মনকাড়া ছন্দে ঢাকের বোল উঠছে, ঢাকের কাঠি হাতে কোমোর দোলাচ্ছে আট দশ জন মহিলা। মাঝে একজন মানুষ মাথায় ভাঁড় নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচছে। পুরো ব্যাপারটা সঞ্চালনা করছেন গোকুল দাস, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ঢাকি।
ঢাক ছাড়া বাঙালির দুর্গাপুজো হয় না, ঢাকের আওয়াজে অদ্ভুত মাদকতা আছে। ঢাকের তালে কোমর না দুলিয়ে বিসর্জনের কথা বাঙালি ভাবতে পারে না। তবে দুর্গাপুজো সহ অন্যান্য পুজোয় ঢাকের আওয়াজ কমছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিজে। কিন্তু ব্যতিক্রম উত্তর চব্বিশ পরগনার মছলন্দপুরের মতিলাল ঢাকি ডট কম। বেশ কয়েকটা বড় পুজোয় বরাত পেয়েছিল এবার, এমনকি বিদেশেও গেছে ঢাকিরা। আট বছর আগে যাত্রা শুরু, বর্তমানে প্রায় পঞ্চাশ জন বাদক-বাদিকা।
এনাদের বেশিরভাগই মহিলা। হাতে ধরে বাজানো শেখান স্বয়ং গোকুল দাস। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নানা পুজো ও উৎসবে ঢাক বাজান মহিলারা, এমনকি ঢাক বাজানোর পেশায় সঙ্গী বাড়ির খুদেরাও। মতিলাল ঢাকি দলের নানা সদস্য ও সদস্যাদের সাথে আলোচনায় উঠে এল নানা কথা।
ঢাক বাজানো গ্রামের মহিলাগুলোর জীবনে এক স্বনির্ভরতার জায়গা। সাথে সাথে ঢাক বাজিয়ে শিল্পী হিসাবে উপভোগ করেন সকলেই। ঢাকের তালে কেউ কোমর দোলালে প্রশান্তি অনুভব করেন তাঁরা। আজকাল কিছু কিছু বিয়ে বাড়িতে বরাত পাচ্ছেন তাঁরা। আজকাল অনেকেই যেখানে ঢাকির পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন, সেখানে মতিলাল ঢাকি দল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রতি বছর চাহিদা বাড়ছে মহিলা ঢাকি দলের।
ঢাক বাংলার ঐতিহ্য, বহু মানুষের পেটের ভাত। ঢাকের আওয়াজে বাঙালির কোমর দুলুক, বাঁচুক
ঢাকিরা। বাংলার প্রতিটা প্রান্তে প্রতিটা পুজোয় ঢাক বাজুক, ডিজের দৌরাত্ম কমুক। মতিলাল ঢাকি দলের মতো সব জেলায় গজিয়ে উঠুক নানা ঢাকি দল।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)