বাংলার জমি নাকি ‘পদ্ম’ ফোটানোর জন্য আদর্শ স্থান! এ রাজ্য থেকে অন্তত ২২টা লোকসভা আসন জিতে দেখানো তাঁদের লক্ষ্য। বরাবরই এমন সব দাবি করে এসেছেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ-সহ বাকি সব রাজ্য নেতারা। কিন্তু এবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্যের নানা প্রান্ত ঘুরে সমীক্ষা চালিয়ে বিজেপিরই একটি নিজস্ব দল রিপোর্ট দিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বাংলার একটাও লোকসভা আসন গেরুয়া ঝুলিতে যাওয়া নিশ্চিত নয়। বাংলার জমি বিজেপির পক্ষে উর্বর তো নয়ই, বরং বেশ চাপের।
ওই রিপোর্টে সাফ জানানো হয়েছে, ২০১৯য়ে নরেন্দ্র মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে বাংলা থেকে একটাও আসন ছিনিয়ে নেওয়াটা এখনও দুরাশা। তবে সমীক্ষক দলের এমন রিপোর্টের পরেও বিজেপি নেতারা অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও আলোচনাতেই নারাজ। নিজেদের অস্বস্তি এড়াতে তাঁরা রাজ্যে ২২ থেকে ২৫ আসন পাওয়ার দাবিই বজায় রাখছেন।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সমীক্ষক দলটি ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে রাজ্যের জেলা, ব্লক এবং বুথ স্তরে ঘুরে ঘুরে সংগঠনের হাল বুঝছেন। সূত্রের খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটে কোন কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করলে লড়াই ভাল হবে, কেন্দ্র পিছু সমীক্ষা করে সেই তালিকাও তৈরি করতে বলা হয়েছে তাঁদের। ওই সমীক্ষক দলের দায়িত্বে রয়েছেন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-র এক প্রাক্তন নেতা।
এ রাজ্যে সংগঠনের প্রকৃত অবস্থা জানতেই নিজস্ব প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন শাহেরা। ওই দল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা আপামর রাজ্যবাসীকে ভোটবাক্স অবধি টেনে নিয়ে যেতে হলে যে কৌশলী সংগঠন দরকার, এখনও তার অভাব আছে।
এর ফলে লোকসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ এখন আর শুধু রাজ্য নেতৃত্বের পছন্দের ওপরে ছেড়ে রাখতে চান না শাহেরা। তাই এ বার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও পেশাদারিত্ব আনতে সমীক্ষক দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে প্রার্থী করার জন্য এক বা দু’জনের নাম পাঠাবেন রাজ্য নেতৃত্ব। পাশাপাশি, ওই সমীক্ষক দলও করে কেন্দ্র পিছু তিন জনের নাম পাঠাবে। দু’পক্ষের তালিকা মিলিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এভাবে অন্য প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে দলের বিষয়ে সমীক্ষা করানোর মানে আসলে রাজ্য নেতৃত্বের ওপরে আর আস্থা রাখতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে দিলীপ-সহ অন্য রাজ্য নেতারা।