গত শনিবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই হ্যাটট্রিক করে দেশকে জিতিয়েছেন ভারতীয় পেসার। তাঁর পরিসংখ্যান ৯.৫-১-৪০-৪। শেষ ওভারের প্রত্যেকটি বলই ছিল ইয়র্কার। বিশ্বকাপ অভিযানের আগে মোরাদাবাদে তাঁর ছোটবেলার কোচের কাছে কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন ডান হাতি পেসার? কতটা পরিশ্রম করতেন? শামির ছোটবেলার কোচ জানালেন দিনে ১০০ ইয়র্কার করতেন শামি।
শামির ছোটবেলার কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি আরও বলেছেন, ‘‘আইপিএল শেষ হওয়ার পরে কয়েক দিন বিশ্রাম নেয়। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য হাতে বেশি সময় ছিল না। কয়েক দিন বোলিং না করলেও নিয়মিত দু’বেলা ফিটনেস ট্রেনিং করত শামি। ভারী ওজন কখনওই বেশি তুলতে পছন্দ করত না। ছোট জায়গায় স্প্রিন্ট ও শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করত।’’
শনিবার সাউদাম্পটনের মাঠে শেষ ওভারে যিনি হ্যাটট্রিক করে জেতালেন, তাঁর জীবন একেবারে গলি থেকে রাজপথে উঠে আসার এক কাহিনি। যার পদে-পদে রোম খাড়া করে দেওয়া সব মুহূর্ত। নাটকীয় সব মোচড়। আর সেই কাহিনিতে বড় ভূমিকা কলকাতা ময়দানের। শামির বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে পেস বোলার হোক। কিন্তু সহাসপুরে পড়ে থেকে কী করে বড় ক্রিকেটার হবেন তিনি? তাই কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন ছেলেকে। প্রথম ডালহৌসি ক্লাবের সুমন চক্রবর্তীর নজরে পড়েছিলেন তিনি। ‘‘ট্রায়াল দিতে এসেছিল ও। একটা কিশোর ছেলে অত জোরে বল করছে কী ভাবে, দেখে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। তার পরেই আমি কোচকে বলি, এই ছেলেটাকে নিয়ে নাও। এ তো অসাধারণ প্রতিভা,’’ পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলছিলেন সুমন। খুব সহজে বাকিদের মানাতে পারেননি তিনি। জোরজার করে তবু ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন ডালহৌসি ক্লাবের দলে। শামি তাঁর অধিনায়কের মাথা নিচু হতে দেননি। কলকাতার ক্রিকেট ময়দানে উদয় ঘটল এক সত্যিকারের ফাস্ট বোলারের। সুমন এখনও পুরনো সেই দিনের কথা মনে করতে গিয়ে মুগ্ধ কণ্ঠে বলে ফেলেন, ‘‘এত জোরে বল কলকাতায় তখনও কেউ করেনি। সাঁ সাঁ করে বল যাচ্ছে। কাস্টমসের সঙ্গে সবুজ পিচে একটা ম্যাচ খেললাম আমরা। সাত উইকেট নিয়ে ওদের শেষ করে দিল শামি।’’
শনিবার রাতে মহম্মদ সামির হ্যাটট্রিক টিভিতে দেখেছেন সামির শ্বশুরও। দেখে খুশিও হয়েছেন। রবিবার সিউড়ির বাড়ি থেকে সামির শ্বশুর মন্টু মিয়াঁ বললেন, ‘সামি ভালো খেলেছে দেখলাম। আপনাদের মতো আমিও দেখেছি। ভালো লেগেছে।’ মন্টু মিয়াঁর মেয়ে হাসিন জাহানকে বিয়ে করেছেন সামি। তারপরের ঘটনা সবারই জানা। সামি-হাসিনের লড়াই এখন আইনের দরজায়। সে সব জেনেও হাসিনের বাবা বলে দিলেন, ‘আমি চাই, সামি আরও ভালো খেলুক। দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক।’ মেয়ে হাসিন খেলা না দেখলেও বাবা তারিয়ে তারিয়ে ক্রিকেট উপভোগ করছেন। হাসিন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সামির হ্যাটট্রিকও দেখেননি। তবে মন্টু মিয়াঁ সিউড়িতে পরিবারের সঙ্গেই খেলা দেখেছেন।
নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার জের নিজের পেশাদারিত্বের জীবনে কখনও পড়তে দেননি শামি। তাই বরাবর মাঠে নেমে দিয়েছেন নিজের সেরাটা। সহাসপুর থেকে ক্রিকেটের নেশায় কলকাতায় আসা এক আত্মভোলা তরুণ। যাঁর পৃথিবী বলতে ছিল জোরে বল করা, স্টাম্প ছিটকে দেওয়ার মধুর শব্দ, বিরিয়ানির প্যাকেট আর কুম্ভকর্ণের ঘুম। ঠিকানা বলতে কখনও ক্লাব ক্যাপ্টেন বা ক্লাব কর্তার বাড়ি। গরচা রোডে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের নায়ক। ক্রিকেটের ‘স্লামডগ মিলিয়োনেয়ার’ কাহিনি তিনি— মহম্মদ শামি!