চমকে চমক। বিশ্ববাসী এক রোমহর্ষক বিশ্বকাপের সাক্ষী থাকল। পরতে পরতে পাল্টে গেছে বিশ্বকাপের চিত্রনাট্য। যেমন ছিল একপেশে ম্যাচের গল্প, ঠিক তেমনই ছিল টানটান উত্তেজনাপূর্ন ম্যাচ। ছিল বৃষ্টির ভ্রুকুটি, তেমন ছিল কিছু বিতর্ক। আবার ছিল কিছু নতুন রেকর্ড গড়ার গল্প। অনেক বিশ্ব বিখ্যাত ক্রিকেটার তাঁদের শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেললেন। হাসি-কান্না-আনন্দ-উত্তেজনা সব মিলিয়ে ভরপুর এক বিশ্বকাপ দেখল বিশ্ববাসী।
৩০ মে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গল্প বলা। এই বিশ্বকাপেই ফিরে এসেছে পুরোনো ফরম্যাট। এই বিশ্বকাপ খেলা হয়েছে রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে। যেখানে নেই কোনো গ্ৰুপ। সব দলই খেলেছে সব দলের সঙ্গে। ১০ টি দলের মধ্যে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ৪টি দল সুযোগ পেয়েছিল সেমিফাইনাল খেলার। আর এই শেষ চারে পৌঁছানোর জন্য চলেছে লড়াই। গ্ৰুপ লিগের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত ঠিক ছিল না সেমিফাইনালে খেলা প্রথম চারটি দলের পজিশন।
পৃথিবীর কোণা কোণা থেকে মানুষ ভিড় করেছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলেসে। তাঁদের প্রিয় দলকে সাপোর্ট করার লক্ষ্যে স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় ভর্তি। এই বিশ্বকাপে বিশ্ববাসী দেখেছে যেমন কিছু প্রত্যাশিত ফলাফল, আবার দেখেছে কিছু অপ্রত্যাশিত ফলও। যা বিশ্বকাপের মঞ্চকে ধাঁধিয়ে রেখেছিল। অন্যদিকে কাঁটা হয়ে ছিল বৃষ্টির চোখ রাঙানি। বৃষ্টির কারণে ভেস্তে গেছে কিছু ম্যাচ। আবার কিছু ম্যাচের মীমাংসা হয়েছে ডিএলএসের জটিল অঙ্কে।
এতকিছুর মধ্যে উজ্জ্বল হয়েছে কিছু নাম। ভারতের রোহিত শর্মা যেমন ৬৪৮ রান করে পেয়েছেন সর্বোচ্চ রানের খেতাব, তেমনই ২৭ টি উইকেট নিয়ে উইকেট সংগ্রহকের তালিকার শীর্ষে আছেন মিচেল স্টার্ক। একটি ম্যাচে ১৬৬ রানের ইনিংস যেমন ছিল ডেভিড ওয়ার্নারের নামে তেমনই ছিল শাহিন আফ্রিদির ৩৫ রানে ৬ উইকেটের স্বপ্নের স্পেল। একই বিশ্বকাপে ৫ টি শতরানের রেকর্ড করেছেন যেমন রোহিত শর্মা তেমনই ৫ টি অর্ধশতরানের রেকর্ড আছে সাকিব আল হাসানের নামে।
অন্যদিকে বিশ্বকাপের পরেই প্রকাশ পেয়েছে আইসিসির সেরার সেরা একাদশের তালিকা। সেই বিশ্ব সেরা একাদশে অস্ট্রেলিয়া থেকে জায়গা পেয়েছেন উইকেট রক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি ও পেসার মিচেল স্টার্ক। নিউজিল্যান্ড থেকে প্রথম একাদশে আছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, লকি ফার্গুসন। বিজয়ী টিম ইংল্যান্ড থেকে ৪ জন জায়গা করে নিয়েছেন এই একাদশে। তাঁরা হলেন ওপেনার জেসন রয়, জো রুট, বেন স্টোকস ও পেসার জোফ্রা আর্চার। ভারতের হয়ে আছেন ওপেনার হিসেবে রোহিত ও অন্যতম বোলার হিসেবে বুমরাহ। আর অন্যতম অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সবশেষে এক উত্তেজনাপূর্ন, অনবদ্য ফাইনাল ম্যাচ। যেই ফাইনাল এর আগে কোনো বিশ্বকাপে দেখা যায়নি। ফুটবল বা হকিতে এমন হলেও ক্রিকেটে সচার-আচার এমন ম্যাচ দেখা যায় না। এমন এক ফাইনাল যেখানে না জিতেও বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড, আবার না হেরেও হেরেছে নিউ জিল্যান্ড। ম্যাচের হিরো যেমন হয়েছে বেন স্টোকস তেমনই বিশ্বের দরবারে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে থেকে গেলেন কেন উইলিয়ামসন। পরপর দু বছর ফাইনালে উঠেও অধরা থেকে গেল বিশ্বকাপ। আর যে দেশ থেকে ক্রিকেটের জন্ম সেই দেশ প্রথমবারের জন্য পেল বিষকাপের স্বাদ। সবমিলিয়ে এক বর্ণাঢ্য রূপকথার বিশ্বকাপের স্বাদ পেল বিশ্ববাসী।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত