বিজেপি যখন ভোটের মুখে রাম-নাম করছে, ঠিক তখনই জামবনির সভা থেকে গেরুয়া শিবিরকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ওদের শ্রী রাম থাকলে, আমাদের মা দুর্গা আছে।’ ঠিক এই ভাষাতেই গতকাল বিজেপিকে তুলোধোনা করেন তিনি।
ধর্মের নামে দাদাগিরি করছে বিজেপি, এমন অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘ওদের শ্রী রাম থাকলে, আমাদের মা দুর্গা আছে। মা দুর্গার পুজো খোদ শ্রী রামচন্দ্রই করেছিলেন। আমরা দেবতাকে বিক্রি করে খাই না। ওরা বিক্রি করে খায়।’ এমনকি বিজেপি রামের নয়, রাবণের পুজো করে বলেও দাবি করেন তিনি।
তাঁর কটাক্ষ, ‘বিজেপি আসলে রাম নয় রাবণের পুজো করে। রামের পুজোটা লোক দেখানো। ওটা দাঙ্গা লাগানো। ওটা অপপ্রচার চালানো। ওটা আগুন জ্বালানো। ওটা বিভেদের রাজনীতি।’ এর পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভোটের আগে কেউ কেউ বিভাজন রাজনীতি করার চেষ্টা করলেও এ রাজ্যে তা চলবে না।
জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে ছত্তিশগড়ে মাও মোকাবিলা না করতে পারার জন্যও মোদীর দলকে একহাত নেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘ছত্তিশগড়ে মাওবাদী দমনে ব্যর্থ বিজেপি। আবার ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদী এনে এ রাজ্যে গণ্ডগোল তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে তারা।’ দলীয়কর্মী এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বাইরে থেকে এসে মাথায় ফেট্টি বেঁধে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। মানুষের কাছে গিয়ে আসল কথাটা তুলে ধরুন।’
বাম জমানার শেষ পর্যায়ে যখন অশান্ত জঙ্গলমহলে প্রতিদিনই রাস্তায় লাশ পড়ে থাকত, সেই সময়কার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘এখানে যখন রক্ত ঝরত, তখন কেউ আসত না। সেই সময়ও আমি এসেছি। পিড়াকাটার জঙ্গলে তিন ঘণ্টা আটকে থেকেছি। কিন্তু দমে যাইনি। বুকে হাত দিয়ে বলুন, আমি আসার পর উন্নয়ন হয়েছে কি হয়নি? কী করিনি! নয়াগ্রামে গেলাম, বলল দিদি একটা স্টেডিয়াম করে দিন। করিনি? কেশিয়াড়িতে গেলাম বলল দিদি ব্রিজ লাগবে। বলুন করেছি কি করিনি? একদিকে সিপিএমের করে যাওয়া দেনা, অন্য দিকে দিল্লির সরকারের টাকা কেটে নেওয়া, এত কিছুর পরেও যা করেছি দুনিয়ার কোনও সরকার করতে পারবে না।’
একইসঙ্গে তিনি জানান, ‘আগে যখন এখানে আসতাম, আমাকে এখানকার মানুষ অভিযোগ করতেন বছরের অর্ধেক সময় না খেয়েই থাকেন তাঁরা। পিঁপড়ে সেদ্ধ খেয়ে দিন কাটান। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর এখন সব মানুষ দু’টাকা কেজি চাল, গম পান। জনপ্রতি মাসে আট কেজি চাল আর তিন কিলো গম দেওয়া হয় সরকার থেকে। অর্থাৎ একজন মাসে ১১কেজি চাল-গম পান। একটা পরিবারে ৫ জন থাকলে সেই পরিবার মাসে ৫৫ কেজি চাল-গম পান। আমি শুনেছি অনেকের এত পরিমাণ চাল-গম লাগেনা। অনেকে আবার তা বিক্রিও করে দেন।’ তাঁর কথায় আদিবাসীদের জন্য রাজ্য সরকার সব ধরনের উন্নয়ন করেছে। ঝাড়খণ্ডে জমি দখল হয়ে যায় কিন্তু ঝাড়গ্রামে হয় না। কারণ এখানে আদিবাসী জমি দখল রক্ষা আইন তৈরি করেছে রাজ্য সরকার।