আচ্ছা এরকম কতবার হয়েছে? আপনি রীতিমত প্রতিজ্ঞা করেছেন নিজের কাছে- আর নয়। কাল থেকেই জোর কদমে এক্সারসাইজ করা শুরু করে দেবেন। এবার ওজন কমিয়েই ছাড়বেন। সেইমতো পরের দিন সকাল থেকে ঘাম ঝরানোও শুরু করে দিলেন।
কিন্তু ওই পর্যন্তই। দু-দিন পরেই নানা অজুহাতে এক্সারসাইজ স্কিপ করা শুরু করে দিলেন। আজ অফিসের তাড়া। তো কাল ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো। পরশু অন্য আর একটা কারণ। অর্থাৎ আবার যেমনকে তেমন। ওজনও দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
আচ্ছা কখনো তলিয়ে ভেবেছেন কেন এমনটা হয়। কেন বারবার শুরু করেও নিয়মিত এক্সারসাইজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। অথচ নিয়মিত ব্যায়াম করার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। চলুন তাহলে। সমস্যাটার গভীরে ঢুকে একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক।
এক্সারসাইজ করার মোটিভেশন বজায় রাখার প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে আপনি ব্যাপারটা উপভোগ করছেন কিনা। বিভিন্ন ওয়র্কআউট রেজিম রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলোই আপনার জন্য যথাযথ নাও হতে পারেন। জিমে গিয়ে ট্রেডমিল করতে হয়তো আপনার একঘেয়ে লাগে।
অথচ দেখলেন পার্টিতে ঘণ্টাখানেক একনাগাড়ে নেচে যেতে আপনার কোনও অসুবিধা হয়না। তাহলে জিমে না গিয়ে আপনার কোনও ডান্স ওয়র্কআউট ক্লাসে যোগ দেওয়া ভালো। বা আপনার হয়তো সাঁতার কাটতে ভালো লাগে। তা সেটাই বা মন্দ কি? এই ভাবেই নিজের ভালো লাগার জায়গাটা বুঝে নিজের ওয়ার্ক আউট রেজিম বেছে নিন। নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখাটাই বড়ো কথা- এটা মাথায় রাখবেন।
বেশিরভাগ মানুষই আজকাল সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত। ফলে আলাদা করে কোনও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি হয়না। এবং আমরা তার প্রয়োজনও মনে করিনা। স্বাভাবিক ভাবেই তাই এক্সারসাইজ করার মোটিভেশনও আসেনা। সারাদিন অফিসের কিউবিকলে বসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করুন। ইন্টারকমে কফি অর্ডার না করে, নিজেই একবার ক্যান্টিনে গিয়ে কফি খেয়ে আসুন। অফিসে করা যায় নানা ধরনের এক্সারসাইজ আছে। নিয়মিত অভ্যাস করুন। বাড়িতেও ছোট ছোট কাজ করে অ্যাক্টিভ থাকার চেষ্টা করুন।
অতিরিক্ত জাঙ্কফুড খাওয়ার অভ্যাসও একটা কারণ হতে পারে। জাঙ্ক ফুড আমাদের মধ্যে একটা ক্লান্তিবোধ তৈরি করে। কারণ এই ধরনের খাবারে পুষ্টিকর কোনও কিছু থাকেনা বললেই চলে। আর এনার্জি লেভেল যদি লো হয়, তাহলে এক্সারসাইজের মতো ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিতে উৎসাহ না পাওয়াই স্বাভাবিক। সুতরাং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করাটা জরুরি।
এক্সারসাইজ করার সময় আপনি সঠিক পোশাক নির্বাচন করছেন তো? এটা কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে আপনার এক্সারসাইজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলার পিছনে।বডি স্ট্রেচিং করার সময় পোশাক অনেক সময়েই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আপনি অস্বস্তিবোধ করেন। তাই যে পোশাকে আপনি এক্সারসাইজ করতে কমফোর্টেবল সেই পোশাকেই করুন।
এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে আসি। সময়ের অভাবকে আমরা অনেক সময়েই এক্সারসাইজ না করার কারণ হিসেবে অজুহাত খাড়া করি। একটু খেয়াল করে দেখবেন অফিস থেকে ফিরে আপনি কিন্তু পছন্দের সিরিয়ালটা বা নেটফ্লিক্স দেখার ঠিকই সময় পান। সঙ্গে হয়তো প্রিয় স্ন্যাক্সে মুখও চলতে থাকে।
পছন্দের সিরিয়াল দেখতে মোটেই বারণ করছিনা। তবে টিভি দেখতে দেখতেই যদি এক্সারসাইজ চলে, তবে মন্দ হয়না। ইন্টারেস্টিং কোনও দৃশ্যে আপনি না হয় একটা ব্রেক নেবেন।
এতো কিছুর পরেও এক্সারসাইজ করতে ভালো লাগেনা? সেতো অনেকের দাঁত মাজতে ভালো লাগেনা। কিন্তু দাঁত তো মাজতেই হয়। ব্যাপারটা অনেকটা সেভাবেই দেখুন। এক্সারসাইজকে দৈনন্দিন জীবনের একটা জরুরি কাজ হিসেবে দেখুন। অন্তত আধঘণ্টা সময় বরাদ্দ করুন।
আর এক্সারসাইজ করার সময় মনে রাখবেন।
১. নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এনার্জিতে টগবগ করবেন। দেখবেন অনেকটা ভালো বোধ করছেন। যাকে বলে ফিল গুড ফ্যাক্টর।
২. এক্সারসাইজ আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখবে।
৩. এক্সারসাইজ করলে আপনি রাতে ভালো ভাবে ঘুমোতে পারবেন। আর হেলদি লাইফস্টাইলের ক্ষেত্রে ভালো ঘুম কতটা জরুরি আপনাকে তা আর বুঝিয়ে বলতে হবেনা।
সুতরাং দেরি না করে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস শুরু করুন।