যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগে ভর্তি ঘিরে বিতর্ক। অনলাইন ব্যবস্থা এবং মেধার ভিত্তিতে ভর্তি ব্যবস্থা মানতে নারাজ কলা বিভাগের বহু শিক্ষক ও পড়ুয়াদের একাংশ। বিভ্রান্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেয়ে আবেদনকারী পড়ুয়ারা। ফলে ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবক মহলে ক্ষোভ বাড়ছে।
ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে রাজ্যের সর্বত্র অনলাইন ব্যবস্থা এবং মেধার ভিত্তিতে ভর্তি চালু করেছে রাজ্য সরকার। অথচ উল্টো পথে হাঁটছে ‘শিক্ষার উৎকর্ষ কেন্দ্র’ বলে পরিচিত যাদবপুর। সরকারি ঘোষণার পর থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষার দাবিতে যাদবপুরে শুরু হয়েছে ঘেরাও,বিক্ষোভ। নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া বয়কটের ডাক দিয়েছেন কলা বিভাগের বহু শিক্ষক। এমনকী ইংরেজির পর তুলনামূলক সাহিত্যের শিক্ষকরাও শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরাও ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। ফলে চরম বিভ্রান্ত আবেদনকারী পড়ুয়ারা।
কলা বিভাগের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের একাংশের দাবি ঘিরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। তাহলে কি দীর্ঘদিন দাপট বজায় রাখা ছাত্রনেতা এবং শিক্ষকদের একাংশ নয়া ভর্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে ভীত? তাই কি যেনতেন প্রকারে সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্রিয় তাঁরা?
যাদবপুরের ভর্তি পক্রিয়া বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, “গোটা রাজ্যে যে পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি হচ্ছে, সেটা যাদবপুরে কার্যকর করা হলে আপত্তি কীসের? আমিও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। তাতে কি আমরা জীবনে কিছু করে উঠতে পারিনি? যাদবপুরের শিক্ষক নেতাদের মন্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করছেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে বহিরাগত বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো নিয়েও তাঁরা আপত্তি তুলেছিলেন। এরও কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।“
উল্লেখ্য, যাদবপুরের কলা বিভাগে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের এসএফআইয়ের দাপট রয়েছে। বর্তমান ছাত্র সংসদও তাদের দখলে। পাশাপাশি ফ্যাস বা আইসার মতো স্বাধীন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলিও বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা দখল করেছে। আবার শিক্ষক সমিতি জুটাও সিপিএম প্রভাবিত বলে পরিচিত। সেই জন্যই অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বামমনস্ক ছাত্রছাত্রীদের সাপ্লাই লাইন সজীব রাখতেই কি শিক্ষকরা, ছাত্রনেতাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন?
তবে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জুটার সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্তর দাবি, “এটি পুরোপুরি অ্যাকাডেমিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে রাজ্য-রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।“
সূত্রের খবর, যাদবপুরে ইংরেজি বিভাগের এক অধ্যাপক প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের কথা সরকারের কাছে তুলে ধরেছিলেন। সে কারণেই এই ব্যবস্থার বদল চাইছে সরকার।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি চাপের কথা কখনওই মানতে নারাজ। এর আগে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিউট (বিধি) খতিয়ে দেখে জানিয়েছিলেন, প্রবেশিকা পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ তো বটেই, বোর্ড অব স্টাডিজেরও প্রত্যক্ষ কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। বিজ্ঞান বিভাগের সব বিষয়ে নম্বরের ভিত্তিতেই ছাত্র ভর্তি হয় যাদবপুরে। তাতে তো উৎকর্ষে কোনও খামতি দেখা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষতার নামে ঘেরাও, আন্দোলনের পিছনে কী তাহলে রয়েছে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মদত? সেই আশঙ্কাই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।