জয় শ্রী রাম ধ্বনি তুলে গোটা বাংলা জুড়ে সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে গেরুয়া শিবির। বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিজেপির এই রোষের বলি থেকে নিস্তার পেল না মাদ্রাসার এক ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রও।জয় শ্রী রাম না বলায় ওই ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল। রবিবার সকালে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার জনসি মোড়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের ওপর ঘটনাটি ঘটে। রাজিবুল আলম (১১) নামে ওই ছাত্রকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এমন ঘটনার পর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দোষীদের ধরার দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন।
রবিবার সকালে সাগরদিঘির জনসি এলাকায় মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরকে ধরে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো হয় বলে অভিযোগ। প্রথমিক আপত্তি তোলায় রাজিবুল আলম বলে ওই পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধরও করা হয়। তার পর মোটর সাইকেল নিয়ে উধাও হয়ে যায় দুই যুবক। উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে এর পরেই। জনসি এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা প্রায় দু ঘণ্টা ধরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আটক করা হয় ৪ জনকে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতেরা সকলেই দক্ষিণ দিনাজপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বেশ কয়েকটি মোটরবাইকে ইসলামপুর থেকে তারকেশ্বর যাচ্ছিল জনা দশেক যুবক। ভোরের দিকে বেলপুকুর এলাকায় এসে পৌঁছয় তারা। সেই সময়ে জাতীয় সড়ক ধরে সাইকেলে মাদ্রাসা যাচ্ছিল রাজিবুল। ওই কিশোর বলছে, ‘‘ওরা আমার সামনে এসে ঘ্যাঁস করে ব্রেক কষে মোটরবাইক থামায়। তার পর বলতে থাকে, ‘বল জয় শ্রী রাম, জোরে জোরে বল!’ আমি জানতে চাই, জয় শ্রী রামের মানে কি? তখন আমাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে পেটাতে থাকল ওরা।’’ আহত রাজিবুলকে ভর্তি করানো হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে।
রাজিবুলের বুকে, মাথার পেছনে জোর আঘাত লেগেছে। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে আহত ছাত্রকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এদিকে গ্রামে খবর যায়, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় রাজিবুলকে মারা হয়েছে। এলাকার ৪–৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এসে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘক্ষণ চলা অবরোধে ব্যাপক যানজট হয়। রাজিবুলের বাবা আখতার আলমের অভিযোগ, ‘রাজিবুল বাচ্চা ছেলে। জয় শ্রীরামের কী বোঝে? কেন ওকে এর জন্য মারা হল? আমি চাই, পুলিশ দোষীদের অবিলম্বে ধরুক।’
এলাকার মানুষদের দাবি, ‘এই এলাকায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। কোনও অশান্তি, ঝামেলা নেই। বিজেপি এসব করে ঝামেলা করতে চাইছে।’ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভোলেবাবা নামে কোনও সংগঠন তৈরি হয়েছে। বীরভূম, জঙ্গিপুর এলাকায় এই নামে কিছু যুবক বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে। রবিবার রাজিবুলকে যারা মারে, তারা কোন এলাকার, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পুলিশের আরও দাবি, বিজেপি–র পুরোপুরি মদত রয়েছে ভোলেবাবা নামে সংগঠনটির পেছনে।