বাংলায় তাদের রাজনৈতিক রথযাত্রার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রথম থেকেই যথেষ্ট চাপে রয়েছে বিজেপি। বারবারই হাইকোর্টের দুয়ারে রথ মুখ থুবড়ে পড়ায় ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছে গেরুয়া শিবির। তাই দলের রাজনৈতিক রথযাত্রা নিয়ে আইনি জটিলতা না কাটলে আপাতত বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনটাই জানা গিয়েছে বিজেপি সূত্রে।
এর আগে অন্তত দু’বার নিজেই বাংলায় যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি। কিন্তু শেষমুহূর্তে তাঁর অফিস থেকে জানানো হয়, নির্ধারিত দিনে তিনি বাংলায় যাচ্ছেন না। যে কারণে এমনিতেই রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট মুখ পুড়েছে বঙ্গ বিজেপির। রথ নিয়ে আইনি জটিলতা কাটার আগে অমিত শাহ যদি দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বাংলায় না আসেন, তাহলে তাদেরই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছে দলের রাজ্য নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, শাহ যেভাবে বারবার তার বাংলা সফরের কথা ঘোষণা করার পর মুহূর্তেই তা বাতিল করে দিচ্ছেন, তাতেও রাজ্যবাসী এবং কর্মী-সমর্থকদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করছে রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশ। যার ফলে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দলকে আরও বেকায়দায় পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন বঙ্গ বিজেপি।
দলের অন্দরের খবর, রথ থমকে যাওয়ায় বিজেপির রাজ্য নেতাদের উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন অমিত শাহ। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে দলের গণতন্ত্র বাঁচাও পদযাত্রা কর্মসূচির বকলমে রাজনৈতিক রথযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার সঞ্চার হলেও আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে তা ফের মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনকি গতকাল সুপ্রিম কোর্ট এই ইস্যুতে বিজেপির ‘আর্জেন্ট হিয়ারিং’য়ের আবেদনও নাকচ করে দেওয়ায় বিজেপি নেতৃত্ব আরও মুষড়ে পড়েছে।
পাশাপাশি বিজেপির নেতারা মনে করছেন, আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে এই বিষয়ে কোনও ফয়সলা হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির পরবর্তী বঙ্গ সফরের সম্ভাবনাও কার্যত বিশ বাঁও জলে। দলীয় সূত্রের খবর, দু’দফায় বাংলায় রথযাত্রার দিন ঘোষণা করেও তার বাস্তবায়ন না ঘটানোর বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট অমিত শাহ নিজে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর দিল্লিতে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, নির্ধারিত দিনে রথযাত্রা করা না গেলেও পরের দিন, ৮ ডিসেম্বর তিনি কলকাতা যাবেন। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর রাতেই তাঁর কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অমিত শাহ বাংলায় যাচ্ছেন না। এরপর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠকে বাংলার পদাধিকারীদের তিনি জানান, ২২ ডিসেম্বর তিনি পশ্চিমবঙ্গে যাবেন। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে তাও বাতিল করা হয়। এবং শেষে বিজেপির বঙ্গ নেতৃত্বকে দিল্লিতে বৈঠকে ডেকেও তাতে অমিত শাহ হাজির হননি তিনি।
লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে অন্তত ২২টি কেন্দ্রে জয়ের ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখিয়েছেন খোদ শাহই। কিন্তু ভোটের প্রাক্কালে তাঁর দ্বারা বাংলা এবং বাংলার বিজেপি নেতাদের এমন এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।