অবশেষে ঘরের ছেলের খোঁজ পেল ধীবর পরিবার। ৩ দিন আগে মাঝ সমুদ্রে ভয়াবহ উত্তাল ঢেউয়ে ট্রলার উল্টে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে ভেসে থাকা। আর খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিল তাঁর পরিবারও। কিন্তু রাখে হরি মারে কে! মাঝ সমুদ্রে ৩ দিন ভেসে থেকেও যেন পুনর্জীবন পেলেন কাকদ্বীপের বাসিন্দা, পেশায় জেলে রবীন্দ্রনাথ দাস।
আস্ত তিনটে দিন উত্তাল সমুদ্রে ভেসে থাকার পরেও হঠাৎ উড়ে আসা লাইফ জ্যাকেট দেখে জীবনের স্পন্দন শুনতে ভুল হয়নি তাঁর। শুনতে পেয়েছেন বয়া ছুঁড়ে দেওয়ার শব্দও। সেই চেতনাতেই যেন নবজন্ম হল কাকদ্বীপের নারায়ণপুরের মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ দাসের।
খারাপ আবহাওয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে রবিবার চারটি ট্রলার ডুবে গিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। পশ্চিমী হাওয়ায় বাংলাদেশের দিকে চলে গিয়েছিল ভারতীয় ট্রলারগুলি। সেখানেই হাঁড়িভাঙা চরের কাছে ডুবে যায়। চারটি ট্রলারে ৬১ জন মৎস্যজীবী ছিলেন। ৩৪ জনের খোঁজ মিললেও এখনও নিখোঁজ বাকিরা। এই তালিকাতেই একটা নাম ছিল রবীন্দ্রনাথ দাস। ডুবে যাওয়া ট্রলার এফ বি নয়ন এ সওয়ার হয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। ট্রলারডুবির খবর আসতেই বাংলাদেশের সঙ্গে তালমিল রেখেই চলছিল মৎস্যজীবীদের খোঁজে তল্লাশি।
বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে সাগরে ভাসমান বছর ৪৫- এর রবীন্দ্রকে দেখতে পান সেখানকার জাহাজের নাবিকরাই। তখনই তাঁর দিকে বয়া ও লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে দেন তাঁরা। তবে শুধু লাইফ জ্যাকেটটিই ধরতে পারেন রবীন্দ্রনাথ। খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন সেটিকে। এরপরেই এমভি জাওয়াদ থেকে পার্শ্ববর্তী জাহাজ, বাংলাদেশ নেভি ও কোস্টগার্ডকে বার্তা পাঠানো হয়। তবে খারাপ আবহাওয়ায় নেভি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা দ্রুত আসতে পারবে না বলে জানান। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় মৎস্যজীবীর প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এই জাহাজের নাবিকরাই।
প্রায় দু ঘণ্টা চেষ্টার পর দুপুর পৌনে ১টার দিকে দিকে রবীন্দ্রনাথকে জাহাজে তুলতে সক্ষম হন এমভি জাওয়াদের নাবিকরা। মুমূর্ষ রবীন্দ্রনাথকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় পোশাক। পরে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। খবর পাঠানো হয় রবীন্দ্রনাথের বাড়িতেও। এখন ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় তাঁর বাড়ির সদস্যরা।