মঞ্জরীর হঠাৎ মোটা হওয়ার সাধ হয়েছে। নানা রকম সাধ আহ্লাদের মধ্যে এটাও অন্যতম। কিছুদিন আগে তার হঠাৎ করে শেফ হওয়ার সাধ হয়েছিল। বাড়ীতে কদিন খুব চললো ইতালিয়ান পাস্তা, স্পাগেত্তি তো কখনো পিৎজা, বার্গার। খেতে খুব আহামরি না হলেও বাড়ীতে সবাই সোনামুখ করে খেয়ে নিয়েছিল।
সব কিছুই যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়, এটাও তাই হলো। এখন যথারীতি বাঙালীর সুখ দুঃখের সঙ্গী মাছ ভাতই হচ্ছে বাড়ীতে, যদিও স্বামীর থেকে বকা খাওয়ার আশঙ্কায় মঞ্জরী বলছে – ওসব নাকি বিদেশী খাবার, আমাদের দেশী পেটে বেশী দিন সইবে কেন? তাই সকলের স্বাস্থ্যের দিক টা মাথায় রেখেই সে তার রন্ধন পটীয়সী হবার অপরিসীম দক্ষতা স্তিমিত রেখেছে।
ঐ যে কথা বলছিলাম, মঞ্জরীর মোটা হবার সাধ জেগেছে। বেশীর ভাগ জামা কাপড়ই তার গায়ে ঢিলে। দোকানে গিয়ে জামা কাপড় বাছতে বাছতে ক্লান্ত হয়ে যায় মঞ্জরী।শুধু এল আর এক্সেল, তাহলে কি দুনিয়াতে কি মোটা লোকের সংখ্যাই বেশী? এই যদি সবাই মোটা, তাহলে তার গায়ে একটু মাংস লাগে না কেন? উফফ্ ভগবান।
এই তো অসীম সেদিন এত সুন্দর একটা ড্রেস কিনে আনল এনিভার্সারি গিফট বলে, পড়েও ছিল মঞ্জরী সাধ করে। ওমা একি! এ যে পুরো কাকতাড়ুয়া। রাগে, দুঃখে চোখ ফেটে জল আসছিল মঞ্জরীর। শোয়ার ঘরের বালিশ গুলো সব ভিজে একাকার। যদিও অসীম কান্না থামানোর অনেক চেষ্টা করেছে এই বলে, কেঁদো না জরী, তুমি তো স্লিমই আছো, সবাই কি আর কারভি হয়? ও বাবা কান্না থামার বদলে উত্তরোত্তর বেড়েই চললো।
শোক প্রকাশের ঠেলা সামলাতে হয় অসীম আর তাদের সাত বছরের ছেলে বুবুলকে।
বাড়ীতে রান্না প্রায় হচ্ছে না বললেই চলে। হলেও নমো নমো করে। কোনটাতে নুন বেশী তো কোনোটা আলুনী। বলা কিছুই যাবে না। বাধ্য হয়ে পরশু অসীম অফিস থেকে ফেরার সময় প্রোটিন পাউডার কিনে এনে বললো- খেয়ে দেখো, যদি কাজে আসে। কোথায় মঞ্জরীর সাধ ছিল – খাবে দাবে, টিভি দেখবে, বেশ একটা সুখী সুখী নাদুস নুদুস চেহারা নিয়ে জিম করবে, আর ঘেমো ঘেমো আহ্লাদী মুখে বর কে বলবে , দেখ….কত রোগা হয়েছি। কোথায় কী। সে গুড়ে কিলো কেন, টন টন বালি। প্রোটিন পাউডার – তা সে যেমন অখাদ্য খেতে তেমনি বিটকেল গন্ধ।
তা এর ফলস্বরূপ, হোম ডেলিভারিতে সবার জন্য একটা করে বিরিয়ানির প্যাকেট আসলেও মঞ্জরীর জন্য দুটো। বিড়াল ডিঙোনো ভাতে গর্ত করে ঘি ঢালছে মঞ্জরী। রান্নায় কয়েক চামচ বেশী তেল, আর চকোলেট, আইসক্রিমের তো কথাই নেই। অসীম আর বুবুলের খুব বেশী জোটে না, জুটলেও নিজেরটা শেষ করে তাদের বাটির দিকে হাত বাড়াচ্ছে মঞ্জরী।
আজ অসীম আর বুবুল বেরিয়ে গেছে, বুবুলের বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি। অনেকদিন পর মঞ্জরী আয়নার সামনে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখছে। নাঃ, দেখতে সে বেশ ভাল! গালে একটু মাংস লাগাতে গালটাও বেশ ভরাট লাগছে। কোমরটাও খানিক ভারী। এ ভাবে চললে, খাওয়ার যা রেট, তাতে ঠাকুরের কৃপা থাকলে পুজোর আগে সে ঠিক কারভি হয়ে উঠতে পারবে। জয় মা দুগ্গা! বলে শুধু লেগে থাকা। আহ, মনের ভেতর খুশীর লাড্ডু গুলো অনেকদিন পর ফুটফাট করে ফাটছে। উঠে পড়ল মঞ্জরী, আজ একটু বুবুলের জন্য চিকেন রেজালা বানাবে। বেচারাদের এতদিন পর একটু ভালো রেঁধে খাওয়াতে ইচ্ছা হল মঞ্জরীর।