর ভঙ্গিমায়। তাঁর সঙ্গীতের লয় এমনভাবে বেড়ে যেত যে মনে হতো তাঁর ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে। যখন তিনি কোন ইংরেজি গান সঠিক উচ্চারণসহ গাইতেন তখন চমৎকার লাগত। যেমন ‘উড ন্যষ্ট ইউটেল মি মর্নিং ডার্লিং’ কিংবা ‘গুড বাই সুইট হার্ট গুড বাই’ ইত্যাদি। ছোট বেলার সেই গান ইন্দিরা দেবী হৃদয়ঙ্গম করতে না পারলেও তিনি যখন নিজ বাড়িতে ফিরে যান তখন লরেটো কনভেন্ট স্কুলে ইংরেজি গানের জন্যে ভর্তি হন। সে সময় থেকেই তিনি সঙ্গীত বুঝতে শুরু করেন। তিনি কবির সঙ্গে একত্রে পিয়ানো বাজাতেন।
ইন্দিরা দেবী তাঁর স্মৃতিকথায় এ সব লিখেছেন। তিনি লিখেছিলেন,
“কাকু আজীবন আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত এবং চিত্রকলা শেখার জন্যে উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন। তাঁর শেষ জীবনের প্রান্ত ভাগে এসে সেই চিত্রকলাকে প্রাণপণে আকঁড়ে ধরেন নিজস্ব চিন্তাধারা দিয়ে। চিত্রকলার কিছু আদিরূপ অঙ্কনে তিনি আমাদের নিয়োজিত করেন। যেগুলোকে বলা যায় মেয়েলী ধাঁচের কিছু চিত্র আঁকা চর্চা।”
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিয়ের দিন ঠাকুর বাড়ির জামাতা সারদা প্রসাদ মারা যান। এরপর ঠাকুর পরিবারের কেউই জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাননি। রবীন্দ্রনাথ তখন ২৭ বছরের যুবক। পিতার আদেশে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে শিলাইদহে আসতে হয়। এখান থেকে ইন্দিরা দেবীকে সর্বোচ্চসংখ্যক চিঠি লেখেন কবি। এই চিঠিগুলোর কথা ইন্দিরা দেবীর বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে জানা যায়। কাকুর সঙ্গে মৌসুরী ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন,
“ভ্রমণের সময় একদিন কীভাবে একজন সত্যিকার গৃহিণীর মতো বাথরুমের বেসিন পরিস্কার করেছিলাম। গোলাপ জলের দেশ গাজিপুরেও আমরা বেশ কিছুদিন ছিলাম। সিমলাতে কাকুর সাথে দীর্ঘ সময় কাটানো নিয়ে এমন সব মনোরম ঘটনা রয়েছে যেগুলো লিখতে গেলে এক একটা অক্ষর ছবি হয়ে উঠতে চায়। কাকুর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যের মধ্যে আরো একটি ভ্রমণ স্থলের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে। জায়গাটির নাম কারওয়া। সেখানে কিছুদিন বাংলোর বাইরে সমুদ্র দেখে আনন্দমুখর দিন কাটিয়েছিলাম।”
সঙ্গীতশিল্পী, লেখক ও অনুবাদক ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী।
১২৮০ বঙ্গাব্দের ১৫ পৌষ (সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ) তারিখে ইন্দিরা দেবী তাঁর পিতার কর্মস্থল ভারতের তৎকালীন বোম্বাই প্রদেশের (অধুনা মহারাষ্ট্র) বিজাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন লেখক, সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর মাতা জ্ঞানদানন্দিনী দেবীও ছিলেন একজন বিদূষী নারী। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই সন্তান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী দুজনেই ছিলেন কৃতি ব্যক্তিত্ব। ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ‘সবুজপত্র’সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর স্ত্রী। চিন্তাচেতনা ও আদর্শগত দিক থেকে ইন্দিরা দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাবশিষ্যা। সর্বসাধারণের নিকট তিনি ‘বিবিদি’নামেও সমধিক সুপরিচিত ছিলেন। ইন্দিরা দেবী অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। সঙ্গীত বিষয়েও তার জ্ঞান ছিল অগাধ। রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতার ও রচনার তিনি ছিলেন দক্ষ অনুবাদক। রবীন্দ্রনাথও তার অনুবাদ পড়ে সবসময় সন্তোষ প্রকাশ করতেন। ইন্দিরাই প্রথম তার ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন।
ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী তাঁর পাঁচ বৎসর বয়সে, অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে মায়ের সাথে বিলেতে যান। দেশে ফেরার পর ১৮৮১ সালে প্রথমে সিমলার অকল্যান্ড হাউজে এবং পরে কলকাতার লোরেটা হাউজে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি এন্ট্রান্স ও পরে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৯২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে তিনি ‘পদ্মাবতী’ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তিনি মার্টিনিয়ার স্কুলের একজন শিক্ষয়িত্রীর কাছে ফরাসি ভাষা শিখেন। এই সময় স্লেটার কাছে পিয়ানো ও মনজাটোর কছে বেহালা বাজানো শিখেন। এরপর ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিকের ইন্টারমিডিয়েট থিয়েরি পরীক্ষায় পাস করে ডিপ্লোমা লাভ করেন এবং বাদ্রিদাস মুকুলের নিকট উচ্চাঙ্গসঙ্গীত (কণ্ঠ) শিক্ষা করেন।
ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী অনুবাদক হিসেবে অল্পবয়সেই খ্যাতি অর্জন করেন। কৈশোরে তিনি রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত ও মাতা জ্ঞানদানন্দিনী সম্পাদিত বালক পত্রিকায় রাস্কিনের রচনার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। পরে ফরাসি শিখে তিনি রেনে গ্রুসের ভারতবর্ষ, পিয়ের লোতির কমল কুমারিকাশ্রম এবং মাদাম লেভির ভারতভ্রমণ কাহিনী অনুবাদ করেন। রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধসহ জাপানযাত্রীর ডায়রী-র ইংরেজি অনুবাদও তিনি প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে বামাবোধিনী, বঙ্গলক্ষ্মী, সাধনা, পরিচয়, সবুজপত্র প্রভৃতি পত্রিকায় সঙ্গীত ও সাহিত্যবিষয়ে তাঁর অনেক মৌলিক রচনা প্রকাশিত হয়। বঙ্গনারীর শুভাশুভ বিষয়ে তাঁর মতামত ‘নারীর উক্তি’ নামক প্রবন্ধে বিধৃত হয়েছে। ইন্দিরা দেবী রবীন্দ্রসঙ্গীতে এবং পিয়ানো, বেহালা ও সেতারবাদনে পারদর্শিনী ছিলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি রচনা তাঁর এক অমর কীর্তি। ‘মায়ার খেলা’, ‘ভানুসিংহের পদাবলী’, ‘কালমৃগয়া’ প্রভৃতিসহ আরও দুশো রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি রচনা এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের বহু স্বরলিপি গ্রন্থ তিনি সম্পাদনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় এই ভাইঝির কণ্ঠধৃত সুরে রবীন্দ্রনাথ অনেকগুলি গানও রচনা করেছেন। মহিলাদের সঙ্গীতসঙ্ঘের মুখপত্র আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকার তিনি অন্যতম যুগ্ম সম্পাদিকা ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে যুক্তভাবে লিখিত হিন্দুসঙ্গীত তাঁর সঙ্গীতচিন্তার পরিচায়ক। তাঁর নিজের রচিত কিছু গান স্বরলিপিসহ সুরঙ্গমা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর লেখা চিঠি নিয়েই আমাদের বাংলা সাহিত্যে গড়ে উঠেছে হীরকোজ্জ্বল পত্রসাহিত্য। অনেক গবেষকদের ধারণা, জীবনের একটা সময় তিনি সবচেয়ে বেশি চিঠি লিখেছিলেন তরুণী ভাইঝি ইন্দিরা দেবীকে, বাংলা সাহিত্যে এসব চিঠির স্থান চিরকালীন। পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় তার এই পত্রগুচ্ছের অনেক অংশই কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। হয়তো সেই কারণেই বইটির নাম ছিন্নপত্র।
সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যে চিঠিপত্রের গুরুত্ব তেমন না হলে কেউ কেউ চিঠির যথাযথ ব্যবহারে এগিয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ও প্রমথ চৌধুরীর শৈল্পিক প্রেমপত্রাবলীর কথা এখানে উল্লেখ করতেই হবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে ১৮৯৯ সালে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ১৯৪১ সালে প্রমথ চৌধুরীর সাথে শান্তিনিকেতনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।এখানে এসে সঙ্গীতভবনে নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষাদান শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুবনমোহিনী পদক লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
