প্রয়াত কিংবদন্তী শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় সবসময়ই তাঁর জীবনে দু’জন মানুষের অবদানের কথা বলে গেছেন৷ বিভিন্ন সময়ে তাঁর কথায় বারেবারে উঠে এসেছে তাঁদের কথা৷ দ্বিজেনবাবু প্রকৃত অর্থে তাঁদের ভক্ত ছিলেন৷ একজন পঙ্কজ কুমার মল্লিক আরেকজন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়৷
পঙ্কজকুমার মল্লিকের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিল অনেকেই। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ও বাদ ছিলেন না। পঙ্কজকুমারের সঙ্গীত শিক্ষার আসরের নিয়মিত ছাত্রও ছিলেন তিনি। আর আধুনিক গানে হেমন্তই ছিলেন দ্বিজেনের আদর্শ। সে কথা প্রকাশ্যে বলতেনও তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আজ যতটুকু হতে পেরেছি, তার বেশির ভাগটাই হেমন্তদার দান।’’
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দায়িত্বে যেবার আকাশবাণীতে মহিষাসুরমর্দিনী রেকর্ডিং হল। দ্বিজেনকে দিয়ে তিনি
গাইয়েছিলেন। তার পরেরটা ইতিহাস। মহালয়ার দিন বাঙালি যে সব গানে আপ্লুত হয়ে পড়ে, তারই অন্যতম ‘জাগো দুর্গা’ দ্বিজেনেরই গাওয়া। মূলত সেই গানটি থেকেই দ্বিজেনের ব্যাপ্তি আরও বাড়তে থাকে৷
সলিল চৌধুরীর সঙ্গে দ্বিজেনের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব সেই আইপিটিএ করার সময় থেকে। সলিলই তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন বম্বে। ১৯৬১তে মুক্তি পায় ‘মায়া’। সেই ছবিতে পর্দায় দ্বিজেনের গানে লিপ দিলেন দেবানন্দ, ‘অ্যায় দিল কাহাঁ তেরি মনজিল’৷ সলিলের সুরে সেই গানে হামিং করতে শোনা গেল লতা মঙ্গেশকরকে। গোটা দেশ মজে গেল দ্বিজেনের গলায়। সঙ্গীত জগতে শুরু হল ‘দ্বিজেন যুগ’৷
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ দ্বারা কিছুদিন আগেই তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাছাড়াও পেয়েছেন সঙ্গীত-নাটক-অ্যাকাডেমি পুরস্কার, সঙ্গীত আনন্দ পুরস্কার। তাঁর প্রতি শোকজ্ঞাপন করে গতকালই মমতা টুইট করেছেন৷ নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকেও বিভিন্ন কথার মাঝে উঠে এসেছে তাঁর কথা৷ রবীন্দ্র সদনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর পূর্ণ সরকারি মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