বিগত ৫ বছর ধরে বিজেপির প্রত্যেক নেতা-নেত্রীর ক্ষেত্রেই মানুষ দেখেছেন যে, তাঁরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দেন। কিন্তু কিছুই পূরণ করেন না। এক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরের বাকি সকলকেই ছাপিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দেশের জনগণকে একের পর এক ‘জুমলা’ দিয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু উল্টোদিকে, প্রতিশ্রুতি পূরণে এবার দরাজ সার্টিফিকেট আদায় করে নিলেন বাংলার জনপ্রতিনিধিরা। আরও পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা।
ভারত সরকারের নামজাদা শিক্ষা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই, কলকাতা এবং ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা বলছে, দলমত নির্বিশেষে বাংলার জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করার। বাংলার অন্তত ৮৩ শতাংশ জনপ্রতিনিধি নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। এমনটাই দাবি করছেন আইএসআই কলকাতার গবেষকরা।
প্রসঙ্গত, ২০১১ থেকে রাজ্যে সরকার পরিচালনা এবং বাংলার সিংহভাগ পঞ্চায়েত ও পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এই কৃতিত্বের বেশিটাই তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-জনপ্রতিনিধিদের প্রাপ্য। এই গবেষণা থেকেই প্রমাণ হয়ে যায় যে, বাংলার শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা বিগত কয়েক বছরে রাজ্যবাসীকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অনেকাংশেই পূরণ করেছেন।
জানা গেছে, আইএসআই কলকাতা এবং ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথ ভাবে দেখতে চেয়েছিলেন, এই যে ভোটের সময় নেতারা এত রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন, ভোটের পর সেই প্রতিশ্রুতি তাঁরা কতটা রাখতে পারেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দফায় দফায় এই রাজ্যের নানা কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন আইএসআইয়ের অধ্যাপক সন্দীপ মিত্ররা। রাজনীতিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ সব পক্ষের সঙ্গেই কথা হয় তাঁদের।
তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্যের অন্তত ৮৩ শতাংশ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছেন। এই পরীক্ষার জন্য পঞ্চায়েত স্তরের নানা কাজকর্ম দেখা হয়েছিল। গবেষণার ব্যাখ্যা, ভোটের সময় প্রতিশ্রুতির ধরন একজন রাজনীতিবিদের ভাবমূর্তি তৈরি করে দেয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর সেই ভাবমূর্তি রক্ষা করতে মরিয়া থাকেন তাঁরা। গবেষণা বলছে, কাজ করতে পারেননি এমন তকমা যাতে গায়ে না পড়ে, এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা যথেষ্ট সচেতন থাকেন। এর থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেকে আবার মানসিক চাপেও থাকেন। যা অনেক সময় প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সাহায্য করে।