শান্তিনিকেতনে ইন্দিরা দেবী ‘আলাপনী মহিলা সমিতি’ প্রতিষ্ঠা ও তার মুখপত্র ঘরোয়া প্রকাশ করেন। মহিলা কল্যাণে গঠিত ‘বেঙ্গল উইমেন্স এডুকেশন লীগ’, ‘অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স’, ‘হিরণ্ময়ী বিধবা আশ্রম’ ইত্যাদি সংগঠনের সভানেত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৫৬ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন।
ইন্দিরা দেবীর কয়েকটি মৌলিক রচনা হলো: শ্রুতি স্মৃতি, রবীন্দ্রসঙ্গীতে ত্রিবেণী সঙ্গম (১৯৫৪) ও রবীন্দ্রস্মৃতি (৫ খন্ড, ১৯৫৯)। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: নারীর উক্তি (১৯২০), বাংলার স্ত্রী-আচার (১৯৫৬), স্মৃতিকথা, পুরাতনী (১৯৫৭) ও গীতপঞ্চশতী। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ভুবনমোহিনী’ স্বর্ণপদক, ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি এবং ১৯৫৯ সালে রবীন্দ্রভারতী সমিতি প্রথমবারের মতো ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’-এ ভূষিত করে।
ঠাকুরবাড়ির নব জাগরণের নাম ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পরম স্নেহের পাত্রী। ইন্দিরা যিনি সকলের কাছে ‘বিবিদি’রূপে পরিচিত ছিলেন তিনিই ছিলেন তাঁর প্রথম যুগের গানের ভাণ্ডারী। তাঁর রচনা থেকে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁদের পরিবারের নানা তথ্য যেমন জানা যায়। তেমনই জানা যায়, তাঁর নপিসিমা স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা সরলা দেবীর সঙ্গে তাঁর হরিহর-আত্মা সম্পর্কের কথা। এই স্মৃতিকথন ও আরও কিছু চিঠিপত্রের উপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে ‘দেন সিঙস্ মাই সোল- রিফ্লেকশন অন মেমোরিজ ফ্রম ইন্দিরা দেবী ও সরলা দেবী’।
ইন্দিরা দেবী চৌধুরীরানীকে আরেক পত্রে রবীন্দনাথ বলেন,
‘‘সেই ছেলেবেলায় যখন আরব্য-উপন্যাস পড়তুম, সিন্ধবাদ নানা নূতন দেশে বাণিজ্য করতে বাহির হত, ভৃত্য-শাসিত আমি তোষাখানার মধ্যে রুদ্ধ হয়ে বসে বসে দুপুর বেলায় সিন্ধবাদ সঙ্গে ঘুরে বেড়াতুম, তখন যে আকাঙ্খাটা মনের মধ্যে জন্মেছিল সেটা যেন এখনো বেঁচে আছে–এই বালিচরে নৌকো বাঁধা দেখলে সেই যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। ছেলেবেলায় যদি আরব্য-উপন্যাস রবিনসন ক্রুসো না পড়তুম, রূপকথা না শুনতুম, তা হলে নিশ্চয় বলতে পারি ঐ নদীতীর এবং মাঠের প্রান্তরে দূর দৃশ্য দেখে ঠিক এমন ভাব মনে উদয় হত না–সমস্ত পৃথিবীর চেহারা আমার পক্ষে আর-এক রকম হয়ে যেত।’’
আর একটি পত্রে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেন,
“ছেলেবেলায় রবিনসন ক্রুসো পৌলভর্জিনি প্রভৃতি বইয়ে গাছপালা সমুদ্রের ছবি দেখে মন ভারী উদাসীন হয়ে যেত–এখানকার রৌদ্রে আমার সেই ছবি দেখার বাল্যস্মৃতি ভারী জেগে ওঠে। এর যে কী মানে আমি ঠিক ধরতে পারি নে, এর সঙ্গে যে কী একটা আকাঙ্খা জড়িত আছে আমি ঠিক বুঝতে পারিনে–এ যেন এই বৃহৎ ধরণীর প্রতি একটা নাড়ীর টান।”
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ১৯৬০ সালের ১২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
(তথ্যসূত্র:
১- রবীন্দ্রস্মৃতি, ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা (২০১৯)।
২- বাংলাপিডিয়া।
৩- উইকিপিডিয়া।
৪- https://m.risingbd.com/art-literature/news/66284/%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE_%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%B0_%E0%A6%9A%E0%A7%8B%E0%A6%96%E0%A7%87_%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত