“আসামে এন আর সির মাধ্যমে চল্লিশ লক্ষ ঘুসপেটিয়া (অবৈধ বাংলাদেশি) চিহ্নিত হয়েছে।”- বক্তা আসাম বিজেপির মুখ হিমন্ত বিশ্বেশর্মা। বাঙালিকে বারবার ‘উইপোকা’, ‘ঘুসপেটিয়া’ বলে অপমান করেছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিভিন্ন সময়ে এন আর সির খসড়া থেকে বাদ পড়া ৩৮ লাখ বাঙালি (২৮ লাখ হিন্দু) কে বাংলাদেশে তাড়াতে তোপ দেগেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু, আজ দিল্লীতে হিমন্ত বিশ্বেশর্মার বক্তব্যে শোরগোল পড়ে গেছে আসামের বাঙালির মধ্যে। এন আর সির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়নি এখনও, নাম বাদ পড়েছে লাখ লাখ বৈধ ভারতীয়র। তাহলে সরকারে থাকা ক্ষমতাশালী হিমন্ত কিভাবে এই মন্তব্য করলেন?
একদিকে নাগরিকত্ব বিলের নামে হিন্দু বাঙালিকে বোকা বানানোর চেষ্টা, অন্যদিকে অসমিয়া সংরক্ষণের কথা বলে বাঙালিকে দাস বানানোর চেষ্টা- আসামে বিজেপি এখন দুমুখো সাপ। নাগরিকত্ব বিল এখনও এলই না রাজ্য সভায়, কিন্তু বিলের নামে বাঙালিকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। বিলে নাগরিকত্বের উল্লেখ নেই, কিন্তু বলা হয়েছে সমস্ত হিন্দু উদ্বাস্তু বাঙালিকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে আসাম চুক্তির ছয় ধারাকে কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর বিজেপি। গঠিত হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি, যেখানে কোনো বাঙালি মুখ নেই। এই ধারা কার্যকর হলে আসামে বাঙালি দাস হয়ে যাবে। ভোটে লড়ার অধিকার, চাকরি-বাকরি-ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার, জমি-বাড়ির অধিকার সীমিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ বাঙালি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে বাঁচবে।
আসামে বিজেপির এই দুমুখো নীতির ফলে আসামে আশির দশকের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মুখে। গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে বাঙালি আতঙ্কে প্রহর গুনছে, আবার গণহত্যা শুরু না হয়! নাগরিকত্ব বিল বিরোধী বিক্ষোভে আসাম সহ উত্তর-পূর্বে আগুন জ্বলছে। বাঙালিকে আসাম ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রকাশ্য হুমকিও।
একদিকে বাঙালি হিন্দুর রক্ষাকর্তা প্রমাণ করতে চায় বিজেপি। আবার এন আর সিতে নাম উঠে যাওয়া আসামের আপামর বাঙালিকে(হিন্দু বাঙালি সহ) দাস বানাতেও চায়। ঐদিকে অসমিয়াদের সংরক্ষণ করে, ৬ টি জনগোষ্ঠীর জনজাতিকরণ করণ করতেও উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। পুরো প্রক্রিয়ায় বাঙালির ক্ষতি। নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে কয়েকলাখ হিন্দু বাঙালি শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় পাবে মাত্র, তবে আসামে থাকতে পারবে না। উদ্বাস্তু হতেই হবে, গন্তব্য হবে বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্য। নাগরিক থেকে হয়ে ‘শরণার্থী’ হয়ে যাবে উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালি।
লোকসভা ভোটের আগে আসামে আগুন জ্বালাতে চায় বিজেপি। নাগরিকত্ব বিলের নামে হিন্দু-মুসলিম রাজনীতি করাই একমাত্র লক্ষ্য। এতে আসামের বাঙালির সমূহ ক্ষতি। কিন্তু বিজেপির চোখ যে বাংলা সহ অন্যান্য বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যের লোকসভা সীট দখলে। এবং হিন্দুদের সুরক্ষা দিচ্ছে এই নামে হিন্দু ভোট পোলারাইজ করতে চায় বিজেপি। কারণ বিজেপি সরকার ব্যর্থ, চাপে। রাম মন্দির ইস্যুতে ব্যাকফুটে বিজেপি, পাঁচ রাজ্যে হারার পর হিন্দু বাঙালিকে দাবার বোড়ে করে এগোতে চাইছে বিজেপি। যার পরিণাম- আসামের বাঙালি আবারও গণহত্যার মুখে, বাঙালি-অসমিয়া সম্পর্ক তলানীতে।