নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আবার বোমা ফাটাল কংগ্রেস। এবার অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের বাঁচাতে কয়লা আমদানিতে ২৯ হাজার কোটির দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
বিপুল অঙ্কের এই কেলেঙ্কারিতে দাম চড়িয়ে কয়লা আমদানির জন্য অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে গৌতম আদানি ও অনিল আম্বানিদের সংস্থা ও এসার গোষ্ঠী–সহ দেশের মোট ৪০টি কোম্পানি। ২০১৪–র অক্টোবর থেকে এই কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিরেক্টর অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স। মূল অভিযোগ, ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির ব্যবহারের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতে আমদানি করা কয়লার দাম অত্যধিক চড়িয়ে দেখিয়েছিল এরা। এই বাড়তি টাকা আত্মসাৎ করার পর আবার বেশি দাম দিয়ে কয়লা কেনার কারণ দেখিয়ে বিদ্যুতের দামের ওপর সরকারের থেকে বাড়তি ভর্তুকি আদায় করা হয়েছিল।
এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত থমকে রয়েছে কেন, এই প্রশ্ন তুলে সোমবার কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, মোদির বন্ধু শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে, এবং সত্য সামনে এলে সরকার নড়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই গত ৪ বছর ধরে তদন্ত আটকে রাখা হয়েছে। রমেশের প্রশ্ন, সিবিআই সরকারের সঙ্গে তদন্তে সহযোগিতা করছে না কেন? তা ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহারকারী সংস্থা এনটিপিসি, এমএমটিসি–র আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এই মামলাতেই সিবিআই এফআইআর করলেও কয়লা আমদানিকারী সংস্থার বিরুদ্ধে এগোনো হয়নি কার স্বার্থে?
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস গত ৩ বছরে মোদির তিনবার সিঙ্গাপুর সফরের প্রসঙ্গও তুলেছে। সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গ আসার কারণ, ৪ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত আটকে ছিল সিঙ্গাপুরের আদালতের নির্দেশের কারণে। অভিযুক্ত গৌতম আদানির কোম্পানি সিঙ্গাপুরে একটি মামলা করে দাবি জানায়, ভারতকে যেন কয়লা আমদানি সম্পর্কিত নথি না দেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি হত সিঙ্গাপুরের এক কোম্পানি মারফত। সিঙ্গাপুর আদালত ভারতকে নথি দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর ২০১৬ সালের ২০ মে অর্থ মন্ত্রকের রেভিনিউ সচিব হাসমুখ আড়িয়া স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তৎকালীন চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়ে কয়লা আমদানি–সংক্রান্ত নথি দিতে বলেন। কিন্তু তার ঠিক ৪ দিন পর অরুন্ধতী আড়িয়াকে চিঠি লিখে জানান, সিঙ্গাপুর আদালতের নির্দেশ থাকায় তাঁরা সরকারকে নথি দিতে পারবেন না। ফলে নথি–জটে আটকে যায় তদন্ত।
এর মধ্যে দিন ছয়েক আগে সিঙ্গাপুর আদালত তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। কিন্তু তার পরেই ২৮ আগস্ট আদানি তড়িঘড়ি মুম্বই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আবার একই ভাবে ডিআরআই–কে নথি না–দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ডিআরআইয়ের তদন্ত আটকে থাকায় দিল্লি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করে বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। কিন্তু ডিআরআই তার বিরোধিতা করে।