তিনি অতীতের ছাত্রনেতা। গ্রাজুয়েশনের সময় পাঠ্যসূচির সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চারবার ফেল করে ৩ বছরের কোর্স ৭ বছরে শেষ করেন। এবং সেইসঙ্গেই অর্জন করেন ‘ফেলুদা’ তকমা। তবে ভদ্রতা ও রুচিবোধের পরীক্ষাতেও এবার ডাহা ফেল করলেন সিপিএমের শতরূপ ঘোষ। হ্যাঁ, এবার শতরূপের আরেকটা রূপ দেখলেন নেটিজেনরা। সম্প্রতি ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বোকা বোকা টুইট করে পার্টি অফিসের সাইনবোর্ডে আলো ফেলতে চেয়েছিলেন খোদ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আর এবার প্রচারে আসতে চেয়ে নিজের ফেসবুক পেজে অশ্লীল ছবি পোস্ট করে দলের এবং রাজ্য সম্পাদকের বিড়ম্বনায় নতুন মাত্রা যোগ করলেন সিপিএমের এই ‘তাজা’ নেতা।
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অন্যায়ভাবে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে কলকাতায় ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন ভারতীয় কোচ গ্রেগ চ্যাপেল। পাল্টা মিডল ফিঙ্গার (মধ্যমা) দেখিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন অজি কোচ। বিক্ষোভের মুখে পড়ে এভাবে মধ্যমা দেখানোর রেওয়াজ ভারতে নতুন। তারপর থেকে কখনও রাজনৈতিক নেতা আবার কখনও কোনও সেলেব্রিটি, বিপদে পড়লেই মধ্যমা দেখানোর পথে গিয়েছেন। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষ।
সোমবার, ৬ ই মে সকাল ১১ টা নাগাদ নিজের ফেসবুক পেজে একটি ছবি শেয়ার করেন ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সিপিএম প্রার্থী শতরূপ। তাতে দেখা যাচ্ছে, তর্জনিতে ভোটের কালি, তার উপর লেখা সিপিএমের নাম এবং উদ্যত মিডল ফিঙ্গারে লেখা বিজেপি-তৃণমূল। যার অর্থ, ভোট সিপিএমকে, বিজেপি-তৃণমূলকে মিডল ফিঙ্গার। শতরূপ ঘোষের এই বিতর্কিত পোস্টের পরই তাঁর এ হেন অশালীন ইঙ্গিতের সমালোচনায় মুখর হন নেটিজেনরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার সিপিএম সমর্থকই। একজন যেমন মন্তব্য করেন, ‘এটা কাম্য নয় কমরেড। অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
আবার আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এটা কোনও ভদ্রচিত আচরণ নয়।’ এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী আবার সরাসরি এ কথা বলেছেন যে, ‘এটাই তো করে এসেছেন ৩৪ বছর। পোস্টার পার্টি হয়েও নির্লজ্জের মতো ভোটের দিন মধ্য আঙুল দেখাচ্ছেন। সাবাশ।’ বলা যায়, সিপিএমের তরুণ নেতার এই কাজ যে ভালোভাবে নেননি কেউ, তা তাঁর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা লোকজনের ফেসবুক কমেন্ট দেখলেই তা স্পষ্ট। সিংহভাগ কমেন্টেই তরুণ নেতার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, পশ্চিমের দেশগুলিতে মধ্যমা দেখানোকে অশ্লীল ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়। আর বিবিসি বলছে, মধ্যমা প্রদর্শন মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন অশ্লীল ইঙ্গিত।
তবে, মধ্যমা উঁচিয়ে অপমান করার প্রথা চালু হল কোথা থেকে তা সঠিক জানা না গেলেও, মনে করা হয়, ১৪১৫ সালে অ্যাগিনকোর্টের যুদ্ধে প্রথমবার এই ভঙ্গিমা ব্যবহার করা হয়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ফরাসি সৈন্যরা ব্রিটিশদের হুমকি দিয়েছিল, তাঁরা ব্রিটিশদের হাতের প্রথম দুটি আঙুল কেটে নেবেন, যাতে তাঁরা তির ছুঁড়তে না পারেন। কিন্তু বাস্তবে ফরাসিরা তা করতে পারেনি বলে দাবি ব্রিটিশদের। কথিত আছে, এই সময় ফরাসি সৈন্যদের অপমান করতে তাদের লক্ষ্য করে এই ভঙ্গিমা ব্যবহার করেছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী।
সব মিলিয়ে তরুণ নেতার ওই পোস্ট নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। এমন প্রশ্নও সামনে এসেছে যে, ভোট চলাকালীন এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন পোস্ট করে কী বোঝাতে চাইলেন এই তরুণ নেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচন চলাকালীন এই ধরনের দলের নেতার এ হেন ফেসবুকে পোস্টে শহরে শিক্ষিত ও রুচিশীল মানুষদের সঙ্গে আরও দূরত্ব বেড়ে গেল বর্তমানে পোস্টার পার্টি হয়ে যাওয়া সিপিএম এবং ‘মিউজিয়ামের মডেল’ হয়ে যাওয়া আলিমুদ্দিন বাবুদের।