তৃণমূল, কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলগুলি যখন প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়ে প্রচারের ঝড় তুলেছে, তখনও প্রার্থী বাছাই নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে চলছিল নানা টালবাহানা। অবশেষে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ১৮৪ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। তাতে দেখা গেছে, প্রত্যাশিত ভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাণসী, লখনউয়ে রাজনাথ সিংহ, নাগপুরে নীতিন গাডকরি, রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অমেঠিতে স্মৃতি ইরানি লড়বেন। কিন্তু বিজেপির প্রথম প্রার্থী তালিকায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল গুজরাটের গান্ধীনগর আসন থেকে লালকৃষ্ণ আদবানীকে সরিয়ে প্রথমবার লোকসভার ভোটযুদ্ধে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের লড়ার সিদ্ধান্ত! শুধু তাই নয়, ১৮৪ জনের প্রার্থী তালিকার মধ্যে নামই নেই বিজেপির লৌহপুরুষ আদবানীর! জানা গেছে, অনেক ঝাড়াই বাছাই করার পরই নাকি বিজেপির প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর নাম।
মোদী-শাহ জুটি বিজেপির দায়িত্বে আসার পরেই ‘মার্গদর্শক মন্ডলী’তে ঠাঁই হয়েছিল প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী, মুরলীমনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতাদের। পাঁচ বছরে যে ‘মন্ডলী’র নেতাদের এক বারও ‘মার্গদর্শন’ করতে দেওয়া হয়নি। বিজেপির উত্থানের নেপথ্যে থাকা আদবানীকে এ বারে প্রার্থী না করার পিছনে দলের যুক্তি, ভোটে জয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছিল, আদবানীর বদলে অমিত শাহ প্রার্থী হলেই জয়ের সম্ভাবনা আছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী গতবার নিজের রাজ্যের আসন ছেড়ে দেওয়ার পরে অমিত শাহ গুজরাটের জমি শক্ত করতে পারবেন। গত বিধানসভা ভোটে রাহুল গান্ধীর তৎপরতার ফলে এই গুজরাটেই বেশ বিপাকে পড়েছিল বিজেপি।
এই মুহূর্তে দিল্লীর অলিন্দে একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, তাহলে কি বিজেপিতে আদবানী-যুগের পাকাপাকি ভাবে অবসান হল? সক্রিয় রাজনীতি থেকে কি তাহলে পাকাপাকি ভাবে বিদায় নিতে হল ‘লৌহপুরুষ’কে? বিজেপির আসন ঘোষণার পরেই কংগ্রেস আডবাণীকে প্রার্থী না করা নিয়ে কটাক্ষ করেছে। দলের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা টুইটারে বলেন, ‘প্রথমে জোর করে লালকৃষ্ণ আদবানীকে মার্গদর্শক মণ্ডলীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার তাঁর আসনও কেড়ে নেওয়া হল। নরেন্দ্র মোদী যদি লালকৃষ্ণ আদবানীর মত বর্ষীয়ান নেতাকেই সম্মান দিতে না পারেন, তবে দেশকে সম্মান করবেন কীভাবে? আর কীভাবেই বা জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন!’ টুইটের শেষে তিনি এ-ও বলেন, ‘বিজেপি ভাগাও, দেশ বাঁচাও।’
বিজেপি সূত্রের খবর, প্রবীণ নেতা আদবানীকে ইতিমধ্যেই দলের মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্ঘ-বিজেপির যোগসূত্র রক্ষার দায়িত্বে থাকা নেতা রামলাল আদবানীর কাছে দলের বার্তা নিয়ে যান। ৭৫ বছরের বেশি বয়সি নেতাদের জয়ের সম্ভাবনা না থাকলে এমনিতেই প্রার্থী করা হবে না, সেটি আগেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। তাই মুরলীমনোহর জোশী, ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি, ভুবনচন্দ্র খান্ডুরির মতো প্রবীণ নেতাদের নামও প্রথম তালিকায় ঠাঁই পায়নি। কিন্তু বিজেপিরই একটি অংশের মতে, গান্ধীনগর আসন ১৯৮৯ সাল থেকে বিজেপির গড়। সেখানে আদবানী জিততে পারতেন না, এ ধারণা ভুল। অমিত শাহ যে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছেন, সেটিও আদবানীরই সংসদীয় কেন্দ্রের অধীনে। তাই ভোটে জিততে পারবেন না বলেই প্রার্থী করা হচ্ছে না, এ যুক্তি আদবানীর ক্ষেত্রে খাটেনা।
জানা গেছে, যে ১৮৪ জনের তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে দু’ডজনের মতো বর্তমান নাম বাদ পড়েছে। মোদী সরকারের কৃষি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কৃষ্ণা রাজও টিকিট পাননি। আজকের তালিকা অনুসারে উত্তরপ্রদেশে আধা ডজন নাম বাদ পড়েছে। সূত্রের খবর, পূর্ণ তালিকা ঘোষণা হলে সে রাজ্যে ২০ শতাংশ নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা। বারাণসী ছাড়া প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনও আসনে লড়বেন কি না, সেটি অবশ্য এখনও স্থির করা বাকি। এদিকে, কংগ্রেসের কটাক্ষ, বিজেপি এত ভেবেচিন্তে প্রার্থী বাছাই করলে ধর্ষণে অভিযুক্ত নিহালচন্দ্র, গোষ্ঠী সংঘর্ষে অভিযুক্ত সঞ্জীব বালিয়ানের নাম কী করে রইল? স্মৃতি ইরানির নামের পাশে ‘পার্সি’ লেখা আছে। অথচ বিজেপি দাবি করে, তারা জাতপাতে বিশ্বাস করে না।
এছাড়াও বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এই তথ্য উঠে এসেছে যে, বিজেপির প্রথম প্রার্থী তালিকায় থাকা ১৯ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ১৮৪ জনের মধ্যে এঁদের সংখ্যা ৩৫। এই পরিসংখ্যান অবশ্য ২০১৪ সালের। যেমন মহারাষ্ট্রের হংসরাজ গঙ্গারাম আহিরের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ১১টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উড়িষ্যার প্রতাপ সারাঙ্গির বিরুদ্ধেও রয়েছে ফৌজদারি মামলা।