সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্ব শুধুই ‘জাতপাত’, ‘ধর্ম’, ‘সেনা’র কথা বলছে। মুখে নেই কোনো ‘বিকাশ’-এর কথা। গত পাঁচ বছরে যে ‘বিকাশ’-এর মন্ত্র নিয়েছিল বিজেপি সরকার তা আসছেই না প্রচার মঞ্চে। অনেকেই মনে করছেন যে সেই প্রতিশ্রুতি অধরা তাই রা নেই বিজেপি নেতৃত্বের মুখে। সত্যি কি তাই? সারা দেশে অনেক গ্রামের কিছু টুকরো টুকরো চিত্র থেকেই তা স্পষ্ট। মোদীর ‘বিকাশ’ অদেখাই থেকে থেকেছে অনেক গ্রাম। এরকমই একটি গ্রাম উত্তরপ্রদেশের দোহরিঘাট। শুধু দোহরিঘাট নয় গোটা মউ জেলারই এমন চিত্র।
‘উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেই রাজি নন কেউ, শুধু জাতপাত নিয়ে ব্যস্ত!’ আক্ষেপের সুর গ্রামবাসীর গলায়। শুধু ‘গর্বের’ মউতে নয়, জাতপাত ভিত্তিক রাজনীতির এই দাপট গোটা উত্তরপ্রদেশেই সত্য এ বার। তাতেই সমস্যা বাড়ছে বিজেপির। বিজেপির উন্নয়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলিত। গ্রামবাসী যদুবংশী কথায়, ‘কী এমন মহান কাজ করেছে? উন্নয়ন করাই তো সরকারের কাজ।’ আর দিনের শেষে সমাজবাদীর পার্টির ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত যাদব ও মুসলিমরা এবং বহুজন সমাজ পার্টির অনুগামী দলিতরা বহুলাংশেই জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের ভোট যাবে বিজেপির বিরুদ্ধেই এবং তা ভাগাভাগিও হবে না, সবটা জমা হবে মহাগঠবন্ধনের খাতাতেই। অন্য এক গ্রামবাসী শ্যামলাল তুললেন অন্য প্রশ্ন। তাঁর কথায়, ‘এগুলো শৌচাগার? একটা লাথি মারুন তো দেওয়ালটায় জোরসে। নিজেই দেখে নিন দেওয়াল কতটা মজবুত।’ শৌচাগারের জন্য টাকা এসেছে, কিন্তু স্থানীয় নেতাকে ভাগ দিয়ে যা বেঁচেছে, তাতে প্রমাণ মাপের শৌচাগার আদৌ বানানো যায় কি না সেই প্রশ্নই গ্রামবাসীর মুখে।
আবার কারোর গলায় ক্ষোভ একদম তুঙ্গে। এমনই এক ছোট ব্যবসায়ী গলায় শোনা গেল, ‘বিজেপি-কে পাঁচটা আসনের বেশি পেতে দেব না এ বার উত্তরপ্রদেশে। এ বারই শেষ। আর ফিরতে দেব না।’ গ্রামে বিদ্যুতের লাইন এসেছে ঠিকই কিন্তু মাসান্তে সেই বিদ্যুতের বিল উঠছে আকাশছোঁয়া। সপা ও বসপা দুই রাজনৈতিক দল গঠবন্ধন করার ফলে বিজেপির থেকে অনেকটাই যে এগিয়ে গেছে এমনই মনে করছেন উত্তরপ্রদেশের দলিত সম্প্রদায়। সহেড়া গ্রামের কোঠেদার ওমপ্রকাশ রামের মতে, ‘আমরাও গঠবন্ধনের পাশেই আছি। কারণ জিতুন বা হারুন, উত্তরপ্রদেশের দলিত কখনও বহেনজির সঙ্গ ছাড়বে না।’
যাদব-মুসলিম-দলিতের সব ভোট এক হয়ে গেলে জনসংখ্যার বাকি অংশ কি বিজেপির আগের বারের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? সন্দেহ বিস্তর। কারণ বিকাশের রঙ ফিকে হয়ে আছে।