গতকাল যেন ‘সব পথ এসে, মিলে গেল শেষে’ রেড রোডেই। তাই বাংলার সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি, চেনা ঠিকানা ছেড়ে ভিনদেশে আসা বিদেশিরাও এলেন একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে। আর এসে তাঁরা যা দেখলেন, তাঁদের মতে তা ‘জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না’।
রিও–র কার্নিভাল, স্পেনের লা টমাটিনো, এসবই চেনা নাম। আর যাঁরা বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন, তাঁরা তো এই নামগুলি জানবেনই। কিন্তু কলকাতায়ও যে সমান জাঁকজমকে এক উৎসব হয়, তা এখনও অনেকেরই অজানা ছিল। কিন্তু কাল তা প্রত্যক্ষ করে মূল মঞ্চের দু’পাশে থাকা বিদেশিদের চোখেমুখে বিস্ময়ের ঝিলিক।
উইকিপিডিয়ার হয়ে জার্মানি থেকে কলকাতায় এসেছিলেন দু-এক জন। গোটা পুজোতেই তাঁরা ঘুরে দেখেছেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কার্নিভালেও তাঁদের দেখা গেল ক্যামেরা হাতে। কার্নিভাল দেখে উচ্ছ্বসিত ক্রিস্টিলা জানালেন, জার্মানিতেও এমন কার্নিভাল হয়। সেখানে এমন বিপুল আয়োজন হয় না।
এই একই কথা বলছে আমেরিকা থেকে আগত পর্যটকদের দলও। টার্কার, ইসাবেলরা এসেছেন দল বেঁধে। আড়াই মাস ভারত ঘুরে দেখবেন তাঁরা। পুজোর মধ্যে এসেছেন কলকাতায়। প্যান্ডেল হপিং করেছেন গোটা পুজোয়। শেষে এসেছেন কার্নিভালে। টার্কার জানান, ‘এমন রঙিন উৎসব পৃথিবীর খুব কম জায়গায় হয়। এতদিন ধরে কলকাতার মানুষ আনন্দে মেতে থাকে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নেয়। এতে তো যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।’
সাধারণ পর্যটকরা তো আছেনই, আছেন একাধিক দেশের কনসাল জেনারেলরা। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কলকাতার পুজো কার্নিভাল দেখতে এসেছিলেন ভুটানের কনসাল জেনারেল থিনলে ওয়াংচুক। গোটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় তিনি মুগ্ধ। জানালেন, ‘গতবারের থেকে ধারেভারে এবারের কার্নিভাল অনেকটাই বড় লাগছে। কিন্তু অসামান্য প্রশাসনিক দক্ষতায় পুরোটা সামলাচ্ছে সরকার। অসাধারণ আয়োজন করা হয়েছে।’
কলকাতায় আসার পর প্রথমবারের জন্য কার্নিভালে এসেছেন ফরাসি কনসাল জেনারেল ভের্জিনি কোর্তেভাল। তিনিও জানালেন, ‘এত রঙিন উৎসব কলকাতায় হয়, দেখে আমি মুগ্ধ।’ ইউরোপের একাধিক দেশেও এমন নানা কার্নিভাল হয়ে থাকে, কলকাতার এই উৎসবও সহজে সেই সমস্ত ফেস্টিভালকে টেক্কা দিতে পারে। প্রথমবার দেখেই তিনি তাই মুগ্ধ।
কার্নিভালে বিদেশিদের দর্শকাসনের দিকে তাকালে এমনই নানা মুগ্ধতার ছবি ধরা পড়তে বাধ্য। তবে শুধু আমেরিকা, ইংল্যান্ড বা ইউরোপের অন্য পরিচিত দেশগুলি থেকে নয়, পৃথিবীর প্রায় সমস্ত প্রান্ত থেকেই মানুষ এসেছেন রেড রোডে। প্রতিবেশী দেশ ভুটান, বাংলাদেশ ছাড়াও সুদূর নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক মানুষ এসেছেন শুধু পুজোর ক’টা দিন কলকাতায় কাটাবেন বলে। আর সেই উৎসবের সমাপ্তি পর্বে এমন জমকালো আয়োজন যেন মন ভরিয়ে দিয়েছে সকলেরই। নাচে, গানে, বন্দনায় মুখর হয়ে ওঠা ইতিহাসের রেড রোডে, এক ‘অন্য’ পুজোয় মেতে উঠেছিল গোটা বিশ্বই।