যাকে বলে কেলোর কীর্তি! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই ঘটেছে।
প্রবল চাপে যাদবপুরের সিন্ডিকেট। আলিমুদ্দিনের কার্ড হোল্ডার অধ্যাপক-মাতব্বর চালিত প্রবেশিকার সিন্ডিকেট পুরোপুরি বেকায়দায়।
শুধু ইতিহাসে নয়। এবার চাপের মুখে সব বিষয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়েই তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে কলা বিভাগের ৬ টি বিষয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।কমিটিতে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ অস্থায়ী উপাচার্য এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আশুতোষ ঘোষ।
গোটা ঘটনায় বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সাফ বলে দেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, প্রবেশিকার প্রয়োজন নেই। এখন প্রবেশিকা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। যারা পেয়েছে, তাদের তো নম্বর বেড়েছে। তদন্ত করেই বিষয়টা খতিয়ে দেখা উচিত’।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসমিতির বৈঠক শুরুর আগে ৬ টি বিভাগের প্রবেশিকার পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্তের দাবিতে তৃণমূলের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং ছাত্র সংগঠন মিছিল করে। উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। এর পরেই পুরো প্রক্রিয়া তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় কর্মসমিতি। সহ-উপাচার্য প্রদীপ ঘোষ জানান, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নাম এখনও ঠিক হয়নি। এই নাম ঠিক করে, তাঁর সঙ্গে কথা বলেই, কত দিনে রিপোর্ট দিতে হবে তা ঠিক করা হবে’।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ লড়াই এবং অনশনের পরে আর্টস কলা বিভাগের ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তুলনামূলক সাহিত্য এবং দর্শন – এই ছ’টি বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছিলেন যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা। সেই মতো শুরুও হয় ভর্তি প্রক্রিয়া। কিন্তু অভিযোগ উঠেছিল সেই ভর্তি পদ্ধতিতেই নাকি অস্বচ্ছতা রয়েছে। ইতিহাস বিভাগের মেধাতালিকা প্রকাশের পরেই এই অভিযোগ সামনে আসে। অভিযোগ উঠেছে, উচ্চমাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পাওয়া ১০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া প্রবেশিকায় দশেরও কম নম্বর পেয়েছেন। এমনকি ২১৬ জনের মেধাতালিকায় ১২০ জনের সঙ্গেই এমন হয়েছে। ৩৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বেশিরভাগের নম্বর ছিল তাৎপর্যপূর্ণভাবে অত্যন্ত কম। কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বিষয়ে ‘অভিযোগ’ পেয়েছেন তাঁরা। তাই অ্যাডমিশন কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ইতিহাসের প্রবেশিকা পরীক্ষার উত্তরপত্রগুলি আবার মূল্যায়ন করা হবে। এবং বাকি পাঁচটি বিষয়েও সমস্ত খাতার নম্বর পুনরায় যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দ্বিতীয়বারের উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করা হয় বাইরের অধ্যাপকেদের দিয়ে। মেধাতালিকা প্রকাশ হতে দেখা যায় নম্বরের ব্যাপক হেরফের হয়েছে। শূন্য পাওয়া পড়ুয়াদের নম্বর বেড়ে হয় ৭। প্রশ্ন ওঠে বিশ্ববিদ্যাল্যের শিক্ষকেরা খাতা দেখলে একরকম আর বাইরের শিক্ষকেরা খাতা দেখলে অন্য নম্বর হয় কী করে?
এরপরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রবেশিকা পরীক্ষার মূল্যায়নে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলা বিভাগের ৬ টি বিষয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার তদন্ত করার দাবি জানান। এরপরেই কর্মসমিতির বৈঠকে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে গত কয়েকদশক ধরে যে চরম দূর্নীতি চলছিল তা আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। প্রবেশিকার সব বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হওয়ায় কপালে ভাঁজ সিন্ডিকেটের তালেবরদের।