ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বের দরবারে এই খেলা মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আছে বৈচিত্র্য, আছে থ্রিল, আছে অনিশ্চিয়তা। সব উপাদানে ভরপুর এক মেলবন্ধন। সেই খেলা যতদিন গেছে আরও আধুনিক হয়েছে। নিজের ছন্দে নিজেই মাতোয়ারা হয়েছে। অভিনবত্বের মধ্যে দিয়ে খেলার ফরম্যাট পাল্টেছে। তবে ক্রিকেট মাঠে একটি প্রচলিত কথা আছে, কোনো খেলোয়াড়ের দক্ষতা বিচারের আসল জায়গা হল টেস্ট ক্রিকেট। সেইখানে নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা থাকে। এই ফরম্যাটে বহু কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের জন্ম হয়েছে। যাঁরা আজীবন মানুষের স্মৃতির স্মরণে থেকে যাবে। তেমনই দুইজন হল ক্লাইভ লয়েড ও স্টিভ ওয়া।
শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয়, তাঁরা ক্যাপ্টেন হিসেবেও দলকে সাফল্যের রাস্তা দেখিয়েছেন। বলাই হয়, কোনো জাহাজ তখনই ঠিকঠাক চলবে যখন সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন পারদর্শী হবে। সবক্ষেত্রেই এই বাণী প্রযোজ্য। বিশ্বের সেরা অধিনায়কদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবসময়ই এই দুই কিংবদন্তির নাম প্রথম সারিতে চলে আসে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটি পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন লয়েড। তাঁর কৃতিত্ব সব ক্রিকেটপ্রেমীর স্মরণে গাঁথা। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর আগ্রাসী মনোভাব সর্বদা তাঁর টিমকে চাঙ্গা করত। তাঁর টেস্ট কেরিয়ার জীবনে ৭০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। যা সেইসময়ে দাঁড়িয়ে খুব উল্লেখযোগ্য রেকর্ড ছিল। এখনও পর্যন্ত টেস্টে ছক্কা মারার রেকর্ডের তালিকায় ১৪ নম্বরে আসে তাঁর নাম। ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেও সফল ছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে ক্যারিবিয়ানরা ৭৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তার মধ্যে ৩৬টি ম্যাচেই জয়লাভ করেছেন তাঁরা। সেইসময় প্রায় ৫০ শতাংশ ম্যাচই তাঁর অধিনায়কত্বে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যা সত্যিই অবিস্মরণীয়।
অন্যদিকে, আর এক কিংবদন্তি হলেন স্টিভ ওয়া। তিনি তাঁর সময়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তা কল্পনাতীত। তাঁকে নিয়ে সারা বিশ্ব সবসময় উল্লাসিত। তাঁর মতো দক্ষ অধিনায়ক খুব কম পেয়েছে টিম অস্ট্রেলিয়া। তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন। ক্রিকেটে যদি জেন্টালম্যান অ্যাওয়ার্ড হয় তবে বারবার তাঁর নাম উচ্চারণ হবে। তিনি মাত্র ৫৭টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার নৌকা সামলেছিলেন। তার মধ্যে ৪১টি ম্যাচেই জয়ের ইতিহাস তৈরী করেছেন। কোথাও ঔদ্ধত্য নেই, কোথাও আগ্রাসন নেই। আছে বুদ্ধির খেলা, শান্ত মাথায় জয়ের কারিগরি। প্রায় ৭২ শতাংশ ম্যাচে তিনি তাঁর টিমকে জয় পাইয়ে দিয়েছেন যা অভাবনীয়।
এই দুই কিংবদন্তির টক্কর চলেছে সর্বদা। রেকর্ডের পরিমাপে চলেছে লড়াই। যে যাঁর নিজের টিমকে স্বর্ণযুগের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছেন। হাসি ফুটিয়েছেন দেশের মানুষের মুখে। প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন তাঁদের খেলা। একজন যদি হন বিধ্বংসী ওপরজন শান্ত মাথার খেলোয়াড়। তাই তাঁদের নাম ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত