ফের কলকাতায় বড়সড় সাফল্য পেল লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এসটিএফ- এর হাতে ধরা পড়ল উত্তর-পূর্বের এক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা। ধৃত জঙ্গির নাম আমন নেলসন সিং ওরফে চিংখেই খুমান। শনিবার রাতে ধর্মতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ। যা ভিন রাজ্য থেকে আনা হয়েছিল বলে খবর। এরাজ্যে মাওবাদী সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য সে কাজ করছিল কি না, তা ধৃতকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছেন অফিসাররা। ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, কাংলেইপিক কমিউনিস্ট পার্টির স্বঘোষিত চেয়ারম্যান এই জঙ্গি নেতা। নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আরো বেশকয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই সংগঠনটি মণিপুরের মাওবাদী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। এদের সঙ্গে নেপালের মাওবাদীদের নিত্য যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
কিছুদিন আগে লেক থানা এলাকায় একটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে এসটিএফের কর্তারা বুঝতে পারেন, এরাজ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কাংগলেইপাক কমিউনিস্ট পাটি (কেসিপি) সংগঠনের সদস্যদের যাতায়াত রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় এই জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন সদস্য ধরাও পড়ে। তাদের কাছ থেকেই জানা যায়, সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বসে বৈঠক করছে। এখান থেকেই তোলা দাবি করে ফোন যাচ্ছে মণিপুরের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। টাকার লেনদেনও হচ্ছে এখানেই। জানা যায়, সংগঠনের শীর্ষ নেতা আমন নেলসন সিং এখানে ঘাঁটি গেড়েছে। এরপরই তার খোঁজ শুরু হয়। তার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য আসার পরই ওই জঙ্গির গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করেন এসটিএফের অফিসাররা। সেখান থেকেই খবর আসে, শনিবার তার কলকাতায় আসার কথা। এখান থেকেই তার উত্তর পূর্ব ভারতে যাওয়ার কথা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে। শনিবার রাতে ধর্মতলা এলাকায় আসামাত্রই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে নাইন এম এম এবং সেভেন এম এম পিস্তল এবং কার্তুজ। ধৃতকে জেরা করে এই জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্রভাণ্ডারের খোঁজ চলছে।
ধৃত জঙ্গি জেরার সময়ে পুলিশকে জানিয়েছে, এখান থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মণিপুরে। মূলত ছোট আগ্নেয়াস্ত্র যাচ্ছে সেখানে। মুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসার পর কলকাতায় এনে রাখা হচ্ছে। তারপর তা ট্রেনে করে যাচ্ছে উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। তবে এসএলআর ও একে সিরিজের মতো আগ্নেয়াস্ত্র মায়নামার থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারী অফিসাররা জেনেছেন, মণিপুরের এই জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে মাওবাদীদের যোগাযোগ রয়েছে। মাওবাদীদের কাছে একে সিরিজ ও এসএলআর রাইফেল তাদের মাধ্যমেই যাচ্ছে। ধৃত নেতাও বিভিন্ন শীর্ষ মাও নেতার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মাও নেতারা তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিতেও এসেছেন। দুই সংগঠন মিলে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার পরিকল্পনাও করেছে। যার কিছু নথি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তবে এরাজ্যে এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের উপস্থিতি চিন্তা বাড়িয়েছে অফিসারদের। কারণ জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদীরা ভেঙে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে। এজন্য বিহারের মাও নেতাদের সাহায্যও তারা পাচ্ছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, মণিপুরের এই সংগঠনটির সঙ্গে এরাজ্যের মাও সংগঠনের যোগাযোগ হয়ে থাকতে পারে। তবে এই বিষয়ে এখনও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ চলছে। বিশেষত ধৃত জঙ্গি নেতার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ এরাজ্যের কোনও মাওবাদী নেতার হাতে গিয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। সেই কারণে তাকে দীর্ঘ জেরা শুরু করেছেন তাঁরা।
দিন কয়েক আগেই দিল্লিতে এই সংগঠনের এক মাথাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। সে দিল্লির কয়েকজন ব্যবসায়ীকে তোলা চেয়ে ফোন করেছিল। ওই সংগঠনের স্বঘোষিত সম্পাদক মৈরাংথেম। তারপর কলকাতায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছে।