সবুজ মাঠের এক ফালি ২২ গজে স্বপ্ন এখন বেশ তাজা একশো কুড়ি কোটি ভারতবাসীর। যে স্বপ্ন দেখায় বঞ্চিত নন ওঁরাও। নিয়মিত লেখালেখির ফাঁকে যাঁদের কলম থমকে দাঁড়ায়, টিভিতে দু’দণ্ড ক্রিকেটে নজর রাখতে। প্রফুল্ল রায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী। তিন জনই ক্রিকেটের স্বাদ নেন চেটেপুটে।
বাংলাদেশের প্রথম সারির কাগজ প্রকাশ করেছে ক্রিকেটপ্রেমী হুমায়ুনকে নিয়ে প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের স্মৃতিচারণ। মাজহারুল লিখেছেন, ‘২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ। হুমায়ূন স্যার বললেন, আজ বাংলাদেশ জিতবে। ছেলেগুলো বাঘের মতো খেলছে। জিতলে আস্ত খাসি জবাই হবে।’ সেই আশ সে দিন মিটেছিল হুমায়ূনের।
আবার পরিচালক হিসেবে শ্যুটিং করতে গিয়ে গোটা জুরিখ খুঁজে বের করেছিলেন এক অজি রেস্তোরাঁ। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের সিরিজ দেখতে। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে নিউ ইয়র্কে অসুস্থ অবস্থাতেও চোখ রেখেছিলেন সেই প্রকাশক বন্ধুর ল্যাপটপে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ দেখার জন্য।
বাংলাদেশে তাঁর বন্ধু, প্রকাশকদের মধ্যে আক্ষেপ, এ বছরও তো বাংলাদেশ বাঘের মতোই খেলছে।
ওপারের হুমায়ুনের মতোই ক্রিকেটের প্রতি অপার ভালোবাসা প্রফুল্ল, শীর্ষেন্দু ও জয়ের। কিন্তু এই বিশ্বকাপ যেন কিছুটা ছন্নছাড়া। সাত বছর আগে হুমায়ূন মারা যাওয়ার পর এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ঘিরে তাঁর পাগলামি এখন শুধু স্মৃতি। আর এ পারে? শীর্ষেন্দুর আক্ষেপ, ‘প্রচন্ড জ্বরে শয্যাগত। সব খেলা দেখা হচ্ছে না। চোখ রাখছি অবশ্য টিভিতে। কিছু কিছু দেখছি।’ ব্যস্ততা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জয়ের। বললেন, ‘এ বারে সে ভাবে দেখা হচ্ছে না। খোঁজ অবশ্য রাখছি।’ নিয়মিত টিভিতে চোখ রাখছেন অবশ্য ৮৫ বছরের প্রফুল্ল। শনিবার সন্ধেতেই যেমন মগ্ন ছিলেন ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচে। বলছিলেন, ‘এই বয়সে তো আর মাঠে যাওয়া হয় না, টিভিতেই চোখ রাখি।’
পুরোনো কথা বলতে গিয়ে ফিরে যান নিজের ছাত্র জীবনে। পঙ্কজ রায়ের ভারতীয় টিমের বিরুদ্ধে রোহন কানহাইদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য যখন ঘোড়সওয়ার পুলিশের তাড়াও তুচ্ছ ছিল। বলেন, ‘ভোর চারটের সময় ময়দানে ঘোড়া পুলিশের তাড়া খেয়ে টিকিট কাটা। তারপর খোলা গ্যালারিতে সারাদিন রোদ মাথায় নিয়ে খেলা দেখা। পকেটে যা পয়সা থাকত, তাতে পাঁচ দিনই যেতে পারতাম না। সারা দিন সুভাষ গুপ্তের বোলিং দেখেই ফিরলাম হয়তো। তখন ভারত আর জিতত ক’টা ম্যাচ?’
য
প্রফুল্লর কাছে শোনা গেল, ‘পাঁচের দশকে পাকিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখতে ইডেনে যেতাম’৷
হুমায়ূন আবার তাঁর আত্মজীবনী মূলক বই ‘ফাউন্টেন পেন’ উৎসর্গ করেছিলেন সাকিব আল হাসানকে। না চিনেই। লিখেছিলেন, ‘ব্যক্তিগত ভাবে এই তরুণকে আমি চিনি না। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি।’
হুমায়ূনের দেখা হয়নি সাকিবের এই বিশ্বকাপে জোড়া সেঞ্চুরি। তবে শীর্ষেন্দু আশা রাখেন, সুস্থ হলেই টিভিতে আরও বেশিক্ষণ চোখ রাখার। স্বপ্ন দেখছেন জয়ও, ‘ভারত এ বার ফাইনালে যাবেই। তারপর কী হবে জানি না অবশ্য!’