একটা সময় পর্যন্ত পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনও রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে মুখ খুললে রাতারাতি তাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত না বা গ্রেফতার করা হত। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমন ঘটনা বিরল। কিন্তু এ ঘটনা এখন হামেশাই ঘটছে যোগী রাজ্যে। দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর’ পোস্টের অভিযোগে সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারকে একহাত নিয়েছিল শীর্ষ আদালত। অবিলম্বে সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়াকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল তারা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও ফের গ্রেফতার হলেন এক সাংবাদিক। আর এবারও সেই নয়ডাতেই। নেশান লাইভ চ্যানেলের সম্পাদক অনশুল কৌশিককে সোমবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, এর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এই চ্যানেলেরই প্রধান ইশিকা সিং এবং আরও এক সম্পাদক অনুজ শুক্ল। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মানহানির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছেন নেশান লাইভ চ্যানেলেরই তিন সাংবাদিক। মঙ্গলবার অনশুলকে জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠান। একই অভিযোগে ওই চ্যানেলের হেড ইশিকা সিংকেও বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে এক মহিলা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করেন। যোগীর প্রেমিকা বলে নিজেকে দাবি করেন। নেশান টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত সেই সাক্ষাত্কার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যাঁরা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে এই ভিডিও পোস্ট করেন তাঁদের পাকড়াও করা শুরু করে পুলিশ। নিজের প্রোফাইলে এই ভিডিও পোস্ট করে গ্রেফতার হন দিল্লীর সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়া। তাঁর নামে অভিযোগ ওঠে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন প্রশান্ত। শনিবার উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাঁকে নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
তবে এই গ্রেফতারিকে বেআইনি বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান তাঁর স্ত্রী। মঙ্গলবার তার শুনানি হয়। সেই শুনানিতে প্রশান্তকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অজয় রস্তোগীর অবসরকালীন বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, প্রশান্ত কানোজিয়ার স্ত্রী জিগিষা অরোরার আইনজীবী নিত্যা রামকৃষ্ণন সুপ্রিম কোর্টে জানান এই গ্রেফতারি অবৈধ ও অসাংবিধানিক৷ তবে এর পাল্টা যোগী সরকারের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্তের জামিনের বিরোধীতা করে আবেদন করেন৷ তখনই সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার৷ কি কারণে ওই সাংবাদিক এতদিন ধরে জেলে তা জানতে চান বিচারপতিরা৷ গোটা ঘটনায় স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চ৷
তবে প্রশান্তকে ছাড়তে বাধ্য হলেও দমে যায়নি যোগী সরকার। তারপর প্রশান্তের টুইটের সূত্র ধরেই খোঁজ শুরু হয়। নাম জড়ায় নেশান লাইভ টিভি চ্যানেলের। জানা যায়, এই চ্যানেলের মারফৎই ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, জেলাশাসকের নির্দেশে শীঘ্রই ওই টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। চ্যানেলের সম্পাদক অনশুল কৌশিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ৫০১, ৫০৫ (১) এবং ৫০৫ (২)ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে, বেআইনি এবং আপত্তিকর খবর তৈরির অভিযোগে চ্যানেলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর থেকেই প্রমাণ হয় যে, হিটলার বা মুসোলিনির মতো একনায়কতন্ত্রীদের পথে হেঁটেই এবার সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধ করতে চলেছেন যোগী।