২০১৫-য় একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল পান জলপাইগুড়ির তীর্থ। সবুজসাথীর ওই সাইকেলে চেপেই এখন বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন স্কুলের হোস্টেলে বেড়ে ওঠা পিতৃমাতৃহীন ছেলেটি। তবে এখানেই শেষ নয়। নিজের স্বপ্নকে লালন করার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের বার্তাও দিকে দিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।
সাইকেল পাওয়ার পরই দু’চাকায় বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন দেখা শুরু। ২০১৬-এর ১৬ মার্চই সাইকেলে প্রথম বেরিয়ে পড়ে তীর্থ। বাংলার বিভিন্ন ব্লকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ এবং ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান’ স্লোগান প্রচার করেন তিনি। ইতিমধ্যেই মোট ২৪৬টি ব্লকে প্রায় ৪৬ হাজার কিলোমিটার পথ ঘুরে ফেলেছেন সাইকেলে। লক্ষ্য আগামী মার্চের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত ব্লক ঘুরে নেওয়া।
জানা গেছে, এরপর ভিন রাজ্যে সাইকেল ভ্রমণে বের হতে চান তীর্থ। তাঁর ভাষায়, ‘আমার একটাই উদ্দেশ্য, পৃথিবীকে দেখব, শিখব, জানব।’ তীর্থ এখন কলকাতায় সাউথ সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্সের ছাত্র। পড়াশোনা, ক্লাস সব বজায় রেখে তার ফাঁকে ফাঁকেই সাইকেল নিয়ে ঘুরছেন তিনি।
সাইকেল নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে পৌঁছেছেন খড়গপুর আইআইটিতে। সেখানেও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাঁর ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ ও ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান’ প্রচার কৌশল বেশ নজর কেড়েছে। তীর্থ বলেন, ‘আমি দেখে অবাক যে, আইআইটি ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা সবাই সাইকেল নিয়ে ঘুরছেন। আমার ভালো লাগল, ওখানে সবাইকে সাইকেল চালাতে দেখে।’
সাইকেলের সামনে লাগানো বোর্ডে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন বার্তার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নের কথাও লিখেছেন তীর্থ। তাতে অনেকই আগ্রহী হয়ে আলাপ জমান তাঁর সঙ্গে। সব শুনে কেউ কেউ বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। তাতে পড়াশোনার খরচ জোগাড় হয়। তীর্থ বলেন, ‘হোস্টেলে থাকা-খাওয়া জুটে যায়। স্যারেরা বিনা পয়সায় টিউশন পড়ান। এই প্রচার সফরে অনেক সহৃদয় ব্যক্তিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাতে লেখাপড়ার খরচ মেটে।’
কলকাতা সাউথ সিটি কলেজের অধ্যাপক নিরুপম দাস বলেন, ‘ছেলেটি অভাবের মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। লেখাপড়ায় বেশ আগ্রহ। অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ও ভদ্র। সততা নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। ওঁর ইচ্ছা দেখে আমরাও অবাক।’ আগামী মার্চের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত ব্লক পরিক্রমা করে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা আছে তীর্থের।
তিনি জানালেন, কোন নতুন এলাকায় গেলে প্রথমেই সেখানকার পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেন তিনি। বেশির ভাগ সময় পুলিশ-প্রশাসনের তরফেই তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় মমতার আদর্শে দীক্ষিত তীর্থর।