১৯৭১ সালের শেষ দিন। দেশবাসী যখন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে তৈরি সেই সময়ই ভারতের সমস্ত সংবাদপত্রে আলোড়ন তোলে একটাই খবর। ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা, ভারতের মহাকাশ গবেষণার প্রাণপুরুষ বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের রহস্য মৃত্যু।
কেরালার কোভালামের সরকারি রিসর্টে সারাভাইয়ের নিথর দেহ উদ্ধার হয় তাঁরই পছন্দের ঘর থেকে। শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই। মৃত্যুর কারণ অজানা। ৫২ বছরের সুস্থ, তরতাজা মানুষটার মৃত্যু কারণ আজও রহস্যই রয়ে গিয়েছে দেশবাসীর কাছে।
ডঃ বিক্রম আম্বালাল সারাভাই। তাঁকে ভারতের ‘অন্তরীক্ষ গবেষণার জনক’ বলা হয়। তাঁকে সম্মান জানিয়েই ঐতিহাসিক চন্দ্রযাত্রায় ‘বিক্রম’ নামটা যোগ করেছে ইসরো। ল্যান্ডার তৈরি হয়েছে প্রয়াত বিক্রম সারাভাইয়ের নামেই। পদার্থবিদ, গবেষক, উদ্ভাবক ডঃ বিক্রম সারাভাইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ ১২ অগস্ট তাঁর জন্মদিনকে সেলিব্রেট করছে গুগল ডুডল।
১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে আল্পস পর্বতের উপর এয়ার ইন্ডিয়ার ১০১ বিমান ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ভারতের পারমাণবিক গবেষণার জনক ডক্টর হোমি জাহাঙ্গির ভাবার। এই মৃত্যুকেও অন্তর্ঘাত বলে দাবি করেছিল অনেক মহলই। এর পর ১৯৭১ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার পথিকৃৎ ডঃ বিক্রম সারাভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যু। অনেকেই দাবি করেছিলেন বিজ্ঞানী হোমির মতোই অন্তর্ঘাতের শিকার হয়েছিলেন বিক্রম সারাভাই। তবে প্রমাণ নেই। নেই সুনির্দিষ্ট তথ্যও।
আমদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাই। ১৯১৯ সালের ১২ অগস্ট। গুজরাটের বর্ধিষ্ণু সারাভাই পরিবার তখন বেশ জনপ্রিয়। শিল্পপতি শেঠ আম্বালাল সারাভাই মহাত্মা গান্ধীর একনিষ্ঠ ভক্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামে এই পরিবারেরও অবদান রয়েছে। বিক্রমের দিদি মৃদুলা সারাভাই স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। তবে বিক্রমের আকর্ষণ ছিল অন্য জায়গায়।
গুজরাট কলেজে পড়াশোনা সেরে পাড়ি দেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর গবেষণার গুরু ছিলেন ডঃ সিবি রমন। কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে পরিবার ও বন্ধুদের সাহায্যে ১৯৪৭ সালের ১১ নভেম্বর আমদাবাদে গড়ে তোলেন ‘ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ (পিআরএল)। যা ছিল ইসরো পূর্বসুরি। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তৎকালীন ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন দেশের মাটিতে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। ইন্ডিয়ান স্পেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা ইসরোর প্রাণপুরুষ তিনিই।
সারাভাই নাকি প্রায়ই বলতেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশের মহাকাশ গবেষণা নিয়ে অনেকেই আঙুল তুলবেন। তবে ভারতের লক্ষ্য প্রতিযোগিতা নয়। চাঁদে পাড়ি দেওয়া ভারতবাসীর স্বপ্ন। মহাকাশ অভিযানে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে কেন থাকব আমরা! লক্ষ্য ও এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ দেশবাসীর মধ্যে তৈরি করাই আমার মূল উদ্দেশ্য।’’ ১৯৬৬ সালে পদ্মভূষণ ও ১৯৭২ সালে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ খেতাব দেওয়া হয় তাঁকে।