কলকাতার দুর্গা পুজোর মণ্ডপ এবার পাড়ি দিচ্ছে ভিন জেলায়। কোথাও কালীপুজোর মণ্ডপ কিংবা কোথাও জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ হিসাবে ব্যবহৃত হবে সেগুলি। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে দর-দাম। শহরের নামী পুজো কমিটিগুলির কর্তাদের সঙ্গে ভিন জেলার কালী এবং জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির কর্তারা ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করতে শুরু করে দিয়েছেন।
অবশ্য শহরের বেশ কিছু নামী পুজো কমিটি তাদের মণ্ডপ অন্যদের দিতে নারাজ। কেউ কেউ বললেন, তাঁদের মণ্ডপের বাঁধন সহজে খোলা সম্ভব নয়। তাই ভেঙে দিতে হবে। অন্যত্র নিয়ে গিয়ে লাগানো সম্ভব নয়। এই তালিকায় রয়েছে ত্রিধারা সম্মিলনী, যোধপুর ৯৫ পল্লি, টালা পার্ক প্রত্যয় প্রভৃতি।
কলকাতার এক নামী পুজোর কর্তার কথায়, কালীপুজো বলতে আমরা বারাসত ও মধ্যমগ্রাম বুঝি। আবার জগদ্ধাত্রী পুজো বলতে চন্দননগর-রিষড়া। তাই বেশিরভাগ আবেদন-নিবেদন এই জায়গাগুলি থেকেই আসে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে নজরে আসবে, ঝাড়খণ্ড-পাটনা থেকেও বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি কলকাতা থেকে মণ্ডপ নিয়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার নামী পুজোগুলির তালিকায় শক্তপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ লাগোয়া ৬৬ পল্লি। পেয়েছে একাধিক পুরস্কার। এবার এই কমিটির মণ্ডপ পেতে হাজির হয়েছেন রিষড়া ও চন্দননগরের দু’টি জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির কর্তারা। এখানকার সভাপতি রতন সেনগুপ্ত বললেন, দু’টি কমিটির সঙ্গে কথা চলছে। পুরো বিষয়টি দু’-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কালীপুজোর জন্য বারাসত থেকে একটি কমিটি এসেছিল। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের এই মণ্ডপ খুলে নিয়ে গিয়ে নতুন করে বসানো সম্ভব হবে না।
দক্ষিণ শহরতলির বুড়োশিবতলা জনকল্যাণের দুর্গামণ্ডপের জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির একটি কালীপুজো কমিটি যোগাযোগ করেছিল। সেখানেই যেতে চলেছে এই মণ্ডপ। চন্দননগরের একটি কমিটি জনকল্যাণের মণ্ডপ নিজেদের জগদ্ধাত্রীপুজোয় ব্যবহার করতে চলেছে। দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দিরের পুজো মণ্ডপও এবার নজর কেড়েছিল দর্শকদের। অলীক সুখের মোহ ছেড়ে শিকড়ের টানে মাটিতে ফেরার আহ্বানকে এবার থিম করেছিল শিবমন্দির সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি। সেই মণ্ডপই তুলে নিয়ে যাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার একটি কালীপুজো কমিটি। শিবমন্দিরের অন্যতম কর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, হাবড়ার ওই কালীপুজো কমিটি যোগাযোগ করেছিল। আমরা সায় দিয়েছি।
অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার নবীন পল্লির এক কর্তা বললেন, উত্তর ২৪ পরগনার একটি কমিটির কালীপুজোয় আমাদের মণ্ডপ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কথা অনেকটাই এগিয়েছে। দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুরের অজেয় সংহতির কর্তারাও বললেন, প্রাথমিক কথাবার্তা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘের কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ২৩ অক্টোবরের কার্নিভালের পরই আমরা মণ্ডপ নিয়ে আবেদনকারী কমিটিগুলির সঙ্গে বসব। জগদ্ধাত্রী বা কালীপুজোয় কোথায় মণ্ডপ যাবে, তা নিয়ে মঙ্গলবারের পরই সিদ্ধান্ত হবে।
তবে বেহালা নূতন দলের মণ্ডপ কোনও পুজো কমিটিকে নয়, হিডকোর অধীনস্থ ইকো পার্কে অথবা বেঙ্গালুরুর আর্কিওলজিক্যাল এগজিবিশনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নূতন দলের এক কর্তা জানান, সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়েছে। ইকো পার্কে হয়তো স্থান পাচ্ছে আমাদের এই মণ্ডপ। তবে বেঙ্গালুরুর আর্কিওলজিক্যাল এগজিবিশন আয়োজনকারী কর্তারাও কথা বলেছেন। সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পূর্ব কলকাতার তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপ এবার মধ্যমগ্রামে একটি কালীপুজোয় শোভা পাবে। এখানকার পুজো কমিটির কর্তা রানা দাস জানান, মধ্যমগ্রামের একটি কালীপুজো কমিটি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিল। সেই মতোই যাবতীয় বিষয় এগিয়েছে।
বেহালার বড়িশা ক্লাবের অনবদ্য মণ্ডপ এবার জগদ্ধাত্রী পুজোয় স্থান পেতে চলেছে। এই মণ্ডপ এবার চন্দননগরের একটি পুজো কমিটি বড়িশা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।