বারোজন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অল্প দামে পুষ্টিকর খাবার বিক্রির এক অভিনব উদ্যোগ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। পোশাকি নাম ‘ভবিষ্য শক্তি উদ্যোগ’।
একটি মোবাইল ভ্যানকেই রুপ দেওয়া হয়েছে ভ্রাম্যমান রান্নাঘরের। রান্না করার সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবস্থা মজুত সেখানে। এই ভ্রাম্যমান গাড়িটি সল্টলেকের বিভিন্ন অফিস চত্বরে গিয়ে তাদের খাবার বিক্রি করবে।
যে বারো জন মহিলাকে নিয়ে এই উদ্যোগটি শুরু হয়েছে তাঁরা সকলেই বস্তিবাসী। পরিচারিকা বা আয়ার কাজ করে সংসার চালান। এই উদ্যোগটি সফল হলে বাড়তি আর্থিক স্বচ্ছলতাও আসবে।
তবে শুধু আর্থিক স্বচ্ছলতা নয়, এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তা হলো অপুষ্টি।এই শহরের বস্তিবাসী মা ও শিশুদের অপুষ্টির হার সংখ্যাতত্বের বিচারে বেশ ভীতিজনক। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ মা ও শিশুরা অপুষ্টির অভাবে ভোগেন।
এই সমস্যার সমাধানে কথা মাথায় রেখেই কেমব্রিজের সংস্থা ‘নিড ফর নিউট্রিশন এডুকেশন প্রোগ্রাম’ (নেডপ্রো) এবং কলকাতার ‘রেমেডি ক্লিনিক স্টাডি গ্রুপ’ যৌথভাবে এগিয়ে আসে।এটা প্রায় আড়াই বছর আগের কথা। কলকাতার দুটি বস্তিতে কাজ শুরু হয়। একটি বস্তি আর জি কর খাল সংলগ্ন এলাকার এবং অন্যটি চেতলা লকগেট এলাকার। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বাচ্চা ও মায়েদের বিনামুল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং পুষ্টিকর খাবারের সম্পর্কে তাঁদের সচেতনতা তৈরি। পরবর্তীকালে এই শহরের আরও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ইনার হুইল ক্লাব অফ গ্রেটার ক্যালকাটা’ হাত মেলায়।
অপুষ্টি থেকে অব্যাহতি, স্বাস্থ্যের উন্নতি, এবং রোগ প্রতিরোধ এই তিনটি বিষয়কে মাথায় রেখে এই দুই বস্তির মহিলাদের কম খরচে পুষ্টিকর রান্নার প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ‘রেমেডি ক্লিনিক স্টাডি গ্রুপ’-এর অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানও ‘ইনার হুলের’ স্বেচ্ছাসেবীরাই। রান্না শেখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে রান্না এবং তা পরিবেশনের উপরেও জোর দেওয়া হয়। আর এখান থেকেই ভ্রাম্যমান রান্নাঘরের মাধ্যমে খাবার বিক্রির প্রচেষ্টা শুরু হয়।
গত ২৩শে আগস্ট সল্টলেকে ওয়েবেল মোড়ে এই ভ্রাম্যমান রান্নাঘর থেকে প্রথম খাবার বিক্রি করা হয়। কি ছিল মেনুতে? গোলারুটি, সয়াবিনের বীজ আর সবজির তরকারি, পালং শাকের কাটলেট, ডিম সিদ্ধ, বাদাম ও তিলের চাকতি। রেমেডি গ্রুপের তরফ থেকে ডঃ সোমনাথ ভড় জানাচ্ছেন প্রথম দিন যা খাবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। অফিসের বিরতিতে যারা খাবার কিনে খেয়েছেন, তাঁরা সবাই খাবারের মান নিয়ে প্রশংসা করেছেন।
নেডপ্রো-র অন্যতম কর্ণধার ডঃ সুমন্ত্র রে জানিয়েছেন, এবার থেকে এই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলারা সপ্তাহে একদিন বা দুদিন বিভিন্ন অফিস চত্বরে গিয়ে তাঁদের খাবার বিক্রি করবেন। আপাতত সল্টলেকেই দেখা মিলবে এই ভ্রাম্যমান রান্নাঘরের। ডঃ ভড় জানিয়েছেন এই দুটি বস্তির মতো আরও অন্য বস্তির মহিলাদেরও তাঁরা এই উদ্যোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়লে সপ্তাহের সব ক’টা কাজের দিনেই এই ভ্রাম্যমান রান্নাঘর পৌঁছে যাবে বিভিন্ন অফিস চত্বরে।
এই খাবার বিক্রি করে যে আয় হবে তার সিংহভাগ তুলে দেওয়া হবে ওই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলাদের হাতেই। আর্থিক স্বচ্ছলতা অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করার যোগ্য সহায়ক হয়ে উঠবে।