আজ জামাইষষ্ঠী। আর জামাই ষষ্ঠী মানেই জামাইদের দিন। সকাল থেকেই জামাইদের শ্বশুরবাড়িতে সাজো সাজো রব। ভোর থেকে উঠে শ্বাশুড়িমায়েরা কোমর বেঁধে হেঁশেলে নেমে পড়েন। সময় গড়ায় আর তৈরি হতে থাকে একের পর এক জিভে জল আনা পদ। এই দিনটাতেই বোধহয় শ্বাশুড়ি-জামাই সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হয়।
ভারতবর্ষ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় সংস্কার ছিল কন্যা যতদিন না পুত্রবতী হয় ততদিন কন্যার পিতা বা মাতা কন্যাগৃহে পদার্পণ করবেন না ৷ এই ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিল —সন্তানধারণে সমস্যা বা সন্তান মৃত্যুর (শিশুমৃত্যু) ফলে কন্যার পিতামাতাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত কন্যার বাড়ি যাওয়ার জন্য ৷ সেক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখদর্শন কীভাবে ঘটে? তাই সমাজের বিধানদাতা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নিলেন জামাই ষষ্ঠী হিসাবে ৷ যেখানে মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করা হবে ও কন্যার মুখ দর্শন করা যাবে। আর সেইসঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করা যাতে কন্যা শীঘ্র পুত্রমুখ দর্শন করতে পারে। এই প্রথাই আজও পালন করা হয় আজকের দিনে।
সেসব না হয় সবই হল। কিন্তু কেউ কি ভেবেছে আজকের দিনে জামাইদের দুর্দশার কথাটা? পেটরোগা জামাই থেকে পলিশড জামাই সব জামাইদের অবস্থাই আজকে বেশ সঙ্গীন হয়ে যায়। প্রথমত, ধরুন যদি মাসের শেষে জামাই ষষ্ঠী পড়ে, ব্যস তবে আর কি! সোনায় সোহাগা! বেচারা জামাই পকেট বাঁচাবে নাকি শ্বশুরবাড়িতে সম্মান তাই নিয়েই গলদ ঘর্ম। আর কোনভাবে যে কাটিয়ে দেবেন, তাও হবে না কারণ রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গিন্নী মহাশয়া আর ওদিকে শ্বাশুড়ি মা চিংড়ি মাছের মালাইকারিটা জব্বর করেন তাই কোনওমতে সব ম্যানেজ করে শ্বশুরবাড়ির সবার জন্যে কেনাকাটা করে শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন জামাই।
খেলা তো এবার শুরু। এই প্রচন্ড গরম। সে জামাই যতই বউকে নিয়ে ওলা কিংবা উবেরে করে যাক না কেন, রোদের তাপ উপেক্ষা করবে কি করে বাবাজীবন? তাই গলদঘর্ম হয়ে জামাই পৌঁছল শ্বশুরবাড়ি। আর ওই অবস্থায় যদি একথালা আম, দই, কলা, তরমুজ ইত্যাদি ফলাহার করতে হয়, কষ্ট হয় বইকি! আর তারপরেও জিরোবার অন্ত নেই। শালি-শালা- শ্বশুর, বাড়ির অন্যান্যরা আছেন সকলকেই সময় দিতে হয়। বিশেষত শালিদের। আরও কষ্ট হয় নতুন জামাইদের। বেচারারা কি করবে আর কি বলবে বুঝে পায়না, তবে আজকের টেক-স্যাভি জামাইরা লজ্জা পায়না খুব একটা। কিন্তু তবুও ওই …
এবার আসে আসল পর্ব। ধোঁয়া ওঠা ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, ডাল তরকারি, মাছ মাংসের হরেক পদ হাজির হয় জামাইয়ের সামনে। চক্ষুচড়ক গাছ হলেও কিচ্ছু করার নেই। কারণ উলটো দিকে শ্বশুরমশাইয়ের মজার ছলেই ব্যঙ্গ – “আরে কি বল! এইটুকু পারবে না? শোনো তোমাদের বয়সে না আস্ত একটা খাসি খেতাম!” আর কানের পাশে সেই ডেঞ্জার জোন- “ নানা বাবাজীবন আজ কোনও কথা শুনব না, এটুকু তো খেতেই হবে। নাও আরেকটু ভাত নাও”। বেচারা জামাই! কোনদিকে যায়? ডাল তরকারি শেষ করেই যখন হাঁসফাঁস দশা তখন মাঠে নামার জন্যে ওয়ার্ম আপ করছে মাছের পাতুরি, মাংস ইত্যাদি ইত্যাদি… আর জামাই তখন ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে।
সবকিছু শেষ করে যখন ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন তখন বেচারা ভাবছে, “ এই জামাই ষষ্ঠী কে চালু করেছিল?” বেচারা যখন ভাবছে একটু ঘুমের কথা তখনও নিস্তার নেই। শালির আবদার, “ সিনেমা দেখতে নিয়ে চল”। আর অর্ধেক গৃহিণীর কথা কবেই বা জামাইবাবুরা ফেলতে পেরেছে। অগত্যা…
সব মিটিয়ে রাতে আবারও একপ্রস্থ অত্যাচার শেষে যখন জামাই বাড়ি ফেরে তখন পেটের ব্যথা আর পকেটের ব্যথা দুটো একসঙ্গে খোঁচা মারে। সবকিছু ভুলে এই একটা দিনের মজা আনন্দ অত্যাচার নিয়েই জামাইরা তৈরি হয় বাড়ি গিয়ে বউয়ের চোখ রাঙানি শুনতে- “ অত গুলো মাছ খাওয়ার কি দরকার ছিল”! বেচারা জামাই…