আজ এক নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে ভারত। চন্দ্রায়ন-২ এর চাঁদের দিকে উড়ে যেতে বাকি মাত্র এক ঘন্টা। ভারতীয় সময় বেলা ২টো ৪৩ মিনিট নাগাদ ‘বাহুবলী’র পিঠে চেপে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দিকে হুশ করে উড়ে যাবে চন্দ্রযান-২। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে এখন সাজো সাজো রব। লঞ্চ প্যাড সাজিয়ে কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে রবিবার সন্ধে ৬টা ৪৩ মিনিট থেকে। গতকাল, রবিবার ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন জানিয়েছেন, রোগমুক্ত হয়েছে চন্দ্রযানের বাহক ‘বাহুবলী।’ সলিড ও লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারের মেরামতি শেষ হয়েছে। ভালভের চাপও এখন বশ মেনেছে। ইউএইচ ২৫ জ্বালানি ভরাও শেষ। অতএব সেজে গুজে পিঁড়িতে বসে পড়েছে চন্দ্রযান ২। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসেবে আজই বাজিমাত করে দেবে ভারত।
চন্দ্রযান ২। এর তিনটি ভাগ। অরবিটার, অর্থাৎ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ, যা চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে। ল্যান্ডার ‘বিক্রম’, যা চন্দ্রযানকে চাঁদের মাটিতে নামাতে সাহায্য করবে। এবং রোভার ‘প্রজ্ঞান’, অর্থাৎ মূল অনুসন্ধানকারী যান, যা চাঁদের মাটিতে জল ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের সন্ধান চালাবে। এই চন্দ্রযানের বাহকও অত্যন্ত শক্তিশালী, সর্বাধুনিক ‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’। সব মিলিয়ে চন্দ্রযানের তিনটি অংশ এবং মূল মহাকাশযানের মিলিত ওজন প্রায় ৩৮৫০ কেজি। ‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’-এরও রয়েছে একটি ‘অরবিটার’। যা চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে থেকে প্রদক্ষিণ করবে। ইসরো জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পর ১৭ দিন ধরে গতি বাড়িয়ে ৬ গুণ করা হবে, যার সাহায্যে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান-২। প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরে চাঁদের পিঠে পা ছোঁয়াবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। সময়সূচী মতো পৃথিবী ছাড়ার ৫৪ দিনের মাথায় চাঁদে জমিয়ে বসার কথা চন্দ্রযানের, তবে প্রথম উইনডো নষ্ট হওয়ায় সেই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা হবে। দক্ষিণ মেরু (৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে) দিন অর্থাৎ সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই কাজ শুরু দেবে চন্দ্রযানের রোভার ‘প্রজ্ঞান’।
প্রথম চন্দ্রযান অপ্রত্যাশিত ভাবে চাঁদে বরফের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। সেই বরফ কত দূর বিস্তৃত এবং তার মোট পরিমাণ কত, সেটা কিন্তু এখনও আমাদের জানা নেই। চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অবতরণ করার চেষ্টা করবে। কারণ, মেরু অঞ্চলেই বরফ থাকার সম্ভাবনা বেশি। সেই বরফের পরিমাণ থেকে তার গভীরতা সবকিছুই খুঁটিয়ে দেখবে চন্দ্রযান ২। চাঁদে জল কোথা থেকে এল, কী ভাবে এল এই সব প্রশ্ন নিয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের। পাশাপাশি, পৃথিবীর উৎসের অনেক রহস্যেরও সমাধান করতে পারে চন্দ্রযান ২। জল ছাড়াও চাঁদে ‘হিলিয়াম-৩’ মৌল নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। সে জন্যও চন্দ্রযান-২-এর পাঠানো তথ্য খুবই সাহায্য করবে।
প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম তাঁর বই ‘দ্য সায়েন্টিফিক ইন্ডিয়ান’-এ লিখেছিলেন ভারতের খনিজ ভাণ্ডারে একদিন টান পড়বে। সৌরমণ্ডল খুঁজে সেখান থেকে মণি, মাণিক্য, রত্ন ভাণ্ডার তুলে এনে অভাব মেটাতে হবে দেশকে। স্বপ্নের শুরু সেখান থেকেই। সৌরমণ্ডলে পৃথিবীর সবচেয়ে আপন চাঁদ। নীল গ্রহের এই আত্মজা-র থেকেই খনিজ তুলে এনে ভাঁড়ার ভরবে ভারত, এমন স্বপ্নই দেখেছিলেন ইসরো তাবড় বিজ্ঞানীরা। ২০০৮ সালে চাঁদের পাহাড় খুঁজতে গিয়েছিল চন্দ্রযান ১। তবে উনিশের এই দ্বিতীয় অভিযান আরও বেশি পরিণত, পরিপক্ক।