পুরুলিয়া লোকসভার অন্তর্গত আরশার সেনাবনা হাট ময়দানে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের এই মাত্রাছাড়া গরমের মধ্যেও বিপুল সংখ্যক মানুষ সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সকলের কথা ভেবেই এই সভায় তাঁর বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেননি। অন্যান্য সভার মত এই খানেও মোদীর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। এবং এখানেও উপস্থিত সকলকে বক্তব্যের শুরুতেই আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
আজ এই সভায় মোট ৮টি এলাকা থেকে অনুরাগীরা এসেছিলেন। কিছুদিন পূর্বেই বিজেপির সভা হয় এখানে এবং সেই সভায় যে বিন্দুমাত্র ভীড় হয়নি সেই কথাও আবার উল্লেখ করেন অভিষেক। আজকের এই তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে যারা সভায় এসেছেন তাঁরা যে শুধু বক্তব্য শুনতে আসেননি, আগামী ২৩ মে যে বিজেপিকে দেশছাড়া করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছেন সেই কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলার মানুষ যে ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার গড়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকবেন তা নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। গত তিনদিন ধরে যে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় ঘুরছেন এবং প্রতিটি মানুষ যেভাবে মমতার জয়গান গাইছেন সেই কথাও তাঁর বক্তব্যে তুলে আনেন তিনি। এই চড়া রোদে মিটিং করার ক্ষমতা যে আর কারোর নেই তাও তিনি উল্লেখ করেন। আগামীকাল মমতা যে এক জেলায় তিনটি সভা করবেন মানুষের জন্যে কাজ করার ক্ষেত্রে যে তিনি কোনও কিছুকে প্রাধান্য দেন না সেই কথাও আবার জানান তিনি।
আগামীকালের সব সভায় যে লক্ষাধিক মানুষের ভীড় হবে তাও জানান তিনি। এও বলেন, “ ক্ষমতা থাকলে দিল্লী থেকে ঝাড়খন্ড থেকে লোক এনে সভা করাক মোদী। তবুও একদিনে তিন সভার ক্ষমতা থাকবে না তাঁদের”। এরপরে মমতার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
অভিষেক আরও জানান, “ আজকের বিপুল জনজোয়ার বুঝিয়ে দিচ্ছে মানুষ আছে তৃণমূলের পাশেই। আমি এই আবেদনই করতে চাই গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি লিডে আমাদের প্রার্থীকে জেতান। এমন ভাবে জেতান যাতে আর কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। মোদী পাঁচ বছর আগে বলেছিলেন আচ্ছে দিন আসবে, কিন্তু এখানে কেউ বলতে পারবে না যে আচ্ছে দিন এসেছে। আচ্ছে দিনের নামে যদি কারোর লাভ হয়ে থাকে তা শুধুমাত্র মোদীর।আচ্ছে দিনের মোদী নিজের আখের গুছিয়েছেন। ওনার কথা মত আপনাদের কারোর ব্যাঙ্কেই ১৫ লক্ষ টাকা ঢোকেনি তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথা মত কন্যাশ্রী রূপশ্রী ইত্যাদি সব কিছু দিয়েছেন মানুশ আরও সমৃদ্ধ হয়েছেন। রাস্তাঘাট, আইআইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলো ইত্যাদি সব দিয়েছে ত্রিনমুল।কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি পাঁচ বছর ধরে মানুষকে বোকা বানিয়ে রেখে গেছে”।
এরপরে জঙ্গলমহলের যে উন্নতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন তাঁর কথাও বলেন। এত বছরে যে মোদী-শাহকে এখানে দেখা যায়নি সেই কথাও বলেন তিনি। অথচ একমাত্র তৃণমূলই যে মানুষের পাশে সবসময় থাকে সেই খতিয়ান দেন তিনি। বিজেপি যে ভোটের পাখি সেই কথাও স্পষ্ট ভাবে বলেন তিনি। বিজেপি যে মিথ্যা কথা বলে চলেছে তাও জানান তিনি। মোদী যে কর্মসংস্থান করতে পারেননি তাই নিয়েও তোপ দাগেন তিনি।
এরপরে ভারতী ঘোষের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়েও তোপ দাগেন অভিষেক। রাম বাম আঁতাত নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। মমতা যে ধর্মের বিভেদ দিয়ে রাজনীতি করেন না সেই কথাও আবার বলেন তিনি। বক্তব্যের শেষে বলেন, “এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।