যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও পিছু ছাড়ছে না বাংলা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে এ রাজ্যের তেরাে কেন্দ্রেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুজু দেখছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। হ্যাঁ প্রসঙ্গহীনভাবেই সেখানে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলার বাঘিনীর নাম।
আসলে নিজের রাজ্যে বসেই যােগী নিয়ম করে বলে যাচ্ছেন, তাঁকে বাংলায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফল ভুগতে হবে। আবার প্রার্থীরাও কোনও বাঙালি সাংবাদিক দেখলে মমতার খবর নিচ্ছেন। বিজেপির প্রধান বিরোধী এখানে অখিলেশ-মায়ার জোট। হাতেগোনা কয়েকটি আসন বাদ দিলে কংগ্রেস ধারে ভারে পিছিয়ে। তবে অখিলেশের সঙ্গে মমতার সখ্যের খবর জানেন উত্তরপ্রদেশের গেরুয়া শিবির। আর সে কারণেই বারবার উঠে আসছে কালীঘাটে টালির চালায় থাকা সেই মহিলার কথা।
দেশজুড়ে প্রধান বিরোধী কংগ্রেস হলেও মোদী-বিরোধীতায় এখন দেশের মুখ বাংলার মমতাই। ফলে গোরখপুর, বারাণসী, বালিয়া, দেওরিয়া, গাজীপুর, ঘােষী, কুশিনগর, মহারাজগঞ্জ, মির্জাপুর, রবার্টসনগঞ্জের মতাে কেন্দ্রগুলিতে নিয়ম করে মমতার নিন্দা করে যাচ্ছেন পদ্মব্রিগেড। যেখানে সে রাজ্যে কোনও প্রার্থীই নেই তৃণমূলের, সেখানেও যেন না থেকেও আছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কীসের ভয়? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল একদম নিচু স্তরে।
বারাণসীর এক স্নাতক যুবক মনে করেন, প্রশ্নহীন আনুগত্য নাকি
ভারতবর্ষকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। একটি বক্তব্যের যে ভিন্ন কোনও স্বর থাকতে পারে তা মানতে নারাজ উত্তরপ্রদেশের ওই বিজেপি ভক্ত বাসিন্দা। গোরক্ষপুর দীনদয়াল উপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়াও জানান, এখানে তর্ক
প্রায় নেই। শাসক যা বলে তাই মাথা পেতে নেয় জনতা। কারণ মতের বিরোধ হলেই উন্নয়ন আটকে দেয় সরকার।
কিন্তু গণতন্ত্র সুস্থ বিতর্ক হবে না? চীনের মডেলে কি এ দেশ চলতে পারে? অখিলেশ-মায়া এবং কংগ্রেস নেতারা এই প্রশ্নই তুলছেন। শেষ দফার ভোট উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন সব দলের হেভিওয়েটরা। বিজেপি বিরোধীদের সকলেরই এক বক্তব্য, বাংলায় যে কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অন্তত বক্তব্য পেশ করা যায়। কিন্তু এ রাজ্যে গোরক্ষপুর-সহ উত্তর-পূর্বের
জনপদগুলিতে বিরোধীতা মানেই নাকি নিজের ক্ষতি!
এমনকী দীর্ঘদিন এই অভ্যাসের ফলে অনেকে ভুলেই গেছেন প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ বলে অভিধানে কোন শব্দ আছে। অথচ এই জেলায় ঘটেছিল চৌরিচৌরা বিদ্রোহের মতো ঘটনা। ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একসঙ্গে থানা ঘেরাও করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন চৌরিচৌরা গ্রামের বাসিন্দারা। যা এখন বিস্মৃত হয়ে গেছে এখানকান মানুষের মন থেকে।