জনগণের কাছে মাথা নোয়াতেই হল চিনের হংকং সরকারকে। প্রস্তাবিত বন্দি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে গণবিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছিল। হিংসাত্মক প্রতিবাদের রূপ নেয় এই বিক্ষোভ। আর এই পরিস্থিতিতেই শেষ পর্যন্ত ‘বন্দি প্রত্যর্পণ’ বিল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিল হংকং সরকার। হংকং-এর প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম শনিবার এক প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এর আগে তিনি এ বিল কোনভাবে বাতিল করা হবে না বলে জানিয়েছিলেন। তারপরই হংকংজুড়ে গণ-আন্দোলণ প্রচণ্ড রূপ নেয়। হিংসাত্মক প্রতিবাদের রূপ দেখে শনিবার এক সংবাদিক সম্মেলনে ক্যারি বলেন, এই বিলের কারণে সমাজে নানা বিভেদ দেখা দিয়েছে। তার জন্য হংকং সরকার এ বিল স্থগিত ও পুনরায় ভাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বন্দি প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে থমথমে ছিল হংকং। বিলটি বাতিল করার জন্য লক্ষ্যাধিক মানুষ রাস্তায় নামেন গত সপ্তাহ থেকেই। এনিয়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। হংকংয়ের বেইজিংপন্থি শাসকদের প্রস্তাবিত একটি বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চিন ও তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। তবে বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ নয় বলেই মনে করেন হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চিনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। সেখান থেকেই বিক্ষোভে নেমেছে তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের এক ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দিবিনিময়ের কোনো চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। কিন্তু এখন তাইওয়ানও জানিয়েছে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা, এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে, যা চিন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে।
১৯৯৭ সালে চিনের কাছে ব্রিটেন হংকং পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে হংকং-এ এমন হিংসাত্মক পরিস্থিতি দেখা যায়নি। যার ফলে হংকং সরকার বাধ্য হয়েই পিছু হটে যায়। যা জনগণের একপ্রকার ‘জয়’ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।