‘মুম্বইয়ের গণপতি উৎসব দেখেছি। কিন্তু কলকাতায় দুর্গা কার্নিভাল দেখে প্রাণটা ভরে গেল’। এমনই মন্তব্য করলেন নিউজিল্যান্ড থেকে রেড রোডে আসা মুগ্ধ ফ্র্যাঙ্ক রুকম্যান। পাঁচ বন্ধু মিলে এসেছেন বাংলা ঘুরতে। ওয়েবসাইটে দেখে তাঁরা এসেছেন পুজো কার্নিভাল দেখতে।
জার্মানির কবি আরমিন। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এবারই প্রথম কলকাতায় এসেছেন। কার্নিভাল দেখে খুবই খুশি। গলায় একরাশ মুগ্ধতা ঝড়ে পড়ল, ‘এতো রঙের উৎসব। কলারফুল। সত্যি দারুণ’।
হাজার দুয়েক বিদেশি অতিথিদের জন্য আলাদা দু’টি প্যাভিলিয়ন তৈরি ছিল। তাঁদের বোঝানোর জন্য ছিল দোভাষীও। গত দু’বারের চেয়ে এবার বিদেশিদের সংখ্যাও ছিল বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন দুর্গাপুজো শুধু কলকাতা বা রাজ্যে নয়, আন্তর্জাতিকমানের খ্যাতি পাক। সেই উদ্দেশ্য সফল। কার্নিভাল দেখতে আসা বিদেশিদের উজ্জ্বল চোখ-মুখই সেটা বলে দিচ্ছিল। লন্ডনের টেমস ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল রাজ্য সরকার। সেই চুক্তি অনুযায়ী টেমস ফেস্টিভ্যাল থেকেও প্রতিনিধিরা এই পুজো কার্নিভালে হাজির হয়েছেন। তাঁরাও বলে গেছেন, আগামী বছরে আরও অনেকে আসবেন।
হাজির হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কনসাল জেনারেলরাও। কার্নিভাল প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসার জন্য যে রাজবাড়ির দালান তৈরি হয়েছিল, ঠিক একইরকম মঞ্চ তৈরি করা হয় বিদেশিদের জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চের উল্টোদিকেই। প্রত্যেকেই এদিন তারিয়ে তারিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। শুধু জার্মানি বা নিউজিল্যান্ড নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কেনিয়া, চীন, ভুটান, বাংলাদেশ থেকেও অতিথিরা আসেন কার্নিভাল দেখতে। সকলেই এদিনের কার্নিভাল দেখে মুগ্ধ। ফ্রান্সের এক মহিলা পর্যটক আনন্দের সঙ্গে হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমরা উচ্ছ্বসিত। খুব সুন্দর লেগেছে কার্নিভাল’।
এদিন বিকেল চারটের আগেই বিদেশি অতিথিরা তাঁদের নির্ধারিত আসন গ্রহণ করেন। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁরা একটানা বসে গোটা কার্নিভালটি উপভোগ করেছেন। বিভিন্ন পুজো কমিটি যখন মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চের কাছে গান-নাচের মাধ্যমে তাদের থিম তুলে ধরেন, তখন বিদেশি অতিথিরাও হাততালি দিয়ে তাঁদের অভিবাদন জানান। অতিথিদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই প্রমাণ করে দিচ্ছিল, তাঁরা কতটা খুশি। দুর্গা কার্নিভালে বিদেশিদের ব্যাপক উপস্থিতি আর তারিফের মধ্যে দিয়ে কলকাতা জানিয়ে দিল – এশহরও এখন বিশ্বজনীন।